Sylhet Today 24 PRINT

যুদ্ধাপরাধী মঈনুদ্দিনদের কারণেই ব্রিটেন থেকেও জঙ্গি রপ্তানি হচ্ছে: শাহরিয়ার কবির

জুয়েল রাজ,লন্ডন |  ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৫

এতদিন পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি থেকে জেহাদ রপ্তানি হলেও এখন ব্রিটেন থেকেও এই জেহাদ রপ্তানি হচ্ছে। সভ্য দুনিয়ার পথিকৃৎ দাবিদার ব্রিটেনের নামের সাথে এই কলঙ্ক লাগার পেছনে দায়ি চৌধুরী মঈনুদ্দিনের মত দণ্ডিত মানবতা বিরোধী অপরাধী, যাদের দুধকলা দিয়ে পুষছে ব্রিটেন নিজেই।  বৃহস্পতিবার পূর্ব লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এমনই অভিযোগ উত্থাপন করেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির।

 নির্মূল কমিটি ও ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফোরাম আয়োজিত ‘ধর্মের নামে জঙ্গিবাদের উত্থান: আমাদের করণীয় শীর্ষক’ এই সাংবাদিক সম্মেলনে শাহরিয়ার কবিরের সাথে আরও উপস্থিত ছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশের মহাপরিচালক শামীম মোহাম্মদ আফজাল, নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. আলিম চৌধুরীর কন্যা ড. নুজহাত চৌধুরী, ব্রিটেনে মুক্তিযুদ্ধের প্রবীণ সংগঠক সুলতান শরীফ, ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফোরাম নেতা বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া, নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য আনসার আহমেদ উল্লা, যুক্তরাজ্য কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইসহাক কাজল, সহসভাপতি সৈয়দ এনামুল ইসলাম, সহ-সাধারণ সম্পাদক জামাল খান, সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য শাহ বেলাল ও এনামুল হক প্রমুখ।

সাংবাদিক সম্মেলনে শাহরিয়ার কবির বলেন, "ব্রিটেনে তৈরি হওয়া আইএস আইসিস জেহাদি যখন ঢাকায় গিয়ে ধরা পড়ে তখন আমরা শঙ্কিত না হয়ে পারিনা। গণতন্ত্র, মুক্তবুদ্ধি চর্চা ও সভ্য দুনিয়ার পথিকৃৎ দাবিদার এই দেশটি আজ দণ্ডিত ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধী উগ্র মৌলবাদীদের অভয়ারণ্য হওয়ার কারণেই বাংলাদেশের মত দেশেও ব্রিটেন থেকে জেহাদি রপ্তানি হয়, বিষয়টি ব্রিটিশ রাজনৈতিকরা কিভাবে দেখছেন আমি জানিনা, তবে আমরা শঙ্কিত। "

তিনি বলেন, " ১৯৯৬ সালে ওয়ারক্রাইম ফাইল প্রচার হওয়ার পর বাঙালি অধ্যুষিত বেথনালগ্রীন-বো’র তৎকালীন এমপি উনা কিং বলেছিলেন, আমার এলাকায় এতবড় যুদ্ধাপরাধীর অবস্থান আমি জানতাম না, ব্রিটেনের আইনেই এর বিচার করা সম্ভব, এমন তথ্য দিয়ে শাহরিয়ার কবির বলেন, চৌধুরী মঈনুদ্দিনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে মৃত্যুদণ্ডকে যদি ব্রিটেন বাধা হিসেবে মনে করে  তাহলে এখানেই তাঁর বিচারের উদ্যোগ কেন নেয়া হয়না। সাউথ এশিয়ায় জঙ্গি সন্ত্রাসীদের গডফাদার জামাতে ইসলামী, এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জিরো টলারেন্সের কারণে জামাত এখন সেখানে কোণঠাসা। এরা এখন ব্রিটেনে এসে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে, আন্তর্জাতিক ভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চালাচ্ছে অপপ্রচার, আইএস/আইসিসকে বাংলাদেশে নিতে চালাচ্ছে অবিরাম প্রচেষ্টা। আর এসবই হচ্ছে চৌধুরী মঈনুদ্দিনের নেতৃত্বে।"

