Sylhet Today 24 PRINT

চিকেন টিক্কা মশলা থেকে অস্কার, যুগপূর্তিতে ব্রিটিশ কারি এওয়ার্ড

জুয়েল রাজ, যুক্তরাজ্য |  ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৬

ডাচেস অব ইয়র্ক, সাবেক ব্রিটিশ রাজবধূ সারাহ ফার্গুসন, তাঁর হিরক খচিত পাদুকা নিয়ে বাঙালি বধূর সাজে শাড়ী পরে হেঁটেছেন  বাঙালির অস্কার ব্রিটিশ কারি এওয়ার্ডের লাল গালিচায়।  আর সেই উপলক্ষ ছিল ব্রিটিশ কারি এওয়ার্ডের এক যুগ পূর্তি।

গত ২৮ নভেম্বর সোমবার এক ভিন্ন আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছিল লন্ডনের বাটার্সি পার্ক।

আজ থেকে প্রায়  ২শ’ বছর আগে ওয়েস্ট মিনিস্টারে হিন্দুস্থান কফি হাউসের মাধ্যমে যে ইন্ডাস্ট্রির গোড়াপত্তন, দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সেটি আজ ব্রিটিশ অর্থনীতির অন্যতম মহীরুহ। প্রায় ২শ’ বছর আগে ভারতীয় নাগরিক দীন মোহাম্মদ ভারতীয় মশলাদার খাবারের সাথে ব্রিটিশদের যে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন, সেই পরিচয় এই জাতীর খাদ্যাভ্যাসই বদলে দিয়েছে। কারিবিহীন একটি সপ্তাহ আজ কল্পনাও করে না কোন ব্রিটিশ নাগরিক। চিকেন টিক্কা মশলা অর্জন করেছে জাতীয় কারির মর্যাদা। এই দাবী ছিল খোদ সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের। যিনি নিজে উপস্থিত থেকে ব্রিটিশ কারি এওয়ার্ডকে কারি অস্কার হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন।

আর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ব্রিটিশ জীবনে কারী শিল্পের গুরুত্বারোপ করে তার পাঠানো এক ভিডিও শুভেচ্ছা বার্তায় বলেন, কারী এখন ‘ফিস ও চিপস’ এর মত ব্রিটিশদের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে, ওয়েস্ট মিনিস্টার থেকে সারা দেশেই এটা এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ইন্ডিয়ান কারি নামে ডাকা হলেও,  কারি শিল্পের প্রায় ৮০ ভাগের মালিকানা বাংলাদেশিদের হাতে।

কারি শিল্পের সঙ্গে জড়িত ৯০ ভাগই বর্তমানে সঙ্কটে নিমজ্জিত উল্লেখ করে ব্রিটিশ কারী অ্যাওয়ার্ডের প্রতিষ্ঠাতা, এনাম আলী এমবিই বলেন, কর্মী সঙ্কটের কারণে ব্রিটেনে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ২টি রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ইউকে ভিসা ব্যবস্থায় ইউরোপের তুলনায় কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলো চরমভাবে অবহেলিত হত, আর তাই এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা বাধ্য হয়ে বরিস জনসন, প্রীতি পেটেল ও অন্যদের মত ব্রেক্সিটকে সমর্থন করেছিলো। ব্রেক্সিটের পর আমরা একত্রিত হয়ে শক্তিশালী ব্রিটেনের জন্য কাজ করবো ও সমস্ত বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্যের দুয়ার খুলে দেবো।

এ বছর ২ লাখ ৬ হাজার ৩ হাজার ১ শত ৭১ জন ভোটার পোস্ট ও অনলাইনের মাধ্যমে তাঁদের পছন্দের রেস্টুরেন্টকে ভোট দেয়। সেখান থেকে, ২ হাজার ১ শত ৫৩ টি প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হয়। চূড়ান্ত পর্বে ১৩টি ক্যাটাগরিতে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। ১২টি ক্যাটাগরিতে ১২ টি রেস্টুরেন্টকে ও বিশেষ স্বীকৃতি স্বরূপ মরণোত্তর লর্ড গুলাম নুরকে অ্যাওয়ার্ডে সম্মানিত করা হয়।সারা ব্রিটেন থেকে পোস্ট ও আপস এর মাধ্যমে তাঁদের ভোট  দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিচারকগণ। এওয়ার্ডপ্রাপ্ত রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা ও তাঁদের অর্জনকে খুবই প্রেস্টিজিয়াস হিসাবে বিবেচনা করেন।

কারি ইন্ডাস্ট্রির  স্বপ্ন-সম্ভাবনা সামনে  রেখে ব্রিটিশ কারি এওয়ার্ডের প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশে জন্ম নেয়া এনাম আলী এমবিই ২০০৫ সালে থেকে ব্রিটিশ কারি এওয়ার্ড প্রদান করে আসছেন।

কমেডিয়ান আলিস্টায়ার মেকগাওন এর উপস্থাপনায়  অনুষ্ঠানে সারা দেশ থেকে সেলিব্রেটি সেফ, রেস্টুরেন্ট মালিক ও স্টাফ ছাড়াও ব্রিটিশ টিভি ও ফিল্ম ব্যক্তিত্ব, ট্রান্সপোর্ট মন্ত্রী ক্রিস গ্রায়লিং, লর্ড কামলেশ পেটেল, লর্ড অ্যালেক্স চাক, ব্রিটেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাজমুল কাউনাইন, অ্যান মেইন এমপি, জেমস ক্লেভারলি এমপি, সহ সামাজিক, রাজনৈতিক, মিডিয়া ও ক্রীড়া জগতের স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে প্রায় দুহাজার আমন্ত্রিত অতিথির উপস্থিতিতে,  যেন সত্যিকার অর্থেই এক  ভিন্ন ধর্মী অস্কার আবহ তৈরি করেছিল।

চিকেন টিক্কা মশলা দিয়ে বাঙালি অভিবাসী শ্রমজীবী পূর্ব পুরুষদের ঘামে গড়া রেস্টুরেন্ট  ব্যবসা দুইশত বছর পেরিয়ে রূপ নিয়েছে কারি শিল্পে। ব্রিটেনের দ্বিতীয় , তৃতীয় প্রজন্মকে গড়ে দিয়েছে অর্থনৈতিক ভিত্তি। শিক্ষা, রাজনীতি, অর্থনীতি সহ প্রতিটা সেক্টরে আজ বাঙালিদের জয়জয়কার। যার মূল ভিত্তি এই কারি শিল্প। ব্রিটিশ কারি এ্যাওয়ার্ড সেই শিল্পকে নান্দনিক ভাবে তুলে ধরেছে ব্রিটেনের মুল ধারায়।

উল্লেখ্য, প্রতি বছর ব্রিটিশ অর্থনীতিতে প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন পাউন্ড যোগান দিচ্ছে এই কারি শিল্প। ব্রিটেনের মূল ধারার গণমাধ্যমগুলোও  গুরুত্ব সহকারে ১২তম কারি এওয়ার্ডের সংবাদ প্রকাশ করেছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.