Sylhet Today 24 PRINT

প্রবাসেও নির্যাতিত নারী, করোনাকালে ফিরেছেন ৫০ হাজার

শাকিলা ববি |  ০৮ মার্চ, ২০২১

সম্প্রতি সৌদি আরব থেকে ফিরেছেন তানিয়া আক্তার (ছদ্মনাম)। স্বামীর একার আয়ে সংসার না চলায় সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ২০১৮ সনের ১৭ এপ্রিল রিক্রুটিং এজেন্সি M.H Trade International (RL-1166) মাধ্যমে পাড়ি জমিয়েছিলেন সৌদি আরবে। সৌদি আরব রিয়াদ বিমান বন্দর থেকে সে দেশে থাকা রিক্রুটিং এজেন্সি প্রতিনিধি তাকে তাদের অফিসে নিয়ে যান। এরপর একটি বাসায় কাজের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।

সে বাসাতে থাকা অবস্থায় তানিয়া তার স্বামী মো. রাসেলকে ফোনে জানান, সেখানে তাকে নির্যাতন করা হচ্ছে। খবর পাওয়ার পর রাসেল রিক্রুটিং এজেন্সিতে যোগাযোগ করলে এজেন্সি তার অভিযোগ না শুনে তানিয়াকে ফোন করতে বলেন।

তখন তানিয়ে ফোনে বলেন, “বাপে পুতে একলগে সুইতে চাই, আমি না গেলে আমাকে মারে” এই ফোন রেকর্ডটি রাসেল রেখে দেন। তানিয়া সেখানে কাজ করতে না চাইলে রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতিনিধি তানিয়ার উপর নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ রাসেলের। নির্যাতনের একপর্যায়ে তারা তানিয়ার পা ভেঙ্গে ফেলে। এরপর তানিয়া পুলিশের সহযোগীতার সৌদি আরবের হায়েল জেলার কিংখালিদ হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। সেখানে থাকা রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতিনিধিরা হাসপাতাল থেকে তানিয়াকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কয়েকদিন পর সেখানে যান।

এটি একটি ঘটনামাত্র। এরকম ঘটনা ঘটছে অহরহ। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যেমন নারীর কর্মসংস্থান বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে নারী নির্যাতন, মৃত্যু এবং পাচারের মতো ঘটনা।

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির গত কয়েকবছরের পর্যবেক্ষণ বলছে, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন কিংবা প্রতারনার শিকার হয়ে শুন্যহাতে দেশে ফেরত আসতে বাধ্য হচ্ছেন অনেক নারী। নির্যাতনের মাত্রা এত বেশি যে, মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে দেশে ফিরছেন অনেকে। আবার বিদেশে অনেকে মারাও যাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন



দেশে ফেরা নারী গৃহকর্মীদের ভেতর অধিকাংশই অভিযোগ করেছেন যে, সেখানে তারা নিয়োগকর্তা এবং মকতব (সৌদিয়স্থ রিক্রুটিং এজেন্সি) এর প্রতিনিধি দ্বারা বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ফেরত আসা নারীরা, শারীরিক, মানসিক এবং যৌন নির্যাতন সহ ঠিকমত খাবার না পাওয়া, চুক্তি অনুযায়ি নিয়মিত বেতন না পাওয়া এবং নির্ধারিত সময়ের অধিক কাজে নিয়োজিত থাকা ইত্যাদি। সেখানে প্রতিনিয়তই তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।

আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীর উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ১৯৭৫ সাল থেকে এই দিনে সারা বিশ্বে নারী দিবস পালিত হয়ে আসছে। এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য- ‘করোনাকালে নারী নেতৃত্ব, গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব।’

বিদেশে নারী নিপীড়নের বিষয়টি উঠে এসেছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রতিবেদনেও। সৌদি আরব ফেরত ১১০ নারী গৃহকর্মীর সঙ্গে কথা বলে কমিটি  ২০১৯ সালের ২৬ আগষ্ট একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। তাতে বলা হয়, ৩৫ শতাংশ নারী শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরে এসেেেছন এবং ৪৪ শতাংশ নারীকে নিয়মিত বেতন দেওয়া হতো না। দেশে ফিরে আসা নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে মন্ত্রণালয়  তাদের ফিরে আসার ১১ টি কারণ চিহ্নিত করেছে। মন্ত্রনালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেরত আসা নারীকর্মীদের মধ্যে ৩৮ জন শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, ৪৮ জন নিয়মিত বেতনভাতা পেতেন না। এছাড়া অন্তত ২৩ জনকে পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হতো না।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ থেকে ২০২০ পর্যন্ত মানবপাচারের যতোগুলো মামলা হয়েছে তাতে অন্তত এক হাজার ৭৯১ জন নারী মানব পাচারের শিকার। মামলার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে যতো পাচারের ঘটনা ঘটে তার মধ্যে ২১ শতাংশই নারী। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র ২০২০ সালে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমকালে উদ্ধারকৃত নারীর সংখ্যা ৩০৩ জন। অন্যদিকে রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের পাচারও থেমে নেই।

কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, প্রবাসে কাজের হাতছানিতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও দলে দলে বিদেশ যাচ্ছে। নারীদের প্রেরিত অর্থ জাতীয় অর্থনীতিতে উজ্জ্বল অবদান রাখছে। কিন্তু এ পর্যন্ত চাকুরী শেষ করে বা প্রতারনা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে কতজন নারী শ্রমিক দেশে ফেরত এসেছে তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই।

তবে বিভিন্ন দূতাবাস ও গনমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত গত চার বছরে সৌদি আরব থেকে ১৩ হাজারেরও বেশি নারী দেশে ফিরে এসেছেন। আর বিমানবন্দর প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্য অনুযায়ী, আর বৈশি^ক মহামারী করোনাকালীন সময়ে ফেরত আসা চার লাখ প্রবাসীর মধ্যে ৪৯ হাজার ৯২৪ জনই নারী। ২১টি দেশ থেকে তারা ফেরত এসেছেন। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে ২১ হাজার ২৩০জন, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ১১ হাজার ৬০২ জন, কাতার থেকে ৪ হাজার ৮২৬ জন, ওমান থেকে ৩ হাজার ২০৯ জন, লেবানন থেকে ২ হাজার ৯১০ জন, জর্ডান থেকে ২ হাজার ২৫৯ জন, তুরস্ক থেকে ১ হাজার ২৯ জন ফেরত এসেছেন।

ব্র্যাকের অভিবাস কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান বলেছেন, করোনাকালে বিদেশ থেকে অন্তত ৫০ হাজার নারী কর্মী ফেরত এসেছেন। গত আড়াই বছরে ফেরত আসা নারী কর্মীদের মধ্যে ২৬৪৫ জনকে বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহযোগিতায় জরুরী সহায়তা প্রদান করেছে ব্র্যাক। এছাড়া ফেরত আসা দুইশ নারী ব্র্যাকের সহায়তায় ছোট ছোট ব্যবসা গড়ে তুলেছেন। কিন্তু করোনাকালে ফেরা বিপুল সংখ্যক নারীর পুনবার্সন কিংবা বিদেশে থাকা নারীদের সংকট সমাধানে সরকারি বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। অন্যদিকে বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি গত পাঁচ বছরে ৪৮৭ নারীর মরদেহ কফিনবন্দী হয়ে দেশে ফিরেছে। এর মধ্যে সৌদি আরবেই মারা গেছেন দুইশজন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যু সনদে উল্লেখ আছে আত্মহত্যা। আবার নারীদের বিদেশে পাঠানোর নামে সিরিয়া কিংবা দুবাইতে বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। থেমে নেই ভারতে পাচারের ঘটনাও।

