নিউজ ডেস্ক

২৩ জানুয়ারি, ২০১৫ ১৫:১০

বাঙালি সংস্কৃতির তথা বাঙালি জাতীয়তাবাদের মেলবন্ধন সৃষ্টি করে চলেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা- আমিরুল বাসার

একুশে গ্রন্থমেলার লেখক-পাঠকের অপূর্ব মিলনমেলা। আমরা সিলেটটুডে২৪.কমের পক্ষ থেকে মুখোমুখি হয়েছি লেখক-প্রকাশকদের সাথে। এবারের পর্বে কথা বলছেন কবি, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক, প্রকাশক আমিরুল বাসার

আমিরুল বাসার

আমিরুল বাসার কবি, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক, প্রকাশক। লেখালেখিতে আছেন দীর্ঘদিন, সম্পাদনার সাথেও জড়িত। প্রকাশনা ব্যবসা অথবা সেবায় নেমেছেন ২০০৮ সাল থেকে কিন্তু ইতোমধ্যেই স্বাতন্ত্র্য আর মানের স্বাক্ষর রাখতে পেরেছেন বলে পাঠক-বোদ্ধাদের অভিমত।
 
তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা আট।  লিটলম্যাগ আন্দোলনের একজন কর্মি হিসেবে ২০১৩ সালে সম্পাদনা করেছেন লিটলম্যাগ কবিদের নির্বাচিত কবিতা যা ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। আসছে বইমেলায় প্রকাশ হবে তিনটি গ্রন্থ, যার মধ্যে আছে শিশুতোষ ছড়া, আছে লোক সাহিত্য নিয়ে গবেষণাধর্মি লেখা এবং সংকলিত প্রবন্ধ। 
 
সিলেটটুডে২৪.কম’র সাথে আলাপচারিতায় এসেছে তাঁর নিজের লেখলেখি, বইমেলা এবং বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয়। বিস্তারিত পাঠকদের উদ্দেশে: 
 
সিলেটটুডে২৪: অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫-তে আপনার কী বই আসছে? 
আমিরুল বাসার: অনুপ্রাণন প্রকাশন থেকে প্রকাশ হবে প্রাণসায়র তীরে (সংকলিত প্রবন্ধ) এবং সাম্প্রতিক প্রকাশনী থেকে প্রকাশ হবে ‘লোক সংগীতের সন্ধানে’ (গবেষণা) হাতে গড়া মজার ছড়া (শিশুতোষ)
 
সিলেটটুডে২৪: আপনার প্রকাশিত বই সংখ্যা কত?
আমিরুল বাসার: এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা আট। যার মধ্যে রয়েছে কাব্যগন্থ:  নীলচোখ (১৯৯৩), নীল অরণ্য (২০০৮), কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ (২০১০), কবুতর উপাখ্যান ও অন্যান্য কবিতা (২০১২)। সম্পাদিত গ্রন্থ: অনুশীলন (আবৃত্তির জন্য নির্বাচিত কবিতা, ২০১০), কাঁঠালি চাঁপা (নির্বাচিত গল্প সংকলন, ২০১১), কমিউনিজমের মূলনীতি ও অন্যান্য প্রসংগ (২০১১) এবং লিটলম্যাগ কবিদের নির্বাচিত কবিতা (২০১৩)। সম্পাদিত সাহিত্য পত্রিকা/লিটলম্যাগগুলোর মধ্যে রয়েছে: ঈক্ষণ (১৯৮৭-১৯৮৯), ছাড়পত্র (১৯৯১), সাম্প্রতিক (১৯৯২-চলমান) এবং গণনাট্য কেন্দ্র পত্রিকা (১৯৯৩)। 
 
সিলেটটুডে২৪: অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আপনার প্রত্যাশা কী? 
আমিরুল বাসার:  বাঙালি সংস্কৃতির তথা বাঙালি জাতীয়তাবাদের একটি মেলবন্ধন সৃষ্টি করে চলেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। কিন্তু মনটা বড়ই খারাপ লাগে যখন দেখি এই মেলাকে কেন্দ্র করে বাণিজ্যিকীকরণ করা হয়। হাজার বছর ধরে বাঙালি জাতির মনন, কৃষ্টি ও জাতীয় ঐক্য গঠনে এই মেলা ধারাবাহিকভাবে ভূমিকা পালন করতে পারে। আমাদের ভাষা, দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণকর আগামীর জন্য গ্রন্থমেলার- মিলনমেলা জাতিসত্তার ভিত্তিকে আরও সুদৃঢ় করুক।
 
