Sylhet Today 24 PRINT

২৯তম প্রয়াণ দিবসে লন্ডনে জাহানারা ইমামের প্রতি শ্রদ্ধা

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২৮ জুন, ২০২৩

দেশের জন্য নিজের ছেলেকে উৎসর্গ করেই তিনি তাঁর দায়িত্ব শেষ করেননি, একাত্তরের দেশ বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আদায়ে শেষ বয়সে এসেও জাতিকে এক মঞ্চে সমবেত করে তিনি বাঙালির জাতীয় জননীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে গঠিত ওয়ারক্রাইম ট্রাইব্যুনাল তাঁর রেখে যাওয়া একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নামের নাগরিক আন্দোলনেরই ফসল। এই আন্দোলন শুধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলনা, তৃণমূল পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন করে জোয়ারও সৃষ্টি করেছিলো এটি।

২৯তম প্রয়াণ দিবসে সোমবার ২৬শে জুন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যুক্তরাজ্য শাখা আয়োজিত এক ভার্চুয়াল স্মরণ সভায় শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে এভাবেই স্মরণ করেন বক্তারা।

সংগঠনের যুক্তরাজ্য সভাপতি সৈয়দ আনাস পাশার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক স্মৃতি আজাদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল স্মরণ সভায় মূল আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন বিলেতে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শীর্ষ সংগঠক, প্রবীণ রাজনীতিক সুলতান শরীফ।

বিশেষ আলোচক ছিলেন বিলেতে মুক্তিযুদ্ধের আরেক সংগঠক, নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা মাহমুদ এ রউফ ও রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান গৌস সুলতান।

বক্তব্য দেন বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব উর্মী মাজহার, যুক্তরাজ্য একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাবেক সভাপতি সৈয়দ এনামুল ইসলাম, সহ-সভাপতি নিলুফা ইয়াসমিন, মতিয়ার চৌধুরী, মকিস মনসুর, নাজমা হোসেইন, সাধারণ সম্পাদক মুনিরা পারভিন, সাংগঠনিক সম্পাদক সুশান্ত দাশ প্রশান্ত, সাংস্কৃতিক সম্পাদক সেলিনা আখতার জোসনা এবং কাউন্সিলার মঈন কাদরী প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরোধী ও মৌলবাদের উত্থানের এক চরম সময় শহীদ জননী জাহানারা ইমাম আলোর দিশারির ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি তাঁর জীবদ্দশায় যে জাগরণ সৃষ্টি করে গেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মৌলবাদ মুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে। শহীদ জননীর সেই জাগরণের চেতনাকে ধরে রাখতে হবে।

বক্তারা আরও বলেন, অবৈধ সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা বিরোধীদের দাপটে দেশ যখন অন্ধকারে নিমজ্জিত, দেশের ইতিহাসকে যখন করা হচ্ছিল বিকৃত, নতুন প্রজন্মকে যখন শেখানো হচ্ছিল মুক্তিযুদ্ধের ভুল তথ্য, সংবিধানকে যখন করা হচ্ছিল খণ্ড বিখণ্ড, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী যুবসমাজ যখন দিশেহারা ঠিক তখনি আলোর পথের দিশারী হয়ে এসেছিলেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। তিনি দেশের জনগণকে আবার স্বপ্ন দেখার সাহস যুগিয়েছেন, যুদ্ধাপরাধী মুক্ত এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে একযোগে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। জাহানারা ইমাম বাঙালি জাতির জন্যে ‘ইতিহাসের এক বিশেষ ব্যক্তি’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

মৃত্যুর আগে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে লিখা শহীদ জননীর শেষ আহ্বান অনুযায়ী স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত তাঁর রেখে যাওয়া নির্মূল কমিটির আন্দোলন অব্যাহত রাখার উপর গুরুত্বারোপ করে অনুষ্ঠানের বক্তারা বলেন, ক্ষমতা লোভহীন এই আন্দোলনের মাধ্যমেই সম্ভব স্বাধীনতা বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করা।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি বর্তমান নতুন প্রজন্মের আগ্রহ ও আকর্ষণ মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধতা থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে বক্তারা বলেন, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে বাংলাদেশের এই প্রজন্মের মধ্যে যে দুনিয়া কাঁপানো গণজাগরণ বিস্ফোরিত হয়েছিলো সেটিও শহীদ জননীর নির্মূল কমিটির দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ থেকে যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের আদর্শ মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধ জঙ্গিবাদ চিরতরে নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি প্রজন্ম নির্মূল কমিটির চলমান নাগরিক আন্দোলন অব্যাহত রাখবে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.