ফকির ইলিয়াস

১৮ জানুয়ারি, ২০১৫ ০১:৩১

দেউলিয়াপনার জাতীয়তাবাদী চেহারা

‘ভারত নিয়ে নিল’ এমন একটা হুজুগ ও জুজুর ভয় তারা সবসময়ই দেখায় বাংলাদেশের মানুষকে। এখন অমিত শাহ হঠাৎ তাদের এত পেয়ারা হয়ে উঠলেন কেন?

ফকির ইলিয়াস

এমন মিথ্যে কাণ্ডগুলো করার কি কোনো দরকার ছিল? বিদেশের সার্টিফিকেট নিয়ে কি রাজনীতি করা যায়? এমন অনেক প্রশ্ন। শেষ পর্যন্ত বিএনপি তাদের দেউলিয়াপনার জাতীয়তাবাদী চেহারা দেখিয়েছে। তারা কাজে প্রমাণ করেছে, যেভাবে মিথ্যা বেসাতির ওপর দলটি গড়ে উঠেছিল, এখনো তারা সেই পর্যায়েই আছে। বরং আরো নাজুক হয়েছে তাদের দলভিত্তি। খুবই অবাক করা বিষয়, বিএনপি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এমন কেউ কেউকে দলের সম্মানজনক পদ দিয়েছে, যারা বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আসামি। এদের একজন জাহিদ এফ সর্দার। নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ঠিকানা ও বার্তা সংস্থা এনা’র অনুসন্ধানে যে তথ্য বেরিয়ে এসেছে তা ভয়াবহ।

ব্যাংকের সঙ্গে পৃথক ২৭টি প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তারের পর দোষ স্বীকার করেছেন এই জাহিদ এফ সর্দার। প্রতারণার এসব ঘটনা ঘটেছে ফ্লোরিডা এবং আরিজোনায়। এই সর্দার দোষ স্বীকারের সবগুলো মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন ফ্লোরিডার মিডল ডিস্ট্রিক্টে অবস্থিত ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে। ২০০৯ সালের ১০ নভেম্বর এ আপিল মামলার রায়ে ৩ সদস্যের সার্কিট জজ (কারনেস, মারকাস এবং প্রিয়র) স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তাকে প্রতারণার জন্য যে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে তা যথার্থ ছিল। পুরো নাম সর্দার জাহিদ ফারুক। আরিজোনায় ব্যাংকের সঙ্গে প্রতারণার সময় তিনি কখনো সর্দার জাহিদ ফারুক, কখনো সর্দার ফারুক, কখনো এস ফারুক, কখনো এফ ফারুক আবার কখনো সর্দার ফারুক এবং ফারুক সর্দার নাম ধারণ করেছেন বলে কোর্টের নথিতে দেখা গেছে। এই সর্দার জাহিদ ফারুক বাস করতেন আরিজোনার ফিনিক্স সিটিতে। ফ্লোরিডায় তার আবাস হচ্ছে ওরল্যান্ডোতে। কখনো কখনো মায়ামি এবং জ্যাকসনভিলের ঠিকানাও ব্যবহার করেছেন। মামলার নথিতে তার জন্ম তারিখও দুটি। একটি হচ্ছে ১৯৭৬ সালের ১২ মার্চ। অপরটিতে ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ। মামলার নথি অনুযায়ী, প্রতারণার ঘটনায় সর্বপ্রথম তিনি গ্রেপ্তার হন ১৯৯৮ সালের ৪ জুন। ফ্লোরিডার আল্টামন্টে স্প্রিং পুলিশ ডিপার্টমেন্ট তাকে গ্রেপ্তার করেছিল। ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসেও তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তার কয়েদি নম্বর ছিল এ০০৮৬৮২১। এই লোকটি রীতিমতো মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে আরো বড় একটি অপরাধ করেছেন। যার জন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে মার্কিনি প্রশাসন।

ভাবতে অবাক লাগে ২০১৩ সালের নভেম্বরে বিএনপির বিশেষ দূত ও উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল এই জাহিদ এফ সর্দারকে। দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল দলের পক্ষে বিদেশি ক‚টনীতিক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ ও লবিং করার। তারই অংশ হিসেবে দলের হয়ে কংগ্রেসম্যানদের নামে ভুয়া বিবৃতি ঢাকায় পাঠিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছেন এই জাহিদ এফ সর্দার। ভুয়া বিবৃতি তৈরি ও স্বাক্ষর জালিয়াতির তথ্য-প্রমাণে লেটারহেডে জাহিদ বিবৃতিটি তৈরি করে ঢাকায় পাঠিয়েছেন সেটির সঙ্গে পরে ওই বিবৃতির কথা অস্বীকার করে যুক্তরাষ্ট্রের কমিটি ফর ফরেন অ্যাফেয়ার্স যে লেটারহেডে বক্তব্য পাঠিয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন বলে উঠে এসেছে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ডটকম-এর অনুসন্ধানে। ওয়ান হান্ড্রেড থার্টিনথ কংগ্রেস নামে যে লেটারহেডটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি নিঃসন্দেহে পুরনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ। এই কংগ্রেসের মেয়াদ শুরু হয় ২০১৩ সালের ৩ জানুয়ারি যা শেষ হয় ২০১৫ সালের ৩ জানুয়ারি। এ কথা স্পষ্ট করেই বলা যায় যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যানরা কোনোভাবেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে লেটারহেডে এই বিবৃতি পাঠাবেন না। গত ৬ জানুয়ারি ২০১৫ ছিল নবনির্বাচিত ১১৪তম কংগ্রেসের অভিষেক। অভিষেকের পর কংগ্রেস সদস্যরা ১১৩তম কংগ্রেসের লেটারহেডে স্বাক্ষর করবেন না তাও নিশ্চিত করে বলা যায়।

জাহিদ এফ সর্দার সাদি যে প্যাডে তার নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে বিবৃতি লিখেছেন পাঁচ কংগ্রেসম্যান ও এক কংগ্রেস ওম্যানের স্বাক্ষর কিন্তু সেই প্যাডে ছিল না। স্বাক্ষর সংবলিত অংশটি গ্রেফ সাদা কাগজের। আর তার ওপরে শুধু এটুকুই লেখা ‘জানুয়ারি ০৭, ২০১৫ পেজ টু’। কংগ্রেসের সদস্য এলিয়ট এল এঞ্জেল, এডওয়ার্ড আর রয়েস, স্টিভ চ্যাবট, জোসেফ ক্রাউলি, জর্জ হোল্ডিং ও গ্রেস মেং’র নাম ও স্বাক্ষর রয়েছে তাতে। প্রশ্ন হচ্ছে এই স্বাক্ষর তারা কিভাবে দিলেন। আর একটি সাদা পাতায় কেনই স্বাক্ষর দিলেন। আর এদের সবাইকে একসঙ্গে কোথায় পাওয়া গেল। এদের মধ্যে ক্রাউলি, মেং ও এলিয়ট নিউইয়র্কের, রয়েস ক্যালিফোর্নিয়ার, চ্যাবট ওহাইওর, হোল্ডিং নর্থ ক্যারোলিনার। আর জাহিদ এফ সর্দারের বাস ফ্লোরিডায়। ক‚টনৈতিক অভিজ্ঞজনরা মনে করছেন, গ্রেফ জালিয়াতি করেই অনলাইনে পাওয়া ইলেক্ট্রনিক স্বাক্ষর নিয়ে, ফটোশপে কাজ করে এই বিবৃতি তৈরি করা হয়েছে।

কে এই জাহিদ এফ সর্দার সাদি? ফেসবুকে তার একটি নিজস্ব পেজ রয়েছে তাতে উল্লেখ রয়েছে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির বিশেষ উপদেষ্টা ও বিদেশ দূত। এ ছাড়া তিনি ফ্লোরিডার ওরল্যান্ডোতে কোয়ালিটি গ্রুপ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট ও সিইও। এটা নিশ্চিত বিএনপির গঠনতন্ত্র মতে, দলের কোনো উপদেষ্টার পদ নেই। তবে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদ রয়েছে। কিন্তু জাহিদ এফ সর্দার সাদি নিয়োগ পেয়েছেন দলের উপদেষ্টা হিসেবে। সে নিয়োগ দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর তার স্বাক্ষরিত নিয়োগপত্রটির কপি অনুয়ায়ী এতে ফখরুল স্পষ্ট করে লিখেছিলেন, দলের চেয়ারপারসনের নির্দেশেই জাহিদ এফ সর্দারকে বিএনপির উপদেষ্টা ও বিদেশ দূত হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলো। তিনি এও লিখেছিলেন, জাহিদ এফ সর্দারের কাজ হবে বিদেশি ক‚টনীতিক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ ও লবিং করা। এ কাজে জাহিদ সর্দারের সাফল্যও কামনা করেছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।

