Sylhet Today 24 PRINT

২০২৪ সালে দেশে গরিব মানুষ থাকবে না, লন্ডনে মুহিত

জুয়েল রাজ, যুক্তরাজ্য |  ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

আগামী ২০২৪ সালে বাংলাদেশে কোনও গরিব মানুষ থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) লন্ডনে দেওয়া নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেছেন ‘যদিও বিশ্ব সভ্যতার টার্গেট অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্রমুক্ত হওয়ার কথা কিন্তু বাংলাদেশ তার আগেই দারিদ্রমুক্ত হবে। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৬০ শতাংশ। বর্তমানে এই হার ২২ শতাংশ। ২০২৪-২৫ সালে এই হার আরেও কমে আসবে।’

যুক্তরাজ্য সফররত বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে সংবর্ধনা দিয়েছে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ।

সকলকে মিলে উঠতে হবে, কেউ পেছনে পড়ে থাকবে না। আমরা চাইনা কেউ গরিব থাকবে। সকলের চাহিদা বাড়াতে হবে, সকলকে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগাতে হবে, মন্তব্য অর্থমন্ত্রীর।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সব দেশেই বয়স্ক, বিধবা, যাদের সহায়সম্বল নেই বা একা, প্রতিবন্ধীরা সরকারের ওপর নির্ভরশীল থাকবে। বর্তমানে মালয়েশিয়াতে এ হার ৭ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ শতাংশ। উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও ৭ থেকে ১৪ শতাংশ জনগোষ্ঠী গরিব বা সরকারের ওপর নির্ভরশীল।’

অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে প্রবাসী বিনিয়োগের ওপর গুরুত্ব দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য সরকার সব সুবিধা দিয়েছে। বিনিয়োগকারীরা তার লভ্যাংশ ও মূলধন চাইলে ফেরত নিয়ে যেতে পারবেন। দীর্ঘদিন প্রবাসীরা ওয়ান স্টপ সার্ভিসের কথা বলেছেন, সেই সুবিধাও চালু করা হয়েছে। এখন যে কোনও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৯ মাসের মধ্যেই বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি সংযোগ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। আগামী ২০ বছর পর্যন্ত বাংলাদেশে গ্যাস সরবরাহ নিয়ে কোনও দুশ্চিন্তা নেই।’

প্রবাসীদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা মিলে বাংলাদেশে ৭০ একর জমিতে ব্যক্তি মালিকানায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেছে। যুক্তরাজ্য প্রবাসীরাও উদ্যোগ নিলে সরকার সহযোগিতা করবে।’

সিলেট এয়ারপোর্ট থেকে কবে নাগাদ আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হবে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সিলেট বিমানবন্দরের রানওয়ে এখনেও বোয়িং ৭৭৭ চলার উপযুক্ত নয়। নতুন রানওয়ে নির্মাণ ও লাউঞ্জের উন্নয়ন হলেই সিলেট থেকে আন্তর্জাতিক রুটে বিমান চলাচল সম্ভব হবে। তবে এই সময়সীমা এক বছরের বেশি হবে না।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দ্বৈত নাগরিকতার বিষয়টি আইনমন্ত্রী বিশেষভাবে দেখছেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন তাদের সিটিজেনশিপ রাখতে পারে সে বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সরকার আইনটির সংস্কার করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কখনোই চাইবো না আমাদের প্রবাসী শক্তি হারিয়ে যাক। তবে প্রবাসীদের জন্ম কোনও দেশে হয়েছে সেটি বিবেচনা না করে তার নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাই। উত্তরাধিকারে সম্পত্তি থেকে কোনও প্রবাসীকে বঞ্চিত করা হবে না।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী ভাষা সৈনিক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল, সাবেক রাষ্ট্রদূত, সফল কূটনীতিবিদ এবং বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ডঃ এ কে আবদুল মোমেন, যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনার নাজমুল কাওনাইন।

এর আগে আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন আর দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এর পর মানপত্র পাঠ করেন যুক্তরাজ্য ছাত্রলীগের সহ সভাপতি সারোয়ার কবির ও সম্মাননা ক্রেস্ট উপহার তুলে দেন যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরিফ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক ও যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

আবুল মাল আবদুল মুহিতকে বরণ করে নিয়ে বিশিষ্ট সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ভাষা সৈনিক আবদুল গাফফার চৌধুরী রসিকতা করে বলেন, মুহিত ভাইয়ের রাবিশ কথাটি অনেক পুরাতন। তিনি সেই ছাত্রাবস্থায় ১৯৫৫ সালে যখন জেলে ছিলেন (পাকিস্তান সেন্ট্রাল জেলে) তখনো শুনেছি তার মুখে রাবিশ কথাটি।

“মুহিত ভাইকে অর্থমন্ত্রী হিসেবে সংবর্ধনা জানালে ছোট করা হয়। অর্থমন্ত্রী তো আসে যায়। কিন্তু মুহিত ভাই একজন সংস্কৃতিমনস্ক, রাজনীতিমনস্ক ব্যক্তি। একজন মানুষ মুহিত হিসেবে তাকে সংবর্ধনা দিচ্ছেন আপনারা।”এসময় ইম্প্রেশন ভেন্যুতে তুমুল করতালির মাধ্যমে মুহিতকে স্বাগত জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্ব অর্থনীতির রোল মডেল। আমাদের জিডিপি ৭ এর ঘরে, মিলেনিয়াম গোলের প্রায় সব কিছুতেই আমরা সফলতা অর্জন করেছি। সবই সম্ভব হয়েছে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের স্বপ্ন আর সাধনা আর নিরলস কাজের ফল।

তিনি বলেন ২০১৮ সালের মধ্যে সিলেট টু ঢাকা মহাসড়ক ৪লেনে উন্নীত হবে। সিলেটে প্রবাসীদের জন্য বিশেষ ইকোনমিক জোন গঠন করা হবে। এছাড়া দ্বৈত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, প্রবাসীদের ক্ষতি হয় এমন আইন প্রধানমন্ত্রী করবেন না।

মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের মুহিত ভাই বাংলাদেশের অর্থনীতিকে যেভাবে সামাল দিয়েছেন, সেটা একটা রোল মডেল।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সভাপতি সুলতান শরীফ বলেন, আমরা চাই মুহিত ভাই আবারো সংসদে ও মন্ত্রিত্বে থাকুন এবং সেই সাথে আমরা চাই ডঃ মোমেন মন্ত্রী হিসেবে সংসদে যোগ দিন। তিনি বলেন, দেশ নিয়ে ইউনুস গংরা যে ষড়যন্ত্র করছিলো, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চেয়েও ডঃ মোমেন নিজের দক্ষতা, যোগ্যতা আর কর্মগুণ দিয়ে সেই সব সামাল দিয়ে বাংলাদেশকে দুষ্টু চক্রের হাত থেকে রক্ষা করেছেন।

সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক।

অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন মাওলানা কুতুব উদ্দিন। এরপর সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শুরুতে যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা লীগ, মহিলা যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দ সম্বর্ধিত অতিথি আবুল মাল আবদুল মুহিতকে ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.