Sylhet Today 24 PRINT

ইতিহাস গড়ে ব্রিটেনের হাউজ অব পার্লামেন্টে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন

জুয়েল রাজ, যুক্তরাজ্য |  ২৮ মার্চ, ২০১৭

গণতন্ত্রের সূতিকাগার ব্রিটেনের হাউজ অব পার্লামেন্টের ট্যারাজ প্যাভিলিয়নে, বাংলাদেশের ৪৬তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করল যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ।

সোমবার (২৭ মার্চ) ব্রিটেনের ইতিহাসে বাংলাদেশি কোন অনুষ্ঠানে অংশ নিলেন হাউজ অব পার্লামেন্টের প্রায় ৬০ জন এমপি। ৫৩ জন এমপি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা দিবসের উপস্থিতি স্বাক্ষর সিটে স্বাক্ষর করেন।

ব্রিটেনের পার্লামেন্টারি সংস্কৃতির ২০০ বছরের  ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অভিবাসী কমিউনিটির জাতীয় দিবসের আলোচনা সভায় এতো বিপুল সংখ্যক এমপি এক সাথে আলোচনায় অংশ নেন। যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টি, বিরোধী দল লেবার পার্টি, লিবারেল ডেমোক্র্যাটস ও স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টিসহ সব দলের এমপিরাই যোগ দিয়েছিলেন।

অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে সংসদ সদস্যরা বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় সব সময় পাশে থাকবে যুক্তরাজ্য।

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুকের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে ব্রিটেনের সংসদের তিন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি রুশনারা আলী, রুপা হক, টিউলিপ সিদ্দিক সহ ৬৩ জন এমপি যোগ দিয়েছিলেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার কথা তুলে ধরেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। বক্তব্য দেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার নাজমুল কাওনাইন ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ। উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

অনুষ্ঠানে লন্ডন ও বাংলাদেশের সিলেটে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে বক্তারা বলেন, গণতন্ত্র কখনো সন্ত্রাসবাদের কাছে হার মানতে পারে না।

ব্রিটিশ এমপিরা বলেন, কয়েক দিন আগে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বাইরে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এই পার্লামেন্টেই তাঁরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা উদযাপনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন। সন্ত্রাসী হামলায় এক মুহূর্তের জন্যও গণতন্ত্র থেমে থাকেনি।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য কোনো একজন এমপির অনুষ্ঠান হোস্ট করতে হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানটি হোস্ট করেন লেবার দলীয় এমপি জিম ফিটসজ পেট্রিক। সূচনা বক্তব্যে সবাইকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানান তিনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যে পরিমাণ এমপি হাজির হয়েছেন, অন্য কোনো অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে এমনটি আর ঘটেনি।

লেবার পার্টির ছায়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমিলি থর্নব্যারি বলেন, ব্রিটেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ছিল। সেই সঙ্গে ব্রিটেন গত ৪৬ বছর ধরে স্বাধীন বাংলাদেশের ভালো বন্ধু। বিষয়টি ভেবে তাঁর বেশ ভালো লাগছে। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের উন্নয়নে ব্রিটেন সব সময় পাশে থাকবে।

ব্রিটিশ সংসদের বাংলাদেশ বিষয়ক সর্বদলীয় কমিটির চেয়ার অ্যান মেইন এমপি বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শনের অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন।

অ্যান মেইন বলেন, আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের কাছে গণতন্ত্র কখনো হার মানবে না।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি রুপা হক বলেন, বয়সে বেশ কনিষ্ঠ বাংলাদেশ খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। ব্রিকস জোটে বাংলাদেশ দ্রুত যুক্ত হবে বলে আশা করেন তিনি।

পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনের এমপি রুশনারা আলী বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। অনেক সংগ্রামের পর স্বাধীনতা পেয়েছে বাংলাদেশ। এসব মানুষের আত্মত্যাগের কথা মনে রাখার জন্য এ ধরনের আয়োজন অত্যন্ত জরুরি।

রুশনারা আলী বলেন, ব্রিটিশ এমপি হিসেবে আমরা যেকোনো দলের সঙ্গে কাজ করি। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাজ করছি। অন্যান্য দলের সঙ্গেও কাজ করছি। বাংলাদেশের মানুষের অগ্রগতি ও সাফল্যই আমাদের অগ্রাধিকার।’

উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে হ্যাম্পটেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনের এমপি টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, সন্ত্রাসীরা কখনো মুসলিম বা ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। তাদের পরিচয় কেবলই সন্ত্রাসী। ব্রিটেনের রাজনীতিতে ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের সাফল্যের কথাও উল্লেখ করেন টিউলিপ। ব্রিটিশ সংসদে আরো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নেতৃত্ব দেখারও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা নিয়ে দুটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

বাঙালি অধ্যুষিত পপলার লাইম হাউজ এলাকার এমপি জিম ফিজ প্যাট্রিক সিলেটি ভাষায় বলেন " আমি আপনারার লগে আছলাম, এবো আছি, আগামীতেও থাকমু (আমি আপনাদের সাথে ছিলাম, এখনো আছি, আগামীতেও থাকব)

অন্যান্য এমপিদের মধ্যে জনাথান অ্যাশওয়ার্থ এমপি, পল স্ক্যালি এমপি , টম ব্রেইক এমপি, টমি শেফার্ড এমপি, অ্যান মেইন এমপি, এমিলি থর্নব্যারি এমপি, নিক ডাকিন এমপি, স্যার অ্যালান মিল এমপি সহ আরো অনেক খ্যাতনামা পার্লামেন্টারিয়ানরা বক্তব্য রাখেন।

তাদের বক্তব্যে ব্রিটেনে বাংলাদেশিদের অবদানের কথা উল্লেখ করেন। কেউ কেউ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ও ভূয়সী প্রশংসা করেন। স্বাধীনতার ৪৬ বছরে একটি দেশ মধ্য আয়ের দেশে উপনীত হয়েছে, যা সত্যিই আশাব্যঞ্জক।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.