Sylhet Today 24 PRINT

‘সিজনাল জব ভিসায়’ ইতালিতে এসে ফেরত যাওয়ার উপায় কি?

মাঈনুল ইসলাম নাসিম, ইতালি |  ০৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

ভালো বেতনে কয়েক মাসের মৌসুমি কাজের নিমিত্তে অন্যান্য দেশের অভিবাসীরা ‘সিজনাল জব’ ভিসায় ইতালি এসে সিজন শেষে যথাসময়ে যার যার দেশে ফিরে গেলেও ফেরত যান না শুধুমাত্র বাংলাদেশের লোকজন, যাদের অতি লোভে ‘তাঁতি নষ্ট’ হচ্ছে বাংলাদেশের বৈদেশিক শ্রমবাজারের।

ফলে ২০১৩-২০১৬ টানা ৪ বছর ধরে ইতালীয় শ্রম মন্ত্রণালয়ের খাতায় ‘কালো তালিকাভুক্ত’ হয়ে আছে বাংলাদেশের নাম। বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এই কলঙ্ক থেকে মুক্তির উপায় সন্ধানে এই প্রতিবেদকের সাথে সম্প্রতি কথা হয় রোমে দায়িত্বরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শাহদৎ হোসেনের, যাতে উঠে আসে অপ্রিয় সব বাস্তবতা।
 
সিনিয়র কূটনীতিক শাহদৎ হোসেন জানান, “সিজনাল জব ভিসায় ইতালিতে বাংলাদেশের কোটা পুনরায় চালু করতে গত কয়েক বছর ধরেই আমি রাষ্ট্রদূত হিসেবে এখানকার প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দফতরকে বহুবার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে ইতালিয়ান অথরিটিকে এভাবে আশ্বস্ত করেছিলাম যে, যদি বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে সরকারীভাবে কর্মী প্রেরণ করা যায় তাহলে তারা সিজন শেষে অবশ্যই যথাসময়ে দেশে ফেরত যাবেন, কারণ দালালদেরকে লাখ লাখ টাকা দিয়ে আসতে হবে না তাদের এবং ইতালিতে আসার পর সঙ্গত কারণে সেই টাকা উঠানোর তাড়াটাও সেভাবে থাকবে না। ইতালি সরকারকে বোঝাতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে”।
 
ইতালি যেহেতু মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশ নয় তাই রাষ্ট্রদূত শাহদৎ হোসেনের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চাওয়া হয়, রোমস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস এমনকি ঢাকা থেকে বাংলাদেশের যে কোন অথরিটি কিসের ভিত্তিতে ইতালিকে নিশ্চয়তা দিয়েছে বা দিচ্ছে বাংলাদেশী সিজনাল কর্মীদের সিজন শেষে যথাসময়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের। কারণ ২০০৮ থেতে ২০১২ এই ৫ বছরে যে ১৮ হাজার বাংলাদেশী মৌসুমি কাজের জন্য ইতালিতে প্রবেশ করেছিলেন, তাদের মধ্য থেকে হাতেগোনা মাত্র ৫০-৬০ জন দেশে ফিরে যান। শুধু তাই নয়, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ‘কালো তালিকাভুক্ত’ হবার আগ অবধি দেখা গেছে, যারা বাংলাদেশে থাকাকালীন কোনদিন কৃষিকাজ করেননি এমনকি বিএ-এমএ পাশ করা অনেকেই এগ্রিকালচারাল জবের সাজানো কন্ট্রাক্টে দালালদেরকে ১০-১২ এমনকি ১৪-১৫ লাখ টাকা দিয়ে ইতালিতে ঢুকে আর ফেরত যাননি।
 
রাষ্ট্রদূত শাহদৎ হোসেনের কাছে এটাও জানতে চাওয়া হয়, সরকারীভাবে কর্মী প্রেরণের বাংলাদেশের প্রস্তাব যদি ইতালি গ্রহণও করে তবে যারা বাংলাদেশে কোনদিন লাঙ্গল ছুঁয়ে দেখেননি বা হালচাষ করার সৌভাগ্য হয়নি, তারা ইতালিতে এসে টমেটোর জমিতে জীবন-যৌবন উৎসর্গ করবে কি-না? নাকি আগেকার স্টাইলে ইচ্ছাকৃতভাবে হারিয়ে ফেলবেন যার যার পাসপোর্ট, হয়ে যাবেন অবৈধ বা পালিয়ে যাবেন অন্য দেশে? ইতালির এগ্রিকালচারাল সিজনাল জব ভিসার এই বিষয়টি তো আর এমন নয় যে, বাংলাদেশের শার্ট-প্যান্ট পরা লোকদের ঢাকায় সরকারীভাবে কৃষিকাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে সরকারী ব্যবস্থাপনায় ‘সো-কল্ড’ স্বল্পখরচে ইতালির ফ্লাইটে তুলে দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
 
এমনটা করা হলে তথা ফিল্ডে সরাসরি কৃষিকাজের পূর্ব অভিজ্ঞতাবিহীন লোকদেরকে এগ্রিকালচার ভিসায় প্রেরণ করা হলে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইতালিয় সরকারের সাথে প্রতারণা করার দায় বাংলাদেশ সরকার এড়াতে পারবে কি?

রাষ্ট্রদূত শাহদৎ হোসেন অনেক প্রশ্নেরই সরাসরি কোন উত্তর দেননি এই প্রতিবেদককে। তবে একমত হয়ে তিনি বলেছেন, “সঠিক লোকরা যাতে সিজনাল জব ভিসায় ইতালি আসতে পারেন সেজন্য একটি যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য উপায় আমাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে এবং এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারকেই দায়িত্ব নিয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে”।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের সিজনাল জব ভিসার আবেদনের গেজেট চলতি ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়েছে ইতালিতে, যাতে বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা এমনকি ফিলিপাইনের নাম থাকলেও অনুপস্থিত বাংলাদেশের কোটা।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.