সিলেটটুডে২৪: অমর একুশে গ্রন্থমেলা কিভাবে আরো আকর্ষণীয় করা যায়? 
আমিরুল বাসার:  তরুণ ও প্রবীন লেখকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বইয়ের পুরস্কৃত করতে হবে এবং এর সংখ্যা (বিভাগ অনুযায়ী) বাড়াতে হবে। শ্রেষ্ঠ ৩টি লিটলম্যাগকে পুরস্কৃত করা যেতে পারে। মেলা চলাকালীন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের পুরস্কৃত করা। সৃজনশীল প্রকাশনার জন্য ৫টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা। তরুণ লেখক প্রকল্প চালু করে একাডেমি কর্তৃক নির্বাচিত তরুণ লেখকদের গ্রন্থ প্রকাশ ও তাদের নিয়ে অনুষ্ঠান করা।
 
সিলেটটুডে২৪: একুশে গ্রন্থমলোয় নিয়মিত যান? কী কারণে? 
আমিরুল বাসার: প্রাণের টানে। একজন লেখক হিসেবে, একজন সম্পাদক হিসেবে, একজন প্রকাশক হিসেবে, একজন পাঠক হিসেবে অথবা একজন মানুষ হিসেবে প্রাণের টানে, ভালোবাসার টানে, বইমেলায় যেতে হয়। সারা বছর পর পরিচিত-অপরিচিত কবি-সাহিত্যিক বন্ধুদের সাথে দেখা, কুশল বিনিময়, আড্ডা। যাব না যেতে তো হবেই।
 
সিলেটটুডে২৪: লেখালেখিতে কোন বিষয়টিকে আপনি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন? কী যুক্তি এর পেছনে? 
আমিরুল বাসার:  লেখালেখির অবশ্যই আমি আমার সমাজ ও সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে গুরুত্ব দেব। কারণ এই রাষ্ট্রের সকল কিছু যে দুটি জিনিষকে নিয়ে আবর্তিত হয় তা হল রাষ্ট্রের মানুষ ও মানুষের সমাজ। এর মধ্যে কিন্তু সবকিছুই পড়ে। প্রেম, ভালবাসা, দ্রোহ-বিদ্রোহ, রাজনীতি-সমাজনীতি, হাসি-আনন্দ, শোক-দুঃখ। সেটা আমার কবিতা দিয়ে হতে পারে, গল্প দিয়ে হতে পারে, হতে পারে প্রবন্ধ দিয়েও। এক একটা মাধ্যম দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনকে চিহ্নিত করা আরকি।
 
সিলেটটুডে২৪: আপনার বই আর পাঠক এবং আপনি আর অন্যান্য বই এ সম্পর্কে আপনার কী মূল্যায়ন? 
আমিরুল বাসার: যখন স্কুল জীবনে তখনই বঙ্কিম রবীন্দ্র, শরৎ, নজরুল, সুকান্ত, কার্লমার্কস লেনিন পড়েছি। তার ধারাবাহিকতায় দেশের অন্যান্য কবি সাহিত্যিকদের বইও শেষ করেছি ক্রমানুসারে। তখন কখনও ভাবিনি আমি পাঠক থেকে নিজেও লেখালেখি করবো। স্কুল জীবনেই সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদনার হাতেখড়ি। তা থেকে আজ অবধি বর্তমান। ‘ত্রৈমাসিক ঈক্ষণ’। ১৯৮৭-১৯৮৯ শিল্প, সমাজও সাহিত্য বিষয়ক পত্রিকা ‘সাম্প্রতিক’ (১৯৯২-চলমান) পত্রিকা দুটি সম্পাদনা করতে করতে দেশ ও বিদেশের কবি-সাহিত্যিকদের সাথে যোগাযোগ ও সম্পর্কের উন্নয়ন এবং বিশেষ করে লিটলম্যাগকেন্দ্রিক কবি সাহিত্যিকদের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি আমার জীবনে অনেক আনন্দের বিষয়। 
এর মধ্যে দিয়ে মনের গভীরে সে বেগ-আবেগ, সহানুভূতি-অনুভূতি প্রেম-ভালবাসা, দ্রোহ-বিদ্রোহ আর চেতনার মননে যে উৎকৃষ্ট ভাবগুলো দানা বেঁধেছিল তাই এক সময় আমার প্রকাশিত গ্রন্থ হতে সাহায্য করেছে। সেই প্রেরণায় এখনও লিখছি। লেখার চেষ্টা করছি। আমার লেখা যদি কোন পাঠকের মনের গভীরে বিন্দুমাত্র দাগ ফেলতে সক্ষম হয় তবেই সেই অদৃশ্যমান উৎসাহ আমাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। যখন কেউ প্রকাশ্যে লেখার প্রশংসা করে তখন তা আমার ভাল লাগে। আমি কৃতজ্ঞ হই তাদের বদান্যতায়। আমি যেমন অন্যের একটা ভাল বই পেতে আগ্রহী। পাঠকরা তেমনি আমাদের কাছে ভাল বই আশা করে থাকে। এটাই স্বাভাবিক।
 