আরেকটি ঘটনা বিএনপিকে ফেলেছে নাজুক পরিস্থিতিতে। বিজেপির প্রধান অমিত শাহ ফোন করেছিলেন, এই মিথ্যা কথা বলে লাইমলাইটে আসতে চেয়েছে দলটি। প্রথম কথাটি হলো, একটি দলপ্রধান আরেকটি রাজনৈতিক দলপ্রধানের খোঁজখবর নিতেই পারেন। আমরা যখন প্রথম খবরটি শুনি, তখন খুশিই হয়েছিলাম। পরে জানা গেল সবই ভুয়া। এর কারণ কি?

আমরা সবসময় দেখি, বিএনপি-জামায়াতিরা ভারত বিদ্বেষী কথা বলে। ‘ভারত নিয়ে নিল’ এমন একটা হুজুগ ও জুজুর ভয় তারা সবসময়ই দেখায় বাংলাদেশের মানুষকে। এখন অমিত শাহ হঠাৎ তাদের এত পেয়ারা হয়ে উঠলেন কেন? যা কিনা মিথ্যা বলে ভারতের একটি রাজনৈতিক দলপ্রধানের নাম বিক্রি করতে হবে! একটু পেছনে ফিরে দেখা যাক। খালেদা জিয়া রাষ্ট্রীয়ভাবে ভারত সফরে গিয়েছিলেন ২০০৬ সালে। বেগম খালেদা জিয়া কী এনেছিলেন সে সময়ে?

২০০৬ সালের ২০-২২ মার্চ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষ সময়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, খালেদা জিয়া ভারত সফর করেন। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত সে সফর নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছিল দুদেশেই। তখন দুদেশের মধ্যে দুটি গতানুগতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এগুলো হচ্ছে মাদক পাচার বা চোরাচালান রোধে সহযোগিতা চুক্তি এবং বাণিজ্য উন্নয়ন চুক্তি। বাংলাদেশের জনগণ আশা করেছিল, গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা ও তিস্তা চুক্তিসহ ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ, বাণিজ্য ঘাটতি ও তিন বিঘা করিডোরসহ অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর সুরাহা না হলেও আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। অথচ সে সময় এ ইস্যুগুলো বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উত্থাপনই করা হয়নি। খোদ সরকারের কাছে বিষয়গুলো উপেক্ষিত থাকায় ওই সফরের যৌথ বিবৃতিতেও দুদেশের মধ্যকার এক নম্বর সমস্যা অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন নিয়ে একটি শব্দও স্থান পায়নি। এমনকি ওই সফরে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী পানিমন্ত্রী বা কোনো পানি বিশেষজ্ঞও ছিলেন না। আরো বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, খালেদা জিয়ার ভারত সফরের সময় সীমান্ত সমস্যা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছিল কিনা যৌথ বিবৃতিতে তারও উল্লেখ ছিল না। অথচ প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু সীমান্ত সমস্যা। ওই সফরের আগে তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব হেমায়েত উদ্দিন কিন্তু বেশ ঘটা করেই সংবাদ সম্মেলনে এসব ব্যাপারে আলোচনা হবে বলেই জানিয়েছিলেন। পরবর্তীতেও হেমায়েত উদ্দিন ওই সফরকে ফলপ্রসূ বা সম্পর্কের টার্নিং পয়েন্ট বলে গেছেন। তবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নে ওই সফর এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে এ কথা বলতে পারেননি। উপরন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কোনো সংবাদ সম্মেলনে সফরের প্রাপ্তির কথা জানাননি। স্বভাবতই ওই সফরের সময় শীর্ষ বৈঠকের পরদিন সংবাদপত্রগুলোর শিরোনাম ছিল ‘নিরাপত্তা বাণিজ্যসহ সব বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার’, ‘শুভেচ্ছাতেই সীমাবদ্ধ সফর’, ‘বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য চুক্তি সই : খালেদা-মনমোহন বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে মতৈক্য’, ‘বাংলাদেশের প্রাপ্তি শূন্য’ ইত্যাদি।

