স্পোর্টস ডেস্ক

১৭ ফেব্রুয়ারি , ২০১৫ ২১:৫৯

আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতবে, কিন্তু…

বিশ্বকাপের লড়াইর শুরুটা বেশ জমজমাট। তবে বাংলাদেশ কি পারবে তাদের প্রথম ম্যাচ লড়াইয়ে জমিয়ে উঠতে? তা সময়ই বলে দেবে। তবে, বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তান যে শক্ত খুঁটি নিয়েই মাঠে নামবে তা নিশ্চিত।

বিশ্বকাপের লড়াইর শুরুটা বেশ জমজমাট। তবে বাংলাদেশ কি পারবে তাদের প্রথম ম্যাচ লড়াইয়ে জমিয়ে উঠতে? তা সময়ই বলে দেবে। তবে, বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তান যে শক্ত খুঁটি নিয়েই মাঠে নামবে তা নিশ্চিত।

বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ জেতার স্বপ্নটা কিন্তু অনেক দিনের আফগান অধিনায়কের। সেই স্বপ্নকে সফল করতেই মাঠে হাজির হবে আফগানরা। তবে, বাংলাদেশের টাইগার বাহিনীও ছেড়ে দেয়ার নয়। প্রথম ম্যাচে যুদ্ধ যত কঠিনই হোক না কেন, মনোবল শক্ত রেখেই বিজয়ের উল্লাসের নেশায় আফগানদের নাস্তানুবাদ করতে চায় টাইগার বাহিনী।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচের দিকে তাকিয়ে রয়েছে বাংলার ১৬ কোটি মানুষ। মাশরাফিদের অনুপ্রেরণা জাগাতে কনসার্টেও মেতেছিল বাংলার মানুষ। তবে কি মাশরাফি,সাকিব, মুশফিক পারবে বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে? না কি, ২০১১ সালের বিশ্বকাপের ন্যায় এবারও হারিয়ে যাবে বাংলাদেশ।এমনকি ২০১৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপে আয়োজককারী দেশ হিসেবেও খেলেছিল বাংলাদেশ কিন্তু তেমন কোন জয়ের হাসি দেখাতে পারেনি টাইগাররা।
এদিকে, সাংবাদিকদের মাহামুদুল্লাহ রিয়াদ বলেছেনই, অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া- মাটিতে বোলিং, ফিল্ডিং, ব্যাটিং পজিশন এত অল্প সময়ে আয়ত্ত করা অসম্ভব, তবে নিজেদের মনোবল শক্ত করে খেললে জেতাটা অসম্ভবের কিছুই নয়।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের প্রস্তুত করতে মানুকা ওভালে কঠোর অনুশীলনে ব্যস্ত টাইগাররা। আর সেই সুযোগে বাংলাদেশের ওপেননিং ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল কোচ হাতুরেসিংহে কে এক চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেন। আর এই চ্যালেঞ্জেই তামিম ইকবাল কোচ হাথুরুসিংহে কে হারিয়ে দিয়েছেন। আফগানিস্তানের বিপরীতে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচের ভেন্যু ম্যানুকা ওভালের নেটে অনুশীলন করছিলেন বাংলাদেশের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান।
তামিম ‘সাইডআর্ম ডিভাইস’ দিয়ে করা হাথুরুসিংহের একটি ইয়র্কারে আউট হয়ে গেলে বোল্ড হওয়া তামিমকে নেট ছাড়তে বলেন কোচ। নেট ছাড়তে বলায় তামিম কোচকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন,‘আমি যদি আবার আউট হই, তাহলে আমি চলে যাব। আমি সিরিয়াস। কোচ, আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি।’ পরে কোচ তামিমকে বুঝিয়ে বললেও তামিম কথা শোনে না কোচের।
পরবর্তীতে কোচ তাকে আবার সুযোগ দেন। সুযোগ পাওয়ার পর তামিম কভার ড্রাইভ, স্ট্রেইট ড্রাইভ, অন ড্রাইভ, পুল, কাট সবধরনের শট খেলেও আউট হলেন না। হাথুরুসিংহে তাকে আউট করার জন্য যত গতিতে পারলেন বল ছুড়লেন। পরে তামিমকে ‘ভালো শট’ বলে বাহবা দেন কোচ এবং পরামর্শ দেন ম্যাচের সময় মনোযোগ ধরে রাখার জন্য।বুধবার অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় মানুকা ওভাল স্টেডিয়ামে আশার বানী ছড়াতেই পারে মাশরাফিরা। বাংলাদেশের বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ নিয়ে আফগানিস্তান কোচ অ্যান্ডি মোলস বলেন, ‘আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশ বাংলাদেশের প্রতি আমাদের পুরোপুরি শ্রদ্ধা থাকলেও আমরা তাদেরকে ভয় পাচ্ছি না।’
বাংলাদেশ এর আগে চারবার বিশ্বকাপ খেললেও আফগানিস্তান এবারই প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নামবে।প্রথম বারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে নামলেও জয়ের ব্যাপারে আফগানিস্তান কোচ বলেন, ‘জয়ের ব্যাপারে আমরা আত্মবিশ্বাসী। আমরা জিততে পারি, এ আত্মবিশ্বাস আমাদের আছে।’