সিলেটটুডে২৪: বই প্রকাশে আপনি কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছিলেন? কিভাবে আমিরুল বাসারণ ঘটল? 
আমিরুল বাসার: আসলে বিষয়টা প্রতিবন্ধকতা না বলে আমি একটু অন্যভাবে বলতে চাই। সেটি হল প্রত্যেক প্রকাশনীর নিজস্ব একটা নিয়ম থাকে। সবার সাথে অন্য সবার যে নিয়ম নাও মিলতে পারে। তাই একজন লেখকের পান্ডুলিপি যেটা প্রকাশিত হবে তা সে প্রকাশনীর পছন্দ ও অন্যান্য নিয়মকানুনের মধ্যে সমন্বয় হলেই তা প্রকাশের পথে এগিয়ে যায়। আমার ক্ষেত্রে তেমন সমস্যা সৃষ্টি হয়নি।
 
সিলেটটুডে২৪: প্রকাশিত, প্রকাশিতব্য বই আর প্রকাশকদের সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন। 
আমিরুল বাসার: একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নামে যখন আমাদের একটা বই প্রকাশ হয় তখন কিন্তু ঐ প্রকাশনার স্বত্ত্বাধিকারীর সাথে একটি সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হয়। লেখক-প্রকাশক সম্পর্ক একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বই প্রকাশের ক্ষেত্রে এ সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা, একটি বই প্রকাশের পর পরবর্তী বইয়ের পান্ডুলিপি প্রস্তুতকরণ করা অনেকাংশে প্রকাশকের সাথে সম্পর্কিত। তাই প্রকাশক ও লেখকের সাথে ভাল সম্পর্ক থাকা উচিত। তা না হলে বই প্রকাশের ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
 
সিলেটটুডে২৪: আপনি লেখক, প্রকাশক আর সম্পাদক- এই তিন স্বত্ত্বা, তিন পরিচয়কে কীভাবে বিশ্লেষণ করেন?
আমিরুল বাসার: লেখালেখি শুরু করেছি সেই স্কুল জীবন থেকেই। সে সময় লেখার পরিপক্কতা আসার আগেই একই সময়ে সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনায় হাতেখড়ি। সেটা ১৯৮৭ সালের কথা। তখন আমি উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র। ‘ঈক্ষণ’ নামে ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকাটি ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৯৮৭ সালে প্রথম প্রকাশ পায় আমার সম্পাদনায়। সেখান থেকে সম্পাদনার কাজ শুরু। পত্রিকা সম্পাদনার সাথে সাথে লেখালেখিও বাড়তে থাকে। 
লেখালেখি ও সম্পাদনা এই দুই স্বত্বা তখন থেকে ধারণ করে এসেছি। এটা অব্যাহতভাবে চলতে থাকে এবং আজও বর্তমান। এর সাথে যুক্ত হলো ২০০৮ সালে প্রকাশনীর কাজ। তিনটি স্বত্বা আলাদা হলেও তা একই পরিবারের কাজ বা বিষয় বলে আমি মনে করি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পৃথক চিন্তা থাকলেও সৃজনশীল সাহিত্যচর্চা তিনটি স্বত্বার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ভালো লাগে তা ধারণ করতে। জীবনের সময়গুলো সুস্থ কাজে দিতে পারছি এটাই আমার আনন্দ। এখানে লাভ-লোকসানের হিসেব মুখ্য নয়। কাজ করছি এটাই ব্রত, এটাই অনিবার্য।
 
সিলেটটুডে২৪: সিলেটটুডে২৪.কম’র পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ। 
আমিরুল বাসার:  আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।
 
 
 
গ্রন্থনা: ক.য়া/ জানুয়ারি ২৩, ২০১৫
 
 
 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত