Sylhet Today 24 PRINT

মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকার অপরাধ বিল নিয়ে সরব গার্ডিয়ান

জুয়েল রাজ, যুক্তরাজ্য: |  ১১ এপ্রিল, ২০১৬

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিতর্ক ঐতিহাসিক নয়। পুরোটাই রাজনৈতিক। ইতিহাস কখনো বদলানো যায়না। বাংলাদেশের ইতিহাস  রাজনীতির কারণে ধ্বংস  হচ্ছে, এমনটাই মন্তব্য ব্রিটেনের স্বনামধন্য পত্রিকা দ্যা গার্ডিয়ানের। গতকাল(রোববার) পত্রিকাটির সম্পাদকীয়তে বাংলাদেশের ইতিহাস বিতর্ক নিয়ে এসব মন্তব্য উঠে আসে।

 সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে,পরিণত দেশগুলোর নিজেদের ইতিহাস নিয়ে গবেষণায় প্রস্তুত হওয়া উচিত এবং কিভাবে তারা স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন রকম ব্যাখ্যা গ্রহণ করারও প্রস্তুতি রাখা উচিত। বিশেষ করে একটি দেশ ভেঙে  যখন আরেকটি দেশের জন্ম হয় সেসব ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি জরুরি।

সময়ের সাথে সাথে পরিস্থিতির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে যুদ্ধের সময়কার প্রোপাগান্ডা ও বিদ্বেষমূলক অপপ্রচার পরিহার করে শত্রুতা ভুলে যাওয়াই বাঞ্ছনীয়। ইতিহাস বদলানো যায় না কিন্তু পুর্নমূল্যায়ন করা যায়।

প্রায় ৪৫ বছর আগে পাকিস্তানের নিকট থেকে স্বাধীনতা লাভকারী বাংলাদেশ নিজেদের ইতিহাস নিয়ে এখনো দ্বিধা-বিভক্ত। এই বিভক্তি আরও উস্কে দেয়ার জন্য ‘মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকার অপরাধ বিল’ নামের একটি খসড়া আইন চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যা দেশটিকে আরও বেশি হতোদ্যম করে ফেলতে পারে।

এই আইনটি যদি পাস হয় তাহলে যুদ্ধে কি ঘটেছে তার সাথে ‘অসঙ্গতিপূর্ণ’ কথা বলা অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। বিশেষ করে এই আইনটি প্রণয়নের উদ্দেশ্য মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে যেকোনো বিরোধিত প্রতিহত করা।

সরকারি হিসেব মতে, মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক ৩০ লক্ষ লোক নিহত হয়েছে। অনেকেই মনে করেন এই সংখ্যা প্রকৃত মৃতের সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি। যদিও এ ব্যাপারে সবপক্ষই একমত যে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক অনেক মুক্তিযোদ্ধা নিহত হয়েছে এবং তারা ব্যাপক যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করেছে। তাই মুক্তিযুদ্ধে নিহতদের সংখ্যা কমিয়ে বলা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি বড় ধরণের নির্বুদ্ধিতা।

কিন্তু প্রকৃত সত্য হল এই বিতর্ক মোটেও তাত্ত্বিক নয়, বরং রাজনৈতিক। ১৯৭১ এর যুদ্ধের পরে বাংলাদেশে দু’টি প্রধান মতাদর্শ গড়ে উঠেছে। একপক্ষ মনে করে এই যুদ্ধ শোষকের বিপক্ষে শাসিতের বিদ্রোহ এবং অন্যপক্ষ মনে করে এটি বেদনাদায়ক ও অনুশোচনামূলক বিভক্তি। একপক্ষ জাতিগত বাঙালি পরিচয়কে গুরুত্ব প্রদান করে আর অন্যপক্ষ ইসলামকে প্রাধান্য দেয়।

এই বিভক্তি অনেক আগের পূর্ববঙ্গ ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে দেয়। রাজনীতিবিদরা যুক্ত না থাকায় পূর্ববঙ্গের ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছিল কিন্তু বাংলাদেশে কোনো কিছু থেকেই রাজনীতিবিদদের দূরে রাখার উপায় নেই।

এই দু’পক্ষের একদিকে রয়েছে, স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। যারা মুক্তিযুদ্ধের সাফল্যের একক কৃতিত্ব দাবি করে এবং অন্যদলগুলোর বিশেষ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বৈধতা অস্বীকার করে। এমনকি বিএনপি-জামায়াতকে পাকিস্তানের অনুসারী বলে অভিহিত করারও চেষ্টা চালায় তারা।

আর অপর পক্ষে রয়েছে, ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম হিসেবে বহাল রাখায় যেসব দল খুশি হয়েছে তারা।

সাম্প্রতিক সময়ে, বিতর্কিত ‘যুদ্ধাপরাধী বিচার প্রক্রিয়া’ এই দুই পক্ষের বিভক্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

ইত্যবসরে, উগ্র চরমপন্থিরা নাস্তিক ব্লগারস ও সংখ্যালঘু হিন্দু ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কয়েকজনকে হত্যা করেছে। যদিও পাকিস্তানের তুলনায় এই সহিংসতা খুবই সামান্য ঘটনা। তবুও এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর একটিও এ ধরণের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের বিপক্ষে সরব নয়।

এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরের প্রতি সহনশীল মনোভাব পোষণ করা উচিত বলে গার্ডিয়ান মনে করে। এছাড়া, রাজনৈতিক রূপদানের চেষ্টার পরিবর্তে বাংলাদেশের উচিত নিজেদের প্রকৃত সত্য ইতিহাস উন্মোচনে মনোযোগী হওয়া।
হঠাৎ করে মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকার অপরাধ বিল নিয়ে এমন প্রতিবেদন প্রকাশ অনেকেই সন্দেহের চোখে দেখছেন। যেখানে ইউরোপেও হলোকাষ্ট আইন বিদ্যমান আছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.