তিনি বলেন, ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত শুধু সৌদি আরব থেকে ফেরত আসা ২ হাজার ৩১৫ জন নারী গৃহকর্মীকে জরুরী সেবা দিয়েছে। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ফেরত এসেছেন ১৩৬৫ এবং ২০১৯ সালে ৯৫০ জন।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষন ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্য সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৯ লাখ ২৪ হাজার ৪১৫ নারী কাজের উদ্দ্যেশে পাড়ি জমিয়েছেন। যেখানে শুধুমাত্র ২০১৯ সালে ১ লাখ ৪ হাজার ৭৮৬ নারী কাজের উদ্দ্যেশে পাড়ি জমিয়েছেন, সেখানে ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে দাড়িয়েছে মাত্র ২১ হাজার ৯৩৪ জনে। মূলত ২০১৫ সালে সৌদি আরবে নারী কর্মী পাঠানোর সমঝোতা স্বাক্ষর করার পর থেকেই বিপুল সংখ্যক নারী বিদেশে যাওয়া শুরু করেন। গত পাঁচ বছরে সৌদি আরবে গেছেন ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৭৫৫ জন নারী, যা মোট নারী অভিবাসনের ৩৮.২৭%। এছাড়া জর্ডানে ১ লাখ ৬২ হাজার ২৮৭ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১ লাখ ৩১ হাজার ৫৭৫ জন, লেবাননে ১ লাখ ৭ হাজার ২১৬ জন, ওমানে ৯১ হাজার ২২০ জন, কাতারে ৩৩ হাজার ৫৬৮ জন, মরিশাসে ১৮ হাজার ৩৩৮ জন, কুয়েতে ৯ হাজার ১২০ জন, মালয়েশিয়াতে ৬ হাজার ৬৫২ জন ও বাহরাইনে ৪ হাজার ২৯০ জন নারী কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশ গমন করেছেন।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১৯৯১ সাল থেকে পরবর্তী ২৪ বছর পর্যন্ত মাত্র ১৫ রিক্রুটিং এজেন্সি বিদেশে নারীকর্মী পাঠানোর অনুমতি পায়। কিন্তু গত চার বছরে রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে এখন ৬২১ রিক্রুটিং এজেন্সি বিদেশে নারী কর্মী পাঠানোর অনুমতি রয়েছে। নারী কর্মী না পাঠালে পুরুষ কর্মী নেওয়া হবে না এমন অলিখিত শর্তের কারণে রাতারাতি সব রিক্রুটিং এজেন্সি নারীকর্মী পাঠাতে বাধ্য হয়। নারী অভিবাসনকে গতিশীল করতে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ, তৈরি হয়েছে নানা নীতিমালা। কিন্তু এখনো পরিস্থিতি যথেষ্ট উন্নতি হয়নি।

বিজ্ঞাপন



গত ৮ জানুয়ারি মধ্যেরাত ১.১০মিনিটে সৌদি এয়ারলাইন্স ঝঠ ৮০২ বিমান যোগে সৌদি আরবের জেদ্দা থেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে দেশে ফিরেছেন আসিয়া (ছদ্দনাম) নামের আরেক নারী গৃহকর্মী। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানটি অবতরণ করার পর থেকে বিমানবন্দরের ভিতর আসিয়া বেগমের উদ্দেশ্যহীন/নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলাফেরার করার বিষয়টি এয়ারপোর্ট আর্মাড পুলিশ কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে কর্তৃপক্ষ তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন কিন্তু  তিনি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন থাকায় তার কাছ থেকে কোন সদুত্তর না পেয়ে এ ব্যাপারে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সাথে যোগাযোগ করে এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এরপর সকাল সাড়ে ৭টায় বিমানবন্দর এয়ারপোর্ট আর্মাড পুলিশ আসিয়াকে হস্তান্তর করা হয় ব্র্যাকের সেইফ হোমে।

