৫ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারাদেশে সভা-সমাবেশ করতে না পারা এবং দলের চেয়ারপারসনকে 'অবরুদ্ধ' রাখার প্রেক্ষিতে বিএনপির ডাকে টানা অবরোধ কর্মসূচি চলছে। বেগম খালেদা জিয়া এবং রুহুল কবীর রিজভী এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর কঠোর নজরদারির প্রেক্ষিতে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মিরা মাঠে নামতে না পারলেও চোরাগোপ্তা হামলার মাধ্যমে নাশকতার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বাস-ট্রাকে আগুন, বোমাবাজি, ভাঙচুরের মাধ্যমে সারাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে পেরেছে তারা। ফলে চরম নিরাপত্তাহীনতায় সাধারণ নাগরিকেরা।
অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত থাকলেও দূরপাল্লার বাসসহ অন্যান্য গণপরিবহনগুলোর অবস্থা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তবু সারা দেশে বিক্ষিপ্ত বোমাবাজি ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেই চলেছে। জামায়াত-শিবির ও বিএনপির নেতাকর্মিরা এই সব ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট বলে পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক সন্ত্রাসি গ্রেফতার হয়েছে, মামলাও হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
সরকারের হার্ডলাইনে যাওয়ার কারণে বিএনপি বর্তমানে কোণঠাসা অবস্থায় থাকলেও সন্ত্রাসের মাধ্যমে ভীতিকর অবস্থা তৈরি করতে মরিয়া।
টানা অবরোধের মধ্যে বিশ দলীয় জোটের মধ্যকার জামায়াতে ইসলামি বাদে আর কোন দলের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিএনপি বারবার জোটভুক্ত এবং জোটের বাইরে থাকা ইসলামি দলগুলোকে মাঠে নামাতে চাইলেও ব্যর্থ হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সদ্য সমাপ্ত বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বকে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচির আওতামুক্ত না রাখার কারণে ইসলামি দলগুলো থেকে তাদের দূরত্ব বেড়েছে। বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের সময়েও এই অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করার কোন লক্ষণ না থাকায় ক্রমে রীতিমত মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার অবস্থা ইসলামি দলগুলোর। অবশ্য বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন আদর্শগত দিক থেকে ইসলামি দলগুলো আর বিএনপির মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য না থাকার কারণে তাদেরকে খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হতে হবে না।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে ১২ জানুয়ারি বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। একইসঙ্গে 'কাঙ্ক্ষিত' ও 'যৌক্তিক পরিণতি'তে না পৌঁছা পর্যন্ত সাময়িক 'কষ্ট' স্বীকার করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে পৃথক বিবৃতি দিয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। এর আগে সকালে সরকার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ। অবরোধে অর্থনীতির সীমাহীন ক্ষতি, প্রাণহানি, মানুষের দুর্ভোগ- এসব আপাতত আমলে নিচ্ছে না বিএনপি।
এদিকে জোট ও জোটের বাইরে থাকা বিভিন্ন ইসলামি দলগুলোকে পৃথক পৃথক ইস্যুতে উস্কে দিতে চাইছে বিএনপি। এ লক্ষে আত্মগোপনে থাকা দলীয় নেতারা ভেতরে ভেতরে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। ইসলামি দলগুলোকে মাঠে নামিয়ে তারা দেখতে চাইছে সরকার তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবহার করছে সেটা। এবং দলগুলোর বিভিন্ন দাবিতে বিএনপিসহ বিশ দলীয় জোট সব ধরণের সমর্থন দিয়ে সরকারকে একঘরে করতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে। এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট নেতারা সফল হতে না পারলেও তারা আশাবাদি খুব শিগগিরই সরকারের বিরুদ্ধে ইসলামি দলগুলোকে মাঠে নামাতে সমর্থ হবেন।
আপনার মন্তব্য