Sylhet Today 24 PRINT

বাংলাদেশিদের ইউরোপ যাত্রা আরও কঠিন হচ্ছে

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২৮ আগস্ট, ২০২১

বাংলাদেশিদের ভিসা দিতে কড়াকড়ি আরোপের সুপারিশ করেছে ইউরোপীয় কমিশন। আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভায় এ সুপারিশ সিদ্ধান্তে পরিণত হলে বাংলাদেশিদের ইউরোপের দেশগুলোতে যাওয়া কঠিন হতে পারে।

ইউরোপীয় কমিশনের এ অবস্থানের কারণ, বাংলাদেশ ইউরোপে অবৈধ হয়ে পড়া প্রবাসীদের ফেরাতে দ্রুতগতির পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এটা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে অসন্তোষ তৈরি করেছে। তারা এ বিষয়ে কমিশনের কাছে অভিযোগ করেছে। এ প্রেক্ষাপটে অবৈধদের ফেরানোর কার্যক্রমে গতি আনতে ইউরোপীয় কমিশন গত ১৫ জুলাই সাময়িকভাবে বাংলাদেশিদের ভিসায় কড়াকড়ির সুপারিশ করে।

ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অবৈধদের ফেরাতে সই হওয়া মানসম্মত কার্যপ্রণালি বিধি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর বা এসওপি) অনুযায়ী অগ্রগতি না হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশকে জানানো হয়েছে। অবৈধ হয়ে পড়া লোকজনকে ফেরাতে ইইউ বাংলাদেশের সঙ্গে এসওপি সই করে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে।

ইউরোপীয় কমিশনের ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, কড়াকড়ির সুপারিশ করা হয়েছে চারটি ক্ষেত্রে—১. পর্যটকসহ বেশ কিছু শ্রেণিতে শেনজেন ভিসার (ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর অভিন্ন ভিসা) আবেদনের জন্য বাংলাদেশের নাগরিকদের অতিরিক্ত কিছু নথিপত্র জমা নেওয়া হতো না। সেই ছাড় আর পাওয়া যাবে না। অবশ্য নথিপত্রগুলো কী কী তা পরিষ্কার করেনি ইউরোপীয় কমিশন। ২. বাংলাদেশের নাগরিকেরা সর্বোচ্চ ১৫ দিনের মধ্যে ভিসা পাওয়ার সুবিধা পেতেন। এ সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে। ৩. বাংলাদেশিরা আর দীর্ঘমেয়াদি মাল্টিপল (একাধিকবার যাতায়াতের) ভিসা পাবেন না। ৪. বাংলাদেশের কূটনীতিক পাসপোর্টধারীদের ভিসা ফি না রাখার যে ঐচ্ছিক সুবিধা ছিল, সেটিও বাদ যাবে।

ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের পাশাপাশি এ দফায় ইরাক ও গাম্বিয়ার জন্য ইউরোপে ভিসা কড়াকড়ির সুপারিশ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘ইউরোপ থেকে অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরাতে যে চুক্তি হয়েছে, সেটা মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। ওই চুক্তি বাস্তবায়নে আমরা যদি ঢিলেমি করি, তারা পদক্ষেপ নেবে, এটাই স্বাভাবিক।’

ইউরোপীয় কমিশন বাংলাদেশিদের ভিসার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপের বিষয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ও ইউরোপীয় কাউন্সিলের কাছে ১০ পৃষ্ঠার সুপারিশ প্রতিবেদন পেশ করেছে। ওই সুপারিশে উল্লেখ করা হয়, অবৈধদের যে তালিকা বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছিল, তা যাচাই করে ফেরত পাঠানো এবং যাদের পরিচয় নিশ্চিত হবে, তাদের জন্য ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ ইস্যুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতি রাখতে ব্যর্থ হচ্ছিল। ২০২০ সালের নভেম্বরে অনলাইন পদ্ধতি বা রিটার্নি কেইস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আরসিএমএস) চালুর পরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।

ইইউর পক্ষ থেকে এ অসন্তোষের বিষয়টি গত জুন মাসে অনুষ্ঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকেও বাংলাদেশকে বলা হয়। ইউরোপীয় কমিশন তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশের কাছে গত ১৩ জুলাই পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার মানুষের তালিকা অনলাইন প্রক্রিয়ায় পাঠানো হয়। এর মধ্যে ১৯৫ জন বাংলাদেশি বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। তাঁদের দেশে ফিরিয়ে নিতে ট্রাভেল ডকুমেন্টও বাংলাদেশের দূতাবাস ইস্যু করেছে। আরও ১০০ জনের পরিচয় যাচাইয়ের প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া বাড়তি ২০০ জনের পরিচয় নিশ্চিতের বিষয়টি ইন্টারপোলের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে।

এদিকে অবৈধ ব্যক্তিদের পরিচয় যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে গত ১০ জুন বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল ছয় দিনের জন্য মাল্টা সফর করে। এ সময় তারা ১৬০ জনের সাক্ষাৎকার নেয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন পর্যন্ত যে দেড় হাজার লোকের তালিকা দিয়েছে, তার অর্ধেক রয়েছে জার্মানিতে। বাকিরা মাল্টা, গ্রিস ও ইতালিতে রয়েছেন।

পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, কোভিড-১৯ এবং নতুন অনলাইন পদ্ধতিতে কাজসহ নানা কারণে এসওপি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় কিছুটা সময় লেগেছিল। তবে গত কয়েক মাসে কাজে গতি এসেছে।

‘হাতিয়ার’ রাজনৈতিক আশ্রয়

গ্রিসে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, দেশটিতে এখন প্রায় ৩০ হাজারের মতো বাংলাদেশি কৃষি খামার, তৈরি পোশাক কারখানা, রেস্তোরাঁ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তাদের মধ্যে অন্তত ১২ হাজারের সে দেশে বৈধতা আছে। আর মাল্টায় প্রায় হাজার দুয়েক বাংলাদেশি রয়েছেন।

গ্রিস ও মাল্টায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আশহুদ আহমেদ বলেন, মূলত ইতালি, স্পেনসহ ইউরোপীয় দেশগুলোতে প্রবেশের আগে ট্রানজিটের জন্য দক্ষিণ ইউরোপের দ্বীপরাষ্ট্র মাল্টায় যান বাংলাদেশিরা। সেখানে যাওয়ার পরপরই তাঁরা রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু প্রত্যাখ্যাত হলে তাঁদের দেশে ফিরে আসতে হয়।

বাংলাদেশিরা স্থল ও নৌপথে নানা রুটে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করেন। করোনা সংক্রমণ শুরুর পর অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার পথে বসনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, লিবিয়া ও তিউনিসিয়া থেকে বাংলাদেশিদের উদ্ধার করার ঘটনা ঘটেছে।
সূত্র: প্রথম আলো

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.