নিউজ ডেস্ক

০৪ ফেব্রুয়ারি , ২০১৫ ২০:৫২

জরুরী অবস্থা জারির সম্ভাবনা নাকচ করলেন প্রধানমন্ত্রী

বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাস করছে। আর কিছু কিছু মানুষ রাজনীতিকে গালাগাল দিচ্ছে। এখানে রাজনীতির দোষ কি? বিএনপি-জামায়াত তো রাজনীতি করছে না। এরা জঙ্গিবাদী কার্যকলাপ করছে, মানুষ হত্যা করছে। সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারছে, কোনো মুসলমান কি কোনো মুসলমানকে পুড়িয়ে মারতে পারে?

এক মাসের টানা অবরোধ-হরতাল ও সহিংসতা সত্বেও দেশে জরুরী অবস্থা জারির সম্ভাবনা নাকচ করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় সংসদে তিনি জানান- জরুরি অবস্থা জারি নয়, দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের মোকাবেলা করা হবে। সংবাদ সূত্র বাসস। 

বুধবার (৪ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির চিফ হুইপ মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরীর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন- যারা সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে দেশের জনগণ তাদের সঙ্গে নেই। ফলে তারা এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারেনি যাতে জরুরি অবস্থা জারি করতে হবে।

সরকারি দলের সদস্য সানজিদা খানমের অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যমান আইনে সন্ত্রাসী ও তাদের হুকুমদাতাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে অল্পদিনের মধ্যেই এ সন্ত্রাসীরা আদালত থেকে জামিন পেয়ে যায়। জামিন পেয়ে এরা আবার দ্বিগুণ উৎসাহে ধ্বংসাত্মক কাজে নেমে পড়ে।

তিনি এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দায়িত্ববানদের প্রতি এ ধরনের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী কার্যক্রমের সঙ্গে যারা জড়িত তারা গ্রেফতার হলে, তাদের যখন আইনের হাতে সোপর্দ করা হয়, তখন তারা যেন সেখান থেকে জামিন পেয়ে আবার ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করতে না পারে, এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এখন আন্দোলনের নামে যা হচ্ছে তা অমানবিক। আন্দোলন আমরাও করেছি। কিন্তু মানুষকে পুড়িয়ে মারা- এটা কোন ধরনের রাজনীতি। এ ধরনের কার্যক্রম কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সাধারণ মানুষের কি অপরাধ, তাদেরতো কোনো অপরাধ নেই। ২০১৩ সালে নির্বাচন প্রতিহতের নামে ১৫০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত কেউ তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেকে রেহাই পায়নি।'

তিনি বলেন, 'বিএনপি-জামায়াত কোনো রাজনীতি করে না। তারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী। সাধারণ মানুষকে তারা প্রতিপক্ষ করেছে। সাধারণ মানুষকে তারা হত্যা করছে। সাধারণ মানুষ কি অপরাধ করেছে? পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারছে না। পরীক্ষার সময়সূচি দেয়ার পরই হরতাল দিয়ে পরীক্ষা বন্ধ করা হচ্ছে। এ ধরনের কার্যক্রম কখনোই বরদাশত করা যায় না।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এ ধরনের সন্ত্রাস দমনে আইনের কোনো অভাব নেই। প্রয়োজন আইনের যথাযথ প্রয়োগ। আইনকে কাজে লাগিয়ে তাদের আইনের আওতায় আনা যাবে। শুধু আইনে নয়, এদেশের জনগণকে এ ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এটাই সবচেয়ে বড় শক্তি।'

এ সময় তিনি সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সন্ত্রাস বিরোধী কমিটি গঠন করে এদের প্রতিহত করার আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, 'সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এর বিরুদ্ধে নামতে হবে। এটা বুঝতে হবে যে এটি কোনো রাজনৈতিক বিষয় নয়।'

তিনি বলেন, 'বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাস করছে। আর কিছু কিছু মানুষ রাজনীতিকে গালাগাল দিচ্ছে। এখানে রাজনীতির দোষ কি? বিএনপি-জামায়াত তো রাজনীতি করছে না। এরা জঙ্গিবাদী কার্যকলাপ করছে, মানুষ হত্যা করছে। সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারছে, কোনো মুসলমান কি কোনো মুসলমানকে পুড়িয়ে মারতে পারে? তারা কি মানুষের লাশের ওপর পা দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চান? কিন্তু তারা এ ধরনের জঘন্য কাজ করছে। এ ধরনের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।'

সরকারি দলের সদস্য আবদুর রহমানের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিএনপি-জামায়াত ৫ জানুয়ারি সমাবেশের নামে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবস্থান নিতে চেয়েছিল। তারা হেফাজত ইসলামের মতো অবস্থান নিয়ে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এ ধরনের রিপোর্ট থাকায়, সেখানে তাদের সমাবেশ করতে দেওয়া হয়নি। কারণ ৫ মে হেফাজত ইসলামের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম সম্পর্কে জাতি অবগত রয়েছে। সেদিন কোরআন শরীফ পোড়ানো, মসজিদে আগুন দেওয়া এবং গাছ কাটাসহ এমন কোনো কাজ নেই যা তারা করেনি। হেফাজতের ওই নাশকতামূলক কাজেরও নির্দেশদাতা ছিলেন বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।'

তিনি বলেন, 'বিএনপি নেত্রীর ছেলে হারানোর যদি সত্যিকার বেদনা থাকতো, তাহলে যাদের আগুনে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, যাদের আপনজন বিএনপি-জামায়াতের পেট্রোলের আগুনে পুড়ে মরছে, তাদের বেদনাও তিনি বুঝতেন।'

প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পুত্রবধূর দেওয়া 'ছেলের চেয়ে দেশ বড়' এ বিবৃতি প্রসঙ্গে বলেন, যে মা নিজের সন্তানকেই ভালবাসেন না সে দেশের মানুষের জন্য কি ভালবাসা দেখাবেন।

 

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত