নিউজ ডেস্ক

১৯ জানুয়ারি, ২০১৫ ১১:১৫

লেখালেখিতে শর্টকাট বলে কোন রাস্তা নাই- মোহাম্মদ হোসাইন

একুশে গ্রন্থমেলার লেখক-পাঠকের অপূর্ব মিলনমেলা। আমরা সিলেটটুডে২৪.কমের পক্ষ থেকে মুখোমুখি হয়েছি লেখক-প্রকাশকদের সাথে। এবারের পর্বে কথা বলছেন কবি মোহাম্মদ হোসাইন

কবি মোহাম্মদ হোসাইন

মোহাম্মদ হোসাইন কবি। স্থানিয়, জাতীয় পত্র-পত্রিকা, ছোট কাগজে লেখালেখি করে ইতোমধ্যে কাব্যবোদ্ধা মহলের কাছে নিজেকে স্বতন্ত্র এক উচ্চতায় আসীন করতে পেরেছেন। 

জন্ম সুনামগঞ্জ। পেশায় শিক্ষক। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা নয়। নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করেন। তাঁর কথা- ব্যক্তি পরিচয় প্রকাশের কী দরকার যদি না কবিতা কবিতা হয়ে ওঠে। আমার কবিতা আমার হয়ে কথা বলবে- আজ না হোক কাল, তা না হলে অন্য যে কোন দিন। সজ্জ্বন এ কবি প্রচলিত গোষ্ঠীবদ্ধতার বাইরের এক আলাদা মানুষ। 

সিলেটটুডে২৪’র সাথে তাঁর নিজের লেখালেখি, বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয় এবং বইমেলা নিয়ে কথা বলেছেন খোলাখুলিভাবে। বিস্তারিত পাঠকদের উদ্দেশে:

সিলেটটুডে২৪: অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫-তে আপনার কী বই আসছে ?
মোহাম্মদ হোসাইন: প্রথমেই সিলেটটুডে২৪.কম কে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন জানাচ্ছি। এবারের গ্রন্থমেলায় (২০১৫) আমার তিনটি কবিতার বই আসবে বলে আশা করছি।  ‘বিভাজিত মানুষের মুখ’ এবং ‘অন্তিম যাদুর ঘূর্ণন’— দুটো বইই আসবে চৈতন্য প্রকাশন, সিলেট থেকে। বই দুটির প্রচ্ছদ করেছেন—শিল্পী তৌহিন হাসান। 

এর বাইরে তৃতীয় গ্রন্থটি বের হতে পারে অনুপ্রাণন প্রকাশন থেকে। নাম ‘অনূদিত রোদের রেহেল’। ‘অনুপ্রাণন’ বর্তমান সময়ের একটি প্রতিশ্রুতিশীল প্রকাশনা সংস্থা এবং তাদের যে নান্দনিক সাহিত্যের কাগজটি রয়েছে তা ইতোমধ্যে সকলের প্রশংসাই শুধু কুড়োয়নি, অতি অল্প সময়ে নির্মোহ বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করতে পেরেছে বলে আমি মনে করি।

সিলেটটুডে২৪: আপনার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা কত ?
মোহাম্মদ হোসাইন: আমার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা-০৯। সবগুলোই কবিতার বই।
ভালোবাসা নির্বাসনে গেছে (১৯৯৫), মেঘগুলো পাখিগুলো (২০০১), অরণ্যে যাবো অস্তিস্ত্বে পাপ (২০০৩), পালকে প্রসন্ন প্রগতির চাকা (২০০৪), ভেতরে উদ্গম ভেতরে বৃষ্টিপাত (২০০৬), মেঘের মগ্নতায় রেশমী অন্ধকার (২০০৯), বৃষ্টির গান মায়াবাস্তবতা (২০১২), রূপ প্রকৃতির বিনম্র চিঠি (২০১৩) এবং নৈঃশব্দ্যের এস্রাজ (২০১৪)। 
 
সিলেটটুডে২৪: অমর একুশে গ্রন্থমেলা নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী ?
মোহাম্মদ হোসাইন: ধন্যবাদ আপনাকে। দেখুন, একুশ যেমন আমাদের অহংকার—তেমনি আমাদের চেতনারও উজ্জ্বল উত্তরাধিকার। সাহিত্যের, মননশীলতার এ এক আশ্চর্য উদ্ধার। বাঙালিকে, বাংলা ভাষাকে শাণিত করার এরচে’ মহান বিষয় আর কিছু হতে পারে বলে আমার জানা নেই। তাই এই একুশকে ঘিরে যেমন একজন লেখক, একজন কবি কিংবা একজন হৃদয়বান পাঠক অপেক্ষায় থাকেন সারাবছর-কখন আসবে বইমেলা, তেমনি একজন প্রকাশকও তার আরাধ্য গ্রন্থটি প্রকাশের জন্য উন্মুখ হয়ে হয়ে থাকেন।

পাশাপাশি প্রিয় লেখকের বইটি পাঠেকের হাতে তুলে দিয়ে প্রকাশক যেমন নির্মল আনন্দের ভাগিদার হন—তেমনি সাহিত্যের , সৃজনশীলতার যে নব নব ধ্যাণ-ধারণার উন্মেষ ঘটে, বাঁকবদল ঘটে,  তাও আমরা এই বইমেলার কল্যাণেই মূলতঃ পেয়ে থাকি। অন্তঃত এই একটি মাস বাঙালি  তার নিজেকে ফিরে পায়, তাঁর চেতনাকে অন্তর থেকে ধারণ করে। এককথায়-অসাধারণ সে অনুভূতি। এ যেন এক প্রাণের মিলন মেলা। তবে কিছু কিছু বিচ্যুতি যে নেই মেলাকে ঘিরে, তারও অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে আমি মনে করি মেলা কর্তৃপক্ষ যদি অতীত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবারের বইমেলাটিকে সাজান, আরেকটু বাড়তি মনোযোগ দেন, তাহলে আশাকরি এবারের মেলা আরও আকর্ষণীয় ও সুন্দর হবে। আর আমি একজন নগণ্য কবিতাকর্মী হিসেবে আশা করি আমার কিংবা আমাদের বইও মেলায় পাঠকপ্রিয়তা পাক এবং সকল পাঠকের হাতে তা পৌঁছাক।

সিলেটটুডে২৪: গ্রন্থমেলা কিভাবে আরও আকর্ষণীয় করা যায় ?
মোহাম্মদ হোসাইন: তার জন্য সর্বাগ্রে দরকার একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা। মেলার পরিসর বাড়ানো এবং প্রতিশ্রুতিশীল/ প্রকৃত সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থাকে পেট্রোনাইজ করা। পাশাপাশি মেলা প্রাঙ্গণে বাজারি/ বাহারি / বাড়োয়ারি দোকানের জায়গা না দেওয়া। মেলার গাম্ভীর্য ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা...। 
 
সিলেটটুডে২৪: আপনি কি নিয়মিত মেলায় যান ? কী কারণে?
মোহাম্মদ হোসাইন:  বলা চলে নিয়মিতই যাই। প্রাণের টানে যাই প্রথমতঃ, দ্বিতীয়ত-নিজের বই যখন বেরোয় তখন তো যেতেই হয়। তাছাড়া, দেশের প্রায় সকল কবি সাহিত্যিকদের সাথে মেলবন্ধন ঘটার এরচে’ ভাল সুযোগ তো আর দ্বিতীয়টি নেই।

সিলেটটুডে২৪: লেখালেখিতে কোন বিষয়টিকে আপনি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন? কী যুক্তি এর পেছনে?
মোহাম্মদ হোসাইন:  আমার লেখার মূল প্রতিপাদ্য মানুষ, প্রকৃতি, প্রেম, সমাজের চিরায়ত দ্বন্ধ আর ব্যক্তিগত দুঃখবোধ । আর এ ক্ষেত্রে আমার কেন জানি মনে হয় ‘শুধু মূল্যহীন আমার জীবন’। কিছুই করতে পারলাম না এ ক্ষুদ্র জীবনে। অন্যেরা কতকিছু করে, করতে পারে—কেবল আমিই পারি না। বলা যায় এই শূন্যতা থেকেই হয়ত লেখার প্রেরণা পাই । আর যে গুছিয়ে বলতে পারছি না ভাই !

সিলেটটুডে২৪: আপনার বই আর পাঠক এবং আপনি আর অন্যান্য বই এ সম্পর্কে আপনার কী মূল্যায়ন?
মোহাম্মদ হোসাইন: বড় জটিল প্রশ্ন। আমার বই, আমার পাঠক সংখ্যা নাই বললেই চলে, কেননা—প্রথমত: আমি রাজধানীর বাইরের একজন সামান্য লেখক বা কবি যা-ই বলেন না কেন, দ্বিতীয়ত: আমার গোষ্ঠীকেন্দ্রিকতা নেই—অনেকটা বিচ্ছিন্নতা বা আড়ালে থাকার প্রবণতাও এর জন্য বহুলাংশে দায়ী বলে আমি মনে করি।

আর আমি সব ধরণের বইই পড়ার চেষ্টা করি। আমার সমসাময়িক যারা রয়েছেন –তাদের প্রত্যকের লেখাই আমার ভাল লাগে। বিশ্বসাহিত্যের সাথে তাল মিলিয়ে সমান উচ্চতায় বাংলা সাহিত্য এগিয়ে যাচ্ছে, এটা আমি শুধু বিশ্বাসই করি না—লালনও করি। আরেকটা কথা না বললেই নয়—সেটি হল লেখালেখিতে সর্টকাট বলে কোন রাস্তা নাই। তাই পঠন-পাঠন ছাড়া যে একটি ভাল লেখা, লেখা যায় না – তা আমি মানি এবং অন্তরে তা ধারণও করি । সাহিত্যে কোন ইজম/ ফতোয়া প্রচারেরও আমি ঘোর বিরোধী। আর সব সময়ই চাই লেখক পাঠকের মাঝে একটা নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠুক।
 
সিলেটটুডে২৪: বই প্রকাশে আপনি কী ধরণের প্রতিবন্ধকতার  মুখোমুখি হয়েছিলেন? কিভাবেউত্তরণ ঘটল?
মোহাম্মদ হোসাইন: বই প্রকাশের ক্ষেত্র বহুবার প্রতিবন্ধকার মুখোমুখি হয়েছি। বিশেষ করে কবিতার বইয়ের বেলায়। তিক্ত অভিজ্ঞতাও রয়েছে বহু—থাক এ সব কথা আজ না হয় আর নাইবা বললাম।
শুধু একটা কথাই বলব –একেবারে নবীন কিংবা সদ্য তরুণ বন্ধুটির বই প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রকাশক বন্ধুদের আরও উদারভাবে এগিয়ে আসা উচিত বলে আমি মনে করি। এও মনে করি  একজন লেখক বা কবিকে যথেষ্ট ম্যাচুয়ুরড হয়ে তবেই বই বের করা উচিত।
 
সিলেটটুডে২৪: প্রকাশিত, প্রকাশিতব্য বই আর প্রকাশক(দের) সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন
মোহাম্মদ হোসাইন: এবারের বইমেলায় আমার যে ‘বিভাজিত মানুষের মুখ’ ‘অন্তিম যাদুর ঘূর্ণন’ এবং সম্ভাব্য বই  ‘অনূদিত রোদের রেহেল’ তা সম্পুর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকের লেখা । আশা করি আমার সম্মানিত পাঠকগণ এই বই পাঠের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবেন না। আর আমার প্রকাশকগণও বেশ যত্ন করে বইগুলি করছেন তাঁদেরকেও আমি আমার পক্ষ থেকে আগাম অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
 
সিলেটটুডে২৪: সিলেটটুডে২৪.কম’র পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ হোসাইন: সিলেটটুডে২৪.কম কেও আন্তরিক  অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
 
 
গ্রন্থনা: ক.য়া/ জানুয়ারি ১৯, ২০১৫

আপনার মন্তব্য

আলোচিত