এদিকে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ জেতার প্রত্যাশায় কোচ বলেন-“ ‘বিশ্বকাপে চাপ থাকে, বিশেষ করে প্রথম ম্যাচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো দলই তাদের প্রত্যাশা জানে। একটু চাপ অনুভব করলেও আশা করি,আমরা ভালো করব।’
‘এটা আমাদের প্রথম ম্যাচ। এটাতে জয় পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ভালো করার উপর নজর দিচ্ছি। আমরা যদি নিজেদের সেরাটা দিতে পারি, তাহলে আমরা লড়াই করতে পারব।’কোচ হাথুরুসিংহে মনে করেন,সাকিব-তামিমরা তাদের সেরাটা দিতে পারলেই জয় পাওয়া সম্ভব।” টিম কম্বিনেশন সম্পর্কে তিনি বলেন,‘প্রস্তুতি ম্যাচ হেরে যাওয়া কোনো সময়ই বড় কিছু নয় এবং এ নিয়ে আমার মনে কোনো সন্দেহ নেই। তবে প্রস্তুতি ম্যাচে আমরা কিছু খেলোয়াড়কে কন্ডিশনে খেলার সুযোগ দিয়েছি। আমরা খুব ভালোভাবে জানি কম্বিনেশন কি হবে।’আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের জন্য কোচের ভরসা বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানই। প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে সাকিব আল হাসানের পারফরম্যান্স হতাশাজনক হলেও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের ভরসা সাকিব। তাই কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচের আগে দলের সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের কাছে নিজের চাওয়াটা জানালেন। কোচের আশা বিশ্বকাপে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার যেন দলের মূল ভূমিকা নেন।

প্রস্তুতি ম্যাচেও অস্ট্রেলিয়া ছাড়া আর কোন গ্রুপ পর্বের প্রতিপক্ষের সাথে লড়েনি বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ শুরুর আগে চারটি ম্যাচ খেললেও কোন ম্যাচ জিততে পারেনি। এমনকি আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও হেরেছে বাংলাদেশ। যদিও আগের ম্যাচটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে জিততে না পারলেও ভালো খেলেছিল টাইগাররা।

তবে,শেষ ভালো যার, সব ভালো তার বলেও একটা কথা আছে। বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়াতে প্রথম অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে যখন ম্যাচটি জিততে গিয়েও পরাজিত হলো, তখন শেষ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জয় দিয়েই বিশ্বকাপের মূল পর্ব শুরু করবে তা নিয়ে কারো কোন সন্দেহ ছিলো না। কিন্তু সন্দেহটা যেন আরও বাড়িয়ে দিল বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত আইরিশদের কাছেই বাংলাদেশের লজ্জাজনক হার। এদিকে, বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে আফগানিস্তান। তবে, বাংলাদেশের অঘটনটা যদি আফগানিস্তানের সাথেও হয় তাহলে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ থেকে পিছু হতে তেমন কোন বেগ পেতে হবে না। কারণ, আফগানিস্তানকে ঘিরেই জত জল্পনা বাংলাদেশের। অন্যদিকে, আফগানিস্তানের ক্যাপ্টেন বাংলাদেশকে বিশ্বকাপে হারানোর কথা আগেই বলে দিয়েছিল। এখন শুধুই দেখার পালা, কি ঘটছে বিশ্বকাপে? বাংলাদেশ কি হারের আঘাত ঘুচাতে পারবে বিশ্বকাপে?১৯৭৯ সাল থেকে ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় নামা বাংলাদেশ দল ২০ বছর পর বিশ্বকাপের মাঠে খেলতে নামে। এবারের বিশ্বকাপে পঞ্চম বারের মতো অংশগ্রহণ করছে বাংলাদেশ দল। কিন্তু এ বছরে বাংলাদেশ তেমন কোন বড় দলের সাথে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেনি।এমনকি গত চার বছর ধরে বাংলাদেশ দল অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড কোন সফর করেনি।

এদিকে, গত ১২ মাসে বাংলাদেশ শুধু জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধেই ভালো পারফর্মেন্স করেছিল। ৫-০ সিরিজে বাংলাদেশ জিম্বাবুয়েকে বাংলাওয়াশ করেছিল যা বাংলাদেশের জন্য সেরা খেলাও বটে।

অন্যদিকে, গত দু বছরে বাংলাদেশ তেমন কোন সফলতা বয়ে আনতে পারেনি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৩২৬ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেও হারতে হয়েছিল। এমনকি ৬৭ রানে ৮ উইকেট ফেলে শ্রীলঙ্কার ধস নামিয়েও বাংলার টাইগাররা জিততে পারেনি।আবার ভারতের মতো দুর্দান্ত দলকে ১০৫ রানে কব্জা করলেও তাতেও জিততে ব্যর্থ হয়েছিল বাংলাদেশ। যা বাংলাদেশের জন্য ক্রিকেটের কালো অধ্যায়ও বটে।
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ রেকর্ডে ফিরে গেলে দেখা যায়, ২০০৭ সালের বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে ভারতকে হারিয়ে রেকর্ড করেছিল। সেই বিশ্বকাপে সুপার এইট পর্বেও উঠেছিল বাংলাদেশ। এমনকি সুপার এইটে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্তিশালী দেশকেও পরাস্ত করেছিল। একমাত্র এই বিশ্বকাপেই বাংলাদেশ দল সুপার এইট পর্বে খেলেছিল। এছাড়া ১৯৯৯, ২০০৩ ও ২০১১ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল।

তবে বাংলাদেশ এখনও আশাবাদী। বিশ্বকাপে চ্যালেঞ্জিং নিয়েই লড়বে টাইগার দল। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে জেগে উঠা টাইগাররা আবারও জ্বলে উঠবে বিশ্বকাপের মানুকা ওভাল মাঠে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত