Sylhet Today 24 PRINT

পোল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা নিয়ে ফিরলে বাংলাদেশে চাকরির সুযোগ

মাঈনুল ইসলাম নাসিম |  ২৪ মে, ২০১৬

পূর্ব ইউরোপের সমৃদ্ধশালী দেশ পোল্যান্ডের বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের এন্টি-মাইগ্রেশন পলিসি স্বত্বেও দেশটিতে বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার সুবর্ণ সুযোগ অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে এক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে যাঁরা তুলনামূলক কম খরচে পোল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন সাবজেক্টে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করতে আগ্রহী, চলমান সুযোগ তাঁদেরকে কাজে লাগাবার আহবান জানিয়েছেন ওয়ারশতে দায়িত্বরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহফুজুর রহমান। সুযোগের অপব্যবহার না করে উচ্চশিক্ষা সম্পন্নের পর বাংলাদেশে ফিরে গেলে ভালো চাকরির বাজারে তাঁদের হতাশ হতে হবে না বলে জানান মেধাবী এই কূটনীতিক।
 
পোল্যান্ডে বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ এবং সাম্প্রতিককালে ক্ষমতার পালাবদলের পর সরকারের মাইগ্রেশন বিরোধী চলমান পলিসি নিয়ে এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলছিলেন রাষ্ট্রদূত মাহফুজুর রহমান।

তিনি বলেন, “পোল্যান্ডে বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য উচ্চশিক্ষার যথেষ্ট ভালো সুযোগ আছে দু’টো কারণে। এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেকগুলো সাবজেক্ট আছে যা তাঁরা এখন পর্যন্ত ইংরেজিতে পড়ায়। যে সমস্ত সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই বা সহজলভ্য নয়, বিশেষ করে বেশ কিছু টেকনিক্যাল সাবজেক্ট আছে যার সুযোগ নিতে পারে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা। ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় এখানে পড়ার খরচও কম। এই বিষয়গুলো বিবেচনা করলে বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীরা যাঁরা লেখাপড়ায় আগ্রহী, তাঁদের জন্য আমি মনে করি পোল্যান্ড হতে পারে খুব সুবিধাজনক একটি অপশান বা একটি ভালো বিকল্প”।
 
রাষ্ট্রদূত জানান, “সমস্যা যেটা হয়তো কিছুটা হতে পারে তা হচ্ছে এদেশের বর্তমান সরকারের এন্টি-মাইগ্রেশন পলিসি। এর ফলে তাদের ভিসা পলিসি কিছুটা জটিল হলেও হতে পারে, যদিও তাঁরা বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের নিরুৎসাহিত করছে না। পোলিশ সরকার অদূর ভবিষ্যতে যখন তাঁদের দূতাবাস ঢাকায় স্থাপন করবে, তখন হয়তো এই সমস্যাটা বেশ লাঘব হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আমি এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি এবং তাঁদেরকে উৎসাহিত করছি বাংলাদেশ থেকে ছাত্র-ছাত্রী আনার জন্য। আশার কথা হচ্ছে, এখানকার বিশ্ববিদ্যালয় সবগুলোই এ ব্যাপারে আগ্রহী শুধু নয়, বলা চলে অতিমাত্রায় আগ্রহী। বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে আমার মাধ্যমে ঢাকায় যোগাযোগ করেছে কীভাবে ছাত্র-ছাত্রী সংগ্রহ করা যায়। প্রয়োজনীয় বিষয়াদি তাঁরা খতিয়ে দেখছে। বাংলাদেশ থেকে নতুন নতুন বেশ কিছু শিক্ষার্থী বর্তমানে আসছেও”।
 
রাষ্ট্রদূত মাহফুজুর রহমান বলেন, “আমি সবাইকে যে বিষয়টি উৎসাহিত করতে চাই সেটা হচ্ছে বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীরা টেকনিক্যাল সাবজেক্টগুলোতে আসলে প্রথমত তাঁরা তাঁদের যে প্রতিভা সেটা দেখাতে পারার পাশাপাশি নতুন কিছু জিনিস শিখতে পারবে এবং সেই শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশে সহজেই ফেরতও যেতে পারবে। পোল্যান্ড থেকে অর্জিত এই শিক্ষার কারণে বাংলাদেশে তাঁদের জন্য চাকরির বাজার তৈরি থাকবে বেশ পজিটিভলি”।