২০১০ সালে ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময়ে যে চুক্তিগুলো হয় তার খতিয়ান একটু দেখা দরকার। শেখ হাসিনার ওই সফরে সন্ত্রাস দমনে তিন চুক্তি এবং বিদ্যুৎ আমদানি ও সাংস্কৃতিক বিনিময় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল। আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছিল দ্বিপক্ষীয় সব ইস্যু। ভারতের পক্ষ থেকে আশ্বাস মিলেছিল অর্থনৈতিক ও সমস্যা সমাধানে সহযোগিতার।

প্রধান চুক্তি তিনটি ছিল- ১. অপরাধ দমনে পারস্পরিক আইনগত সহযোগিতা চুক্তি ২. সাজাপ্রাপ্ত আসামি হস্তান্তর চুক্তি এবং ৩. আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস দমন ও মাদক পাচার প্রতিরোধ চুক্তি। এ ছাড়া বিদ্যুৎ আমদানি ও সাংস্কৃতিক বিনিময় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এ সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে ভবিষ্যতে ভারত থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে। এ ছাড়াও ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে নদী খনন, রেল ও সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে ১০০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তার ঘোষণা দেয়া হয়। কোনো একক দেশকে ভারতের এই বিপুল আর্থিক সাহায্য দেয়ার ঘটনা এটাই ছিল প্রথম।
তারপরও বিএনপি-জামায়াত বলেছিল, শেখ হাসিনা দেশ বিক্রি করে এসেছেন। ভারতের বাজারে বাংলাদেশের আরো ৪৭টি পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার করার অনুমতি দিয়েছিল এবং নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য স¤প্রসারণে ট্রানজিট দেবে বলেছিল ভারত। ওই সফরের সময় টিপাইমুখ প্রকল্প ও তিস্তা নদীসহ বিভিন্ন অমীমাংসিত ইস্যু সমাধানে ফলপ্রসূ আলোচনা ও আশ্বাসও মিলেছে।

ওই বৈঠকে টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হলে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর কিছু করবে না ভারত। ড. মনমোহন সিং আরো আশ্বাস দেন, বাংলাদেশ থেকে অধিকসংখ্যক পণ্য ভারতে প্রবেশাধিকার দেয়া হবে। শীর্ষ বৈঠকে ঐকমত্য হয়েছিল, সীমান্ত ব্যবস্থাপনার বিষয়ে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপকে সক্রিয় করা হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর শেষে গত ১২ জানুয়ারি ২০১০ প্রদত্ত বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ঘোষণায় উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে সহযোগিতার অঙ্গীকার করা হয়। আমরা ভুলে যাইনি, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন গতি লাভ করে। ক্ষমতায় এসেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেন এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী দেব গৌড়ার সঙ্গে আলোচনায় বসেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে চুক্তি সম্পাদিত হয়।

অন্যদিকে বাংলাদেশের মৌলবাদী-ডানপন্থী দলগুলো হরহামেশাই ‘ইনডিয়া’র বিরুদ্ধে বিষোদগার করে গেছে। এখনো করছে। এমন কি ভারতীয় নেতাদের নাম বিক্রি করেও প্রকাশ করছে নিজেদের দেউলিয়াপনা। বিএনপি-জামায়াত যে ক্ষমতায় যাওয়া ও যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাবার জন্য মরিয়া তার আরেকটি প্রমাণ হলো বিশ্ব ইজতেমার সময়ও দেশে অবরোধ বহাল রাখা। আন্দোলন আওয়ামী লীগও করেছে। কিন্তু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে হীন স্বার্থের রাজনীতি আওয়ামী লীগ করেনি। বিশ্ব ইজতেমাকে ‘পিকনিক’ বলেছে মৌলবাদী দালালরা আগেই। এগুলো মূলত বিএনপির রাজনীতিতে পেরেক ঠুকেছে।


ফকির ইলিয়াস: কবি ও কলাম লেখক



আপনার মন্তব্য

আলোচিত