Sylhet Today 24 PRINT

শতবর্ষী দবিরুল পেলেন রাণীর বিশেষ সম্মাননা

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১০ অক্টোবর, ২০২০

ব্রিটেনের রাণীর কাছ থেকে বিশেষ সম্মাননা পেয়েছেন শতবর্ষী ব্রিটিশ বাংলাদেশি দবিরুল ইসলাম চৌধুরী। গত রমজানে করোনাভাইরাস সঙ্কটে দুর্গত মানুষের জন্য তহবিল সংগ্রহ করার স্বীকৃতি হিসেবে রাণী এলিজাবেথের জন্মদিনে দেওয়া অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (ওবিই) খেতাব পেয়েছেন তিনি।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও তিনি নিজের দেশের মানুষের স্বার্থে তহবিল সংগ্রহ করেছিলেন। বো এলাকায় দবিরুল তার বাড়ির সামনের বাগানে পুরো রমজান মাস ৯৭০ দফা হেঁটে চ্যারিটির জন্য ৪ লাখ ২০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা) তহবিল সংগ্রহ করেন।

বাংলা টেলিভিশন " চ্যানেল এস" টেলিভিশনের, রামাদান ফ্যামিলি কমিটম্যান্ট নামের একটি চ্যারিটির জন্য তোলা এই অর্থ থেকে ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে (এনএইচএস) দান করা হয় ১১৬ হাজার পাউন্ড। বাকি অর্থ আরও ২৬টি দাতব্য প্রতিষ্ঠানকে বিতরণ করা হয়। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে মহামারীতে বিপর্যস্ত গরিব-দুঃখী মানুষদের খাবারসহ বিভিন্ন সেবামূলক কাজে এই অর্থ ব্যবহার করা হয়।

বিবিসি বাংলার সাথে এক সাক্ষাৎকারে দবিরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, তিনি ব্রিটেনের বাঙালি সমাজ, বয়স্ক সমাজ এবং অভিবাসী সমাজের পক্ষ থেকে এই ওবিই পদক গ্রহণ করছেন। তিনি জানান, সপ্তাহ দুয়েক আগে রাণীর দপ্তর থেকে ওবিই পদক প্রাপ্তির চিঠি পেয়ে তিনি বেশ অবাকই হয়েছিলেন। “আমরা যখন কোন একটা ভাল কাজ করি তখন বিশেষ কোন প্রাপ্তির কথা মাথায় রাখি না,” বলেন তিনি। “তবু এই স্বীকৃতির জন্য আমি খুবই আনন্দিত।”

এই পদক দবিরুলের জীবনের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে বিশেষ কোন পরিবর্তন আনবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। তবে তার কাজ যদি অন্য কাউকে উৎসাহিত করে তবেই তিনি খুশি হবেন বলে জানান। রাণীর পদক পাওয়ার পর তিনি যেসব দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত সেগুলোর প্রতি মানুষের সমর্থন আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

দবিরুলের ছেলে আতিক চৌধুরী জানান, দবিরুল ইসলাম চৌধুরী তার জন্মস্থান সিলেটের দিরাইয়ে বাংলা ফিমেল অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি চ্যারিটির সাথে যুক্ত। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দরিদ্র, অসহায় ও অনাথ মেয়েদের জন্য প্রতিষ্ঠানটি ভরণপোষণ ও শিক্ষার ব্যবস্থা করে। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে মোট ৩২০ জন মেয়ে রয়েছে। এদের উচ্চশিক্ষার দায়িত্ব ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েছে বলে তিনি জানান।

১৯২০ সালের ১ জানুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানার কুলঞ্জ গ্রামে জন্ম নেওয়া দবিরুল ব্রিটেনে পাড়ি জমিয়েছিলেন ১৯৫৭ সালে। লেখাপড়ার পর সেখানে চাকরির পাশাপাশি কমিউনিটির কাজেও জড়িয়ে পড়েন তিনি। তার স্ত্রী খালেদা দবীর চৌধুরী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যুক্তরাজ্য শাখার একজন নেত্রী।

বাঙালি কমিউনিটিতে সুপরিচিত পেনশনার দবিরুল ইসলাম চৌধুরীকে অনেকেই চেনেন কবি দবিরুল হিসাবে। কবিতাপ্রেমী দবিরুল এখনও কোনো সভা-সমাবেশে গেলে স্বরচিত কবিতা পড়ে শোনান। শত শত কবিতা লিখেছেন তিনি। তার লেখা কবিতার বইও প্রকাশিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, ব্রিটেনের আরেক শতবর্ষী ব্রিটিশ সেনা টম মুরের নিজের বাড়ির আঙিনায় হেঁটে এনএইচএস অর্থাৎ ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের জন্য ৩৩ মিলিয়ন পাউন্ড সংগ্রহের খবর দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন তিনি। এরপর তিনি তার লন্ডনের ফ্ল্যাটের সামনের আঙিনায় হেঁটে মাত্র এক হাজার পাউন্ড তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন। তবে ব্যাপক সাড়া পড়ায় তা লক্ষকে ছাড়িয়ে যায়। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও বিরোধী দলের নেতা লেবার পার্টির কিয়ার স্টারমার দবিরুল ইসলামের তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগের প্রশংসা করেন।

দবিরুল ইসলাম চৌধুরীর পাশাপাশি আরো বেশ কয়েকজন ব্রিটিশ বাংলাদেশি রাণীর বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন, কিন্তু দবিরুল ইসলাম চৌধুরীকে নিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিশেষভাবে আলোচনা করছেন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.