নিউজ ডেস্ক

২৪ ডিসেম্বর, ২০১৪ ১৩:৪৬

মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সৈয়দ কায়সারের ফাঁসির আদেশ, শহরে আনন্দ মিছিল

১৬টি অভিযোগের মধ্যে ১৪টি প্রমাণিত

মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সৈয়দ কায়সারের ফাঁসির আদেশ, শহরে আনন্দ মিছিল

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা ও এরশাদ আমলের প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোঃ কায়সারের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হচ্ছেন বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম। কায়সারকে গণহত্যার একটি, হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের ১৩টি এবং ধর্ষণের দুটিসহ মোট ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে  ৩, ৫, ৬, ৮, ১২ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে কায়সারকে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া ১১ নম্বর অভিযোগে ৫ বছর, ৭ নম্বর অভিযোগ ১০ বছর কারাদণ্ড এবং ১, ৯, ১৩ ও ১৪ নম্বর অভিযোগে দেয়া হয় আমৃত্যু কারাদণ্ড। তবে ৪ ও ১৫ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। উল্লেখ্য, ১৯৬২ সালে সৈয়দ কায়সারের বাবা সৈয়দ সঈদউদ্দিন সিলেট-৭ আসন থেকে কনভেনশন মুসলিম লীগের এমএলএ নির্বাচিত হন। অপরদিকে, সৈয়দ কায়সার ১৯৭০ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করে পরাজিত হন।

অভিযোগ রয়েছে, ১৯৭১ সালে দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ৫০০ থেকে ৭০০ ‘স্বাধীনতাবিরোধীকে’ নিয়ে ‘কায়সার বাহিনী’ গঠন করেন মুসলিম লীগ নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার। তিনি ছিলেন ওই বাহিনীর প্রধান। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর ১৯৭৮ সালে আবারও রাজনীতিতে সক্রিয় হন কায়সার। ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১৭ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়ে তিনি জয়লাভ করেন। প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময়ে তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন এবং হবিগঞ্জ বিএনপির সভাপতি হন। এরপর এরশাদের সময়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে ১৯৮৮ সালে হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য হন কায়সার।

গণজাগরণ মঞ্চের মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ মিছিল:  কুখ্যাত রাজাকার কায়সার বাহিনীর প্রধান সৈয়দ মোঃ কায়সারের ফাসির আদেশে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে হবিগঞ্জ গণজাগরণ মঞ্চ। রায় ঘোষণার পরপরই গণজাগরণ মঞ্চের নেতাকর্মীরা এম সাইফুর রহমান টাউন হলের সামনে সমবেত হতে থাকে। সেখানে নেতাকর্মীরা একে অপরকে মিষ্টিমুখ করান। মিষ্টি বিতরণ শেষে সাম্প্রদায়িক জামায়াত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় অন্যান্যদের মাঝে অংশ গ্রহণ করেন জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক কমরেড পীযুষ চক্রবর্তী, জেলা যুবলীগ সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, বাসদ নেতা এডভোকেট কামরুল ইসলাম, হুমায়ুন খান, জাসদ ছাত্রলীগ নেতা সারোয়ার জাহান লিটন, ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি মাহমুদা খাঁ, সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান, সামরিনা নওশিন দিনা, রাহুল দাশ, মাসুম আহমেদ, রায়হান আহমেদ, জসিম উদ্দিন ও শাওন প্রমুখ।



জেলা ছাত্রলীগের আনন্দ মিছিল ও পথ সভা :  মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত রাজাকার সৈয়দ কায়সারের ফাঁসির রায় দেয়ায় হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে আনন্দ মিছিল ও পথ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পথ সভায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ডাঃ ইশতিয়াক রাজ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মুকিদুল ইসলাম মুকিদের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন, চেম্বার প্রেসিডেন্ট ও পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাচ্ছিরুল ইসলাম। জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান, কায়েছ চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান সানি, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুর রহমান মাহি, বৃন্দাবন কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আফরাজ আহমেদ আফরোজসহ সাবেক ও বর্তমান জেলা ছাত্রলীগ, কলেজ ছাত্রলীগ, পৌর ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ। এসময় বক্তারা রাজাকার সৈয়দ কায়সারের মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির রায় দেয়া সন্তোষ প্রকাশ করেন। এবং সকল রাজাকারের ফাঁিসর রায় কর্যকরের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।



আপনার মন্তব্য

আলোচিত