নিউজ ডেস্ক

০৫ জানুয়ারি, ২০১৫ ১৯:১৯

"২০১৪ সাল হল বাংলাদেশের জন্য একটি স্মরনীয় বছর" -প্রধানমন্ত্রী

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা অসুস্থ রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। যে রাজনীতি দেশের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য সেই রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাই।”

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ও বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । বিএনপি জামায়াতের সহিংসতার কথা উল্লেখ্যে করে , গত বছর ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যারা নিহত, আহত হয়েছেন তাদের কথা স্মরণ করেন তিনি ।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষনে উল্লেখ্য করেন;- '২০১৪ সাল হল বাংলাদেশের জন্য একটি স্মরনীয় বছর'

এই বছরে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা এড়িয়ে স্বাভাবিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসার মধ্য দিয়ে আত্মর্জাতিক অঙ্গনে আরও গুরুত্বপূর্ন হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ । সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক সাফল্য এসেছে এই সময়ে ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাশকতার পথ পরিহার করে বিএনপি নেত্রীকে খালেদা জিয়াকে শান্তির পথে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।


সোমবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নাশকতার পথ পরিহার করে শান্তির পথে আসুন। দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য কী কী করতে চান তা মানুষকে জানান। নিজের দলকে গড়ে তুলুন। তাহলেই হয়ত ভবিষ্যতে সম্ভাবনা থাকবে।

“যে পথে আপনি চলছেন তা জনগণের কল্যাণ বয়ে আনবে না। বরং মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা আরও হারাবেন। মানুষ নিরাপত্তা চায়, শান্তি চায়, উন্নতি চায়।”

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা অসুস্থ রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। যে রাজনীতি দেশের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য সেই রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাই।”

সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় শুরু হওয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ বেতার ও টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় দেশ যখন উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন আবারও অস্থিতিশীলতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যাকারী, রাজাকার-আলবদরদের বিচারের কাজ এগিয়ে চলছে। রায় কার্যকর করা হয়েছে।। ইনশাআল্লাহ আমরা সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন করব।

“এই বিচার বানচাল করতে, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে অন্ধকারের অপশক্তি যারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না, জনগণের মঙ্গল চায় না তারা আবারও ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তারের চেষ্টা করছে ।”

 গত নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেয়াটা রাজনৈতিক ভূল ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিএনপির নির্বাচনে অংশ না নেওয়াটা ছিল একটি রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত। তাদের এই রাজনৈতিক ভুলের খেসারত কেন জনগণকে দিতে হবে? বিএনপি নেত্রীকে আমি আহবান জানাচ্ছি- নাশকতা, মানুষ হত্যা, বোমা-গ্রেনেড হামলা, অগ্নিসংযোগ, জানমালের ক্ষতি করা বন্ধ করুন।

“আপনার ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে আজ আপনি ও আপনার দল সংসদে নেই। আপনি কাকে দোষ দেবেন? আপনার নিজেকেই দোষ দিতে হবে।”

তিনি বলেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল ও যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে বিএনপি-জামাত জোট সারাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তারা শত শত গাড়িতে আগুন দিয়েছে এবং ভাংচুর করেছে হাজার হাজার গাড়ি।

“ মহাসড়কসহ গ্রামের রাস্তার দু’পাশের হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলেছে। পুলিশ-বিজিবি-আনসার-সেনাবাহিনীসহ আইন-শৃক্সখলা বাহিনীর ২০ জন সদস্যকে হত্যা করেছে।  তাদের সহিংস হামলা, পেট্রোল বোমা, অগ্নিসংযোগ ও বোমা হামলায়  নিহত হয়েছে শত শত নিরীহ মানুষ।

“সরকারি অফিস, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ফুটপাতের দোকান এমনকি নিরীহ পশুও তাদের জিঘাংসার হাত থেকে রেহাই পায়নি। রেহাই পায়নি মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম-এর সামনে হাজার হাজার পবিত্র কোরান শরীফ পুড়িয়ে দিয়েছে।”

তিনি বলেন, “ট্রেনের লাইন উপড়ে ফেলে এবং ফিসপ্লেট খুলে শতশত বগি এবং রেলইঞ্জিন ধ্বংস করেছে।  নির্বাচনের দিন ৫৮২টি স্কুলে আগুন দিয়েছে। প্রিসাইডিং অফিসারসহ ২৬ জনকে হত্যা করেছে। নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু এবং আওয়ামী লীগ সর্মথকদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে, আগুন দিয়েছে।”

এসময় সংলাপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “নির্বাচনের আগে আমরা সংলাপে বসার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। সংবিধানের আওতায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা সব ধরণের ছাড় দিতে চেয়েছিলাম। নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় মন্ত্রীসভা গঠনের জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম।

“বাংলাদেশের সংবিধানে অনির্বাচিত সরকারের কোন ব্যবস্থা নেই। আমাদের শুধু একটাই দাবী ছিল, সংবিধানের মধ্য থেকে আমরা নির্বাচন করতে চাই। সেখানে যত ধরণের ছাড় দেওয়া সম্ভব, তা দিতে আমরা প্রস্তুত ছিলাম।”

কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট অরাজকতা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বিএনপি-জামাত জোট চেয়েছিল দেশে একটা অরাজক এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে। অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে পিছনের দরজা দিয়ে তারা ক্ষমতায় যেতে চেয়েছিল। কিন্তু দেশের মানুষ তাদের সেই ষড়যন্ত্রের পাতানো ফাঁদে পা দেননি।”


আপনার মন্তব্য

আলোচিত