সম্প্রতি পাকিস্তান কর্তৃক একাত্তরের গণহত্যাকে অস্বীকার করার স্পর্ধায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে শাহরিয়ার কবির বলেন, "যথেষ্ট হয়েছে, এই দেশটির সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে হলে ৫টি বিষয় পাকিস্তানের ফয়সালা করতে হবে। তিনি বলেন, আমি মনে করি ৭১ এর গণহত্যার জন্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমা চাওয়া, বাংলাদেশের প্রাপ্য সম্পদ ফিরিয়ে দেয়া, বিহারীদের ফেরত নেয়া, ৭১ এর ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও জেহাদ রপ্তানি বন্ধ করার মাধ্যমেই পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা সম্ভব। এবিষয়টি সামনে রেখেই পাকিস্তানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক পূনর্মূল্যায়নে আমাদের সরকারের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল  কর্তৃক দণ্ডিতদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে একাত্তরের শহীদ পরিবার ও দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের উন্নয়নে কাজে লাগানোর দাবি জানিয়ে শাহরিয়ার কবির বলেন, এটি কোন নতুন বিষয় নয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নাজিদের সম্পত্তিও এভাবে বাজেয়াপ্ত হয়েছে।"

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শামীম মোহাম্মদ আফজাল বলেন, শুধু বিমান হামলা করলেই আইএস দমন হবেনা, জঙ্গি সন্ত্রাসীদের মূল উৎস কোথায় তা খুঁজে বের করতে হবে। পশ্চিমা বিশ্ব মূল উৎস না খুঁজে নিজেদের অস্ত্র বাণিজ্য ও তেলের জন্যে এই সন্ত্রাস জিইয়ে রাখতে চায় এমন অভিযোগ করে ধর্মের নামে সন্ত্রাস থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে এশিয়ান দেশগুলো বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, রাশিয়া ও চায়নার ঐক্যবদ্ধ ভূমিকার উপর গুরত্বারোপ করেন ইফা ডিজি। ইসলামের অপব্যাখ্যা করে জামাত-মুসলিম ব্রাদার হুড আইএস আইসিস গঠনের পেছনে মদদ দিচ্ছে এমন অভিযোগ করে শামীম মোহাম্মদ আফজাল বলেন, আমাদের নবী করিম (স:) পৃথিবীতে এসেছেন মানুষকে কলেমা শিখাতে, কোন নির্দিষ্ট ভূমি বা জমিনকে নয়, ইসলামের নামে কোন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে নয়। তিনি বলেন, কোন একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্যে নয়, ইসলাম এসেছে পুরো মানব জাতির জন্যে। জামাতে ইসলামীর মত সংগঠনগুলো আজ এই ইসলামকে তাদের নিজেদের স্বার্থে দলীয় সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার করছে।

শহীদ সন্তান ড. নুজহাত চৌধুরী তাঁর বাবা হত্যাকারীদের গডফাদার চৌধুরী মঈনুদ্দিনকে বাংলাদেশে ফেরৎ পাঠাতে ব্রিটেনের প্রতি দাবি জানিয়ে বলেন, "মঈনুদ্দিনদের মত উগ্র, জঙ্গি যুদ্ধাপরাধীদের কারণেই তোমাদের সমাজে আইসিস আইএস এর মত জঙ্গিরা জন্ম নিচ্ছে।"

সুফিজম ইসলামের মূল ফাউন্ডেশন, এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, "আজ ইসলামকে বিকৃত করে মঈনুদ্দিনরা পৃথিবীব্যাপী যে ঘৃণার বিষবাস্প ছড়াচ্ছে আমাদের ভবিষৎত প্রজন্মের জন্যে একটি সুন্দর পৃথিবী রেখে যেতে হলে এই বিষবাস্প ছড়ানো এখনই বন্ধ করতে হবে।"

তিনি বলেন, "ধর্মের নামে সন্ত্রাস শুধু সন্ত্রাস নয়, এটি একটি ‘আদর্শিক লড়াই’। এই ‘লড়াই’ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে যার যার ধর্ম নিয়ে বসবাসের বিরুদ্ধে নিজ নিজ ধর্মীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লড়াই। আমাদের সন্তানরা একটি সেক্যুলার শান্তিপূর্ণ সমাজে পারষ্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রেখে চলবে না ধর্মীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়াই করবে, এর কোনটি আমরা চাই এটি আমাদের এখনই ভেবে দেখতে হবে।"





 

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.