তবে পোল্যান্ডে যাঁরা উচ্চশিক্ষার উদ্দেশে আসছে বা আসবে তাঁদেরকে কিছু কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকারও প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন রাষ্ট্রদূত। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বর্তমানে যে সরকার এখানে ক্ষমতায় আছে তাঁরা তাঁদের নির্বাচনী প্রচারাভিযানের মধ্যেই একটা পয়েন্ট রেখেছিল এবং সেটা ছিল এন্টি-মাইগ্রেশন। এমনকি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন একসময় পোল্যান্ডকে যে কোটা বেঁধে দিয়েছিল এবং যেটা তাঁরা স্বীকারও করেছিল যে ঐ কোটা গ্রহণ করবে, সেটাও এখন বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ডিনাই করে যাচ্ছে”।
 
রাষ্ট্রদূত মাহফুজুর রহমান জানান, “শুধুমাত্র এখানকার সরকারই নয়, আমি দেখি যে, পোলিশ সোসাইটিও কোন কারণে ঠিক এই মুহূর্তে ‘এক্সট্রিমলি এগেইনস্ট মাইগ্রেশন’ তথা মারাত্মকভাবে মাইগ্রেশন বিরোধী। সুতরাং আমি মনে করি, পোলিশ সোসাইটির জন্য এখন আসলেই একটা সেনসিটিভ সময় মাইগ্রেশন ইস্যুতে পজিটিভ কোন কথা বলা। আমি এটাও বুঝতে পারছি যে, মাইগ্রেশনটাকে এরা কালচারাল ইস্যু হিসেবেই দেখে প্রধানত। এখানে এটাকে তাঁরা ঠিক ইকোনমিক ইস্যু হিসেবে দেখে না। সঙ্গত কারণে পোলিশরা বিষয়টিকে কালচারালি রিজেক্ট করছে এবং এটা তাঁরা ঐতিহাসিকভাবেই করে আসছে। পোল্যান্ডে বিদেশী জনগোষ্ঠীর মধ্যে কিছু ভিয়েতনামিজ আছে। অন্য কোন দেশের লোকজন কিন্তু খুব একটা নেই, এমনকি প্রতিবেশী দেশগুলোর লোকজনও এখানে প্রায় অনুপস্থিত। ইউক্রেনের সঙ্গে এখন তাঁদের সম্পর্ক অনেক ভালো হওয়ার পরেও ইউক্রেনিয়ানদেরকেও কিন্তু এখন পর্যন্ত তাঁরা মাইগ্রেশন সুবিধা দিচ্ছে না”।
 
বাংলাদেশের ভাবমূর্তির স্বার্থেই স্পর্শকাতর বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন পেশাদার কূটনীতিক মাহফুজুর রহমান। একই ইস্যুতে মাইগ্রেশন এক্সপার্টদের পরামর্শ হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে যাঁরা সত্যিকার অর্থেই পড়াশোনা করতে পোল্যান্ডে আসতে ইচ্ছুক, তাঁরা যাতে দেশ-বিদেশের কোন দালাল চক্রের শরণাপন্ন না হয়ে নিজ দায়িত্বে তথা স্বীয় উদ্যোগেই এখানে আসে। পড়াশোনা শেষে যথাসময়ে বাংলাদেশে ফিরে যাবার মানসিক প্রস্তুতি এক্ষেত্রে একদিকে যেমন তাঁদের উচ্চশিক্ষায় সহায়ক হবে, অন্যদিকে ভবিষ্যতের যে কোন সম্ভাব্য হতাশা থেকেও দূরে রাখবে। বিগত বছরগুলোতে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, সুইডেনে আসা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশী ভুয়া শিক্ষার্থীরা তাঁদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে হতাশার সাগরে ভেসেছে। বিষয়টি ইউরোপের সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের সরকার তথা মাইগ্রেশন অথরিটির কাছেও ইতিমধ্যে খোলাসা হয়েছে। বর্তমানে ইউরোপের কোন দেশেই যেহেতু ইকোনমিক মাইগ্রেশনের সুযোগ নেই, তাই উচ্চশিক্ষার জন্য শুধুমাত্র জেনুইন শিক্ষার্থীরা ইউরোপমুখী হলে ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.