সাম্প্রতিক সময়ে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সৌদি আরব থেকে ০৫ জন নারী অন্তঃসত্তা হয়ে দেশে ফিরেছেন আর সাম্প্রতি ওমান থেকে ২ নারী সন্তান নিয়ে দেশে ফিরেছেন। এই সকল নারীরা পরিবার ও সমাজে সবসময় হেয় প্রতিপন্ন হন এবং অনেক ক্ষেত্রেই পরিবার তাদেরকে গ্রহণ করতে চায় না। সেক্ষেত্রে তারা পাচারসহ নানা রকম বিপদের ঝুঁকিতে থাকেন। এর মধ্যে চার মাসের এক মেয়ে সন্তান নিয়ে সম্প্রতি ওমান থেকে দেশে ফিরতে বাধ্য হন কলসুমা (ছদ্দনাম) নামের এক নারী গৃহকর্মী।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় সালামএয়ার (ওএমএস ৩৯৭) বিমান যোগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি। বিমানবন্দরে পৌছার পর এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ অফিসে গিয়ে বলেন, তার সন্তানের পিতা একজন ওমানি নাগরিক। তিনি বলেন নির্যাতনের একপর্যায়ে তিনি অন্তঃসত্বা হলে তাকে ওমান পুলিশের কাছে তুলে দেওয়া হয়। এরপর ওমান ডির্পোটেশন ক্যাম্পে থাকা অবস্থায় তার সন্তানের জন্ম হয়। সেখান থেকেই আজ তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। কুলসুমা বর্তমানে মানসিক ভাবে অসুস্থ। তার ঘটনা শুনার পর এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ কলসুমা ব্র্যাকের কাছে হস্তান্তর করেন। লক্ষীপুর জেলার সদর উপজেলার কলসুমা ২০১৮ সনের ১০ জুন রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স এমএইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-১১৬৬) গৃহকর্মীর কাজ দিয়ে ওমান পাঠান। ওমানে গৃহকর্মী কলসুমা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের তথ্য অনুযায়ি ২০১২ থেকে ২০২০ পর্যন্ত মানবপাচারের যতো মামলা হয়ছে তাতে এক হাজার ৭৯১ নারী মানব পাচারের শিকার। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ি শুধুমাত্র ২০২০ সালে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমকালে উদ্ধারকৃত নারীর সংখ্যা ৩০৩ জন। পাচারের শিকার নারীদের মধ্যে গত ৮ ফেব্রæয়ারি সিরিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন মানব পাচারের শিকার ৪ নারী। এদিকে দুবাইতে বিভিন্ন ডান্সেক্লাবে কাজের কথা বলে নারী পাচারেরর ঘটনাও ঘটছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছেন, দুবাইতে এখন অন্তত ১৫০০ বাংলাদেশি তরুণীকে বিভিন্ন বারে বাধ্যতামূলক কাজ করতে হচ্ছে। অধিকাংশ মেয়ের বয়স ১৮ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। তারা অন্য পুরুষের সঙ্গে রাত কাটাতে। রাজি না হলে মেয়েদের ওপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। মারধরের পাশাপাশি ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অথবা জোর করে মদ পান করিয়ে অন্যের সঙ্গে রাত কাটাতে বাধ্য করা হয়। অন্যদিকে করোনাকালীন সময়ে তুরস্ক থেকে ফিরেছেন এক হাজার ২৯ নারী। তুরস্কে কোন শ্রমবাজার না থাকলেও কেন এত নারী সেদেশ থেকে দেশে ফিরলেন সেটি একটি প্রশ্ন।

পাচারের শিকার নারীদের একজন শাহিন আক্তার (ছদ্মনাম)। রিক্রুটিং এজেন্সি আল হাবিব ও সিকদার ওভারাসীজ এবং দালাল চক্র লেবাননে বাসাবাড়ীতে চকুরির কথা বলে শাহিনাকে পাঠায় সিরিয়া। সেখানে ৭ মাস যৌনকাজে শাহীনাকে লিপ্ত থাকতে বাধ্য করা হয়। পালাক্রমে ও দলগত ভাবে সঙ্গ দিতে হত খদ্দরকে, সঙ্গ না দিতে চাইলে চালানো হত অমানবিক নির্যাতন যেমন- সিগারেটের ছেকা, ইলেকট্রিক সক, চাবুকের বাড়িসহ নানা নির্যাতন। নির্যাতনের কারনে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে জ্ঞান ফেরার পর দেখেন তাকে ধর্ষণ করে ফেলে গেছে। নির্যাতনের চিহ্ন এখনো রয়ে আছে।

ব্র্যাকের অভিবাস কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান বলেছেন, নারী অভিবাসনের ক্ষেত্রে ‘নারী অভিবাসন নীতিমালা’ যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে নারী অভিবাসীর অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। দক্ষ নারী কর্মী তৈরি করে তা প্রেরণের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে। নারী অভিবাসনের ক্ষেত্রে প্রতিটি কর্মীকে পরিবারের সাথে যোগাযোগ জন্য সেদেশে পৌছার পূর্বে সেদেশের সিমকার্ড প্রদান করা প্রয়োজন। নারী কর্মী প্রেরণকারী রিক্রুটিং এজেন্সি গুলোকে যথাযথ মনিটরিং করাসহ অভিযুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সি গুলোকে জবাবদীহিতার মধ্যে আনা প্রয়োজন। কর্মী নির্যাতনকারী প্রতিটি অভিযুক্ত নিয়োগকর্তাকে সেদেশের আইন অনুযায়ী বিচার করতে হবে। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে দেশে ফেরা/অঙ্গহানী বা অন্তঃসত্বা হয়ে দেশে ফেরত নারী অভিবাসীদের জন্য ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে আলাদা অর্থ বরাদ্দ করা প্রয়োজন। দেশে ফেরত নারী অভিবাসী কর্মীদের পুনরেকত্রীকরণে সরকারের কার্যকারী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। মানব পাচার আইনের অধিনে দায়েরকৃত মামলাগুলো দ্রুত নিস্পত্তি করে পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনা যাতে এমন অপরাধ আর কেউ না করে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.