১১ মার্চ, ২০১৫ ০৩:৩০
এখনও নিশ্চিত হয়নি কোয়ার্টার ফাইনালের লাইনআপ কিন্তু ইতোমধ্যেই বাংলাদেশকে সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ ভেবে ছক আঁকতে শুরু করেছে ভারতীয় দল। সতর্কতার সঙ্গে বিশ্লেষণ করতে শুরু করেছে বাংলাদেশের সব খেলোয়াড়দের। সাবেক ভারতীয় খেলোয়াড়েরা বাংলাদেশকে ভয়ঙ্কর ও শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করে মাঠে নামার পরামর্শ দিয়েছেন ধোনির দলকে।
ইতিহাস বলে বাংলাদেশের কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেওয়ার নজির আছে ভারতীয়দের। ২০০৭ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হেরেছিল প্রথম পর্বে এবং সে হারের মাধ্যমে তাদের বিদায় নিশ্চিত হয়েছিল। সে বার বাংলাদেশ দ্বিতীয় পর্বে ওঠেছিল। আর এবার ইংল্যান্ডকে প্রথম পর্ব থেকে বিদায় করে দিয়েছে বাংলাদেশ। স্বভাবত ভারতীয়দের মনে উঁকি মারছে সে স্মৃতি।
বিশ্বকাপের সহ-স্বাগতিক এবং সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় নিউজিল্যান্ডকে অনেকেই এগিয়ে রাখছেন। ভারতীয়রা পরিকল্পনা করতে সে ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা না করে মাশরাফি মুর্তজাদের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ ভেবেই এগিয়ে নিচ্ছে তাদের পরিকল্পনা। টাইগাররা ৪ নম্বরে থাকলে কোয়ার্টারে মুখোমুখি হবে এ দুই দল। আর এ বাংলাদেশকে নিয়ে দুর্বার ভারতও সাবধানি বাণী আওড়াচ্ছে।
'নকআউট' মানেই তো প্রত্যেকটি ম্যাচ ফাইনাল। সেখানে একটি হার মানে আসর শেষ, এবার বাক্স -পেটরা গুছিয়ে বাড়ি ফেরা। তাই টানা পাঁচ জয় পাওয়া ভারতও এখন শঙ্কায়। বাংলাদেশ নিজেদের দিনে কী করতে পারে, তার প্রমাণ আরও একবার এলো। যে প্রমাণ মনে ধাক্কা দিয়েছে ভারতের সাবেক ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কারের।
ধোনিদের জন্য সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বর্তমান ক্রিকেট বিশ্লেষকের বিশ্লেষণ, 'ভারত যদি মনে করে টানা জয়ের সাফল্য দিয়ে বাংলাদেশকে উড়িয়ে দেবে, তবে ভুল। ধোনিদের অবশ্যই মনে রাখা উচিত, কোয়ার্টার ফাইনাল কোনো মসৃণ পথ নয়। সেখানে যদি বাংলাদেশও প্রতিপক্ষ হয়, তবে তারা প্রবল বিক্রমে ঝাঁপাবে।' ইংল্যান্ডকে হারানোর পর মাহমুদউল্লাহও বললেন, 'ভারতকেও হারানো সম্ভব।' এ উজ্জীবনী শক্তি যদি কোয়ার্টারে এসে যায়, তবে ভারতের শিরোপা ধরে রাখার স্বপ্ন ধুলোয় মিশে যাবে।
অস্ট্রেলিয়ার পাশাপাশি ক্রিকেটের লড়াইয়ে ইংল্যান্ড ভারতের অন্যতম শত্রু। ভারতের জন্য আরও বড় শত্রু আছে পাকিস্তান। কিন্তু ওই দলের সঙ্গে লড়াইটা তো ক্রিকেটের চেয়েও বেশি কিছুর সমন্বয়। সেদিক থেকে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের সঙ্গে লড়াই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ ক্রিকেটে। ওই ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় করে দেয়ায় বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছে ভারত।
