Sylhet Today 24 PRINT

হৃদরোগ গবেষণায় শাখাওয়াৎ নয়নের আন্তর্জাতিক সম্মাননা লাভ

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২৮ জানুয়ারী, ২০১৬

বাংলাদেশের তরুণ গবেষক, একাডেমিক ড. শাখাওয়াৎ নয়ন হৃদরোগ বিষয়ক গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্মাননা লাভ করেছেন।

গত ১৬-১৭ জানুয়ারি হংকংয়ে অনুষ্ঠিত ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন বিহ্যাভিওরাল হেলথ-২০১৬’ এ  তিনি তার হৃদরোগ বিষয়ক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। কনফারেন্সে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ মোট ২২টি দেশের গবেষক ও একাডেমিকরা তাদের গবেষণা কর্ম উপস্থাপন করেছেন। এর মধ্যে তাদের গবেষণা কর্মটি বেস্ট পেপার হিসেবে পুরস্কৃত হয়।

ড. শাখাওয়াৎ নয়ন হৃদযন্ত্রের অবস্থা (সুস্থতা/অসুস্থতা) নিরূপণের বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা করছেন। এ গবেষণা প্রকল্পে তার সহকর্মী হিসেবে আছেন জার্মান অধ্যাপক ড. ফক রেইমেন স্নাইডার ও আমেরিকান অধ্যাপক ড. রবার্ট স্লোয়ান।

এ ব্যাপারে শাখাওয়াৎ নয়ন জানান, সাধারণত কারো বুকের বামপাশে ব্যথা অনুভূত হলে, শ্বাসকষ্ট হলে, বমি বমি ভাব হলে, হার্ট অ্যাটাক/কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে, হার্টবিট/পালস বিট না পাওয়া গেলে চিকিৎসকরা হৃদযন্ত্রের অবস্থা সম্পর্কে জানার ও বোঝার চেষ্টা করেন। হৃদযন্ত্রের অবস্থা জানার সবচেয়ে প্রচলিত ব্যবস্থা হচ্ছে, রোগীর বুকে-পাঁজরে বিভিন্ন রকম তার লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিট জোরে জোরে ট্রেডমিলে হাঁটা কিংবা দৌড়ানোর পর ইসিজি করে দেখা। এই ব্যবস্থায় মূলত একজন ডাক্তার দেখতে চান, রোগী সর্বোচ্চ কী পরিমান অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারেন। যে যতো বেশি পরিমান অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারেন, তার হৃদযন্ত্র ততো বেশি সুস্থ। এই ব্যবস্থাকে ‘এক্সারসাইজ বেসড টেস্ট’ বলা হয়। এ রোগের ক্ষেত্রে এটিকে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড টেস্ট হিসেবে মনে করা হয়। এই টেস্ট আবার দুই ধরনের- (১) ম্যাক্সিমাল টেস্ট ও (২) সাব-ম্যাক্সিমাল টেস্ট। যদি রোগীর কোমরে, হাঁটুতে, মেরুদণ্ডে ব্যথা থাকে বা হাঁটা, দৌড়ানোর ক্ষেত্রে সমস্যা থাকে বা যদি ইতোপূর্বে হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে, তাহলে তার ক্ষেত্রে এ পরীক্ষা করা যায় না। এছাড়াও এ টেস্টের ফলাফলের যথার্থতা নির্ভর করে রোগীর ধূমপান, মদ্যপান, কফি পান, নিদ্রাহীনতা, টেস্টের সময় পরিধেয় জুতা ও ওষুধ সেবনের ওপর।  
          
ড. নয়ন ও তার দল বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পরীক্ষা চালিয়ে বিকল্প উপায়ে কার্ডিও রিসপিরেটোরি ফিটনেস টেস্টের চেষ্টা করছেন, যাতে কোনো রকম এক্সারসাইজ বেসড টেস্ট ছাড়াই হৃদযন্ত্রের অবস্থা সম্পর্কে জানা যাবে।      

"আমরা একটি ফর্মুলা বা এলগোরিদম তৈরি করার চেষ্টা করছি। এ ফর্মুলায় একজন মানুষের রক্তচাপ, ওজন, উচ্চতা, বয়স, স্কিন ফ্যাট, পালস রেট/হার্টবিট, কোমরের মাপ, রানের মাপ, কব্জির মাপ ও আরো কিছু স্কোর বসিয়ে খুব সহজেই হৃদযন্ত্রের সুস্থতা সম্পর্কে জানা যাবে।"

'আমাদের এই বিকল্প ব্যবস্থায় কোনো ধরনের এক্সারসাইজ, হাঁটাহাঁটি বা দৌড়াদৌড়ির প্রয়োজন হবে না। কোনো ইসিজি করা দরকার হবে না, কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারেরও (হার্ট স্পেশালিস্ট) প্রয়োজন হবে না। একজন এমবিবিএস ডাক্তারই এটা করতে পারবেন। তাই এটা সহজলভ্য এবং কম ব্যয়বহুল।  এই ব্যবস্থার মাধ্যমে হৃদযন্ত্রের অবস্থা সম্পর্কে আগে-ভাগেই জানা গেলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে ও হৃদরোগজনিত কারণে মৃত্যুহার উল্লেখাযোগ্য হারে কমানো যাবে' তিনি জানান।
    
ড. শাখাওয়াৎ নয়ন বর্তমানে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিংগাপুর’র স্কুল অব পাবলিক হেলথে একাডেমিক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

দেশের বাইরে গবেষণাকর্মের পাশাপাশি তিনি সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকম সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিয়মিতভাবে লেখালেখিও করেন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.