সোমবার বাংলাদেশের মতো উন্মাতাল না হলেও ভারতীয় মিডিয়ার সব আলোচনাজুড়েই ছিল বাংলাদেশ। স্টার স্পোর্টসের উপস্থাপক বারবারই বলে যাচ্ছিলেন, 'আজ কা শাম, বাংলাদেশকা নাম।' স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের দিনে আকাশ চোপড়ার আক্ষেপ ছিল- 'বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কোনো সেঞ্চুরিয়ান নেই।' তার আক্ষেপের জবাব দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। তাই সোমবার রাতে গ্রেট কপিল দেবের সঙ্গে বাংলাদেশের জন্য হাততালি দিলেন আকাশও।
বাংলাদেশ বন্দনায় একটি রাত কাটানোর পর থেকেই চিন্তায় ঘুম নেই ভারতের। কোয়ার্টারে যদি এ উজ্জীবিত ও আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশের মুখোমুখিই হতে হয়, তবে কীভাবে সামলানো যায় সে বিশ্লেষণে মেতেছেন ভারতীয় ক্রিকেট বিশ্লেষকরা।
কোয়ার্টারে সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ বলেই ইংল্যান্ড-বাংলাদেশ ম্যাচটি বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে ভারতীয় দল- তাদের মিডিয়ার দাবি এমনই। তারা মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকের প্রত্যেকটি শটের নোট নিয়েছে। কোথায় ইংলিশ বোলাররা ভুল করেছেন, তা টুকে নিয়েছে অনুশীলনে আলোচনার জন্য। একইভাবে মাশরাফি-রুবেল-তাসকিনদের বোলিং নিয়েও তারা বিস্তর কাজ করবে। ভারতীয়দের ভয় অতীতের মতো এ মাশরাফি-মুশফিকরাই তাদের ধসিয়ে দিতে যথেষ্ট।
ভারতীয় লিজেন্ড গাভাস্কার তো বলেই দিলেন, ৫ ফুট ৩ ইঞ্চির মুশফিকই ভারতের সবচেয়ে বড় ভয়, '৫ ফুট আসলে কোনো বিষয় নয়। ছোট প্যাকেজ থেকেই কিন্তু মন ভরিয়ে দেয়া উপহার বের হয়' এ মুশফিক ২০০৭ সালে প্রায় একই ভারতকে হারিয়ে দেয়। অবশ্য ওই ম্যাচে আরও পারফরমার ছিল, কিন্তু কাজের কাজটা করেছে মুশফিকই। সেই ছেলেটা এখন অনেক পরিণত। এবারও সে ধারাবাহিক ভালো খেলছে; চার ম্যাচে তিনটি হাফ সেঞ্চুরি যার প্রমাণ। উচ্চতায় সে হয়তো ছোট, কিন্তু কাজের কাজ করে দেয়ার মতো সব ক্ষমতা তার আছে। তাই সাকিব-তামিম-মাশরাফি; এমনকি আজকের (সোমবার) মাহমুদউল্লাহ ছাড়া মুশফিককে নিয়ে ভারতের আলাদা করে ভাবা উচিত।'
ভিভিএস লক্ষণ বাংলাদেশকে নিয়ে কথা বললেন এভাবে- আমার খেলা দেখে মনে হচ্ছে না ইংল্যান্ড কোন বড় দল, বরং বাংলাদেশের খেলা দেখেই মনে হচ্ছে বাংলাদেশ অনেক বড় দল।'
বাংলাদেশের চাপ সহ্য করার অসীম শক্তিকে প্রশংসায় ভাসান বর্ষীয়ান এই ক্রিকেটার।'বাংলাদেশ চাপের ভিতরেও কতো ভালো খেলতে পারে সেটা তারা দেখিয়ে দিল, তাদেরকে ছোট করে দেখার কিছুই নেই। বরং তারা যে আস্তে আস্তে অন্যতম পরাশক্তি হয়ে উঠছে এটা সত্যি ই প্রশংসার দাবিদার। কোয়ার্টার ফাইনালে যদি ভারত-বাংলাদেশ মুখোমুখি হয় তাহলে এই দল খুবই ভোগাবে!
আপনার মন্তব্য