Sylhet Today 24 PRINT

উগ্রবাদ বর্ণবাদের স্থান নেই- আলতাব আলী দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা

মতিয়ার চৌধুরী |  ০৫ মে, ২০১৫

ব্রিটিশ মালটিক্যালচারাল সোসাইটিতে বর্ণবাদের স্থান নেই, আসুন সবাই মিলে রেসিজম এন্ড ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াই। কেননা মানবতা উগ্রবাদ বর্ণবাদকে সমর্থন করেনা।
 
সোমবার (৪ মে)ইষ্ট-লন্ডনের আলতাব আলী পার্কস্থ শহীদ মিনার চত্ত্বরে আলতাব আলী ফাউন্ডেশন আয়োজিত ৩৭তম আলতাব আলী দিবসের সমাবেশে বক্তারা একথা বলেন। সমাবেশের আয়োজন করে আলতাব আলী ফাউন্ডেশন।
 
বক্তারা বলেন যুগে যুগে বৃটেন সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উগ্রবাদ বর্ণবাদের আবির্ভাব ঘটেছে সব সময়ই তারা মানবতার কাছে পরাজিত হয়েছে। ১৯৭৮ সালের ৪মে ইষ্ট-লন্ডনে বর্ণবাদীদের হাতে নির্মম ভাবে খুন হন বাঙালি গার্মেন্টস শ্রমিক আলতাব আলী।
 
এরপর থেকে ব্রিটিশ বাঙালিরা এ্ই দিনটিকে আলতাব আলী দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন। এই দিনে জাতি, বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই সমবেত হন উগ্রবাদ ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে।
 
আলতাব আলী ফাউন্ডেশনের চেয়ার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতা সাবেক ডেপুটি মেয়র আকিকুর রহমান আকিকের সভাপতিত্বে ও বর্ণবাদবিরোধী নেতা সাবেক কাউন্সিলার নুরুদ্দিন আহমদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলতাব আলী দিবসের আলোচনায় সভায় তৎকালীন বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনকারীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ট্রেড ইউনিয়নিষ্ট রিচার্ড হোম, হ্যাকনী ট্রেড ইউনিয়নিষ্ট গ্লেইন রেইস, ক্লার্ক মারফি, সাবেক কাউন্সিলার রিচার্ড মেক্সওয়েল, মাইক হ্যালেন, বাংলাদেশের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমার চৌধুরী, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের স্পীকার আব্দুল মুকিত চুনু এমবিই, সাবেক কাউন্সিলার রাজন উদ্দিন জালাল, সাবেক কাউন্সিলার নূরুল হক, মানবাধিকার কর্মী আনসার আহমেদ উল্লাহ, স্বাধীনতা ট্রাষ্টের চেয়ার জুলি বেগম।
 
তৎকালীন বর্ণবাদবিরোধী এক্টিভিষ্ট ছাড়াও আরো বক্তব্য রাখেন গ্রেটার লন্ডন এসেম্বলী মেম্বার মোরাদ কোরেশী, যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ।
 
যে স্থানটিতে আলতাব আলী বর্ণবাদীদের হাতে নিহত হয়েছিলেন পরবর্তিতে আন্দোলনকারীদের প্রচেষ্টায় এই স্থানটির নামকরণ করা হয় আলতাব আলী পার্ক এবং এখানেই নির্মান করা হয় বাঙালির চেতনার স্মারক শহীদ মিনার।
 
বৃটেনে এক সময় আবির্ভাব ঘটেছিল বর্ণবাদের এখনও যে বর্ণবাদ নেই তা নয়, তবে এরা আর আগের মতো সক্রিয় নয়। সম্মিলিত প্রতিরোধের কারণে বর্ণবাদীরা ইষ্ট-লন্ডন ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। তারও আগে ১৯৩০ সালে এই বৃটেনে কালো সার্ট বর্ণবাদীদের উত্থান ঘটেছিল ইহুদীদের বিরুদ্ধে, তখনও বর্ণবাদবিরোধী রেসিজম এন্ড ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছিনে। ১৯৩৬ সালে বর্ণবাদী নেতা ওজওয়াল্ড মজলির নেতৃত্বে ঘোষণা দেয়া হয় তারা ইষ্ট-লন্ডনে এসে ইহুদীদের আক্রমণ করবে, তৎকালীন মাইগ্রেন্ট ইহুদী সম্প্রদায় স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে নিয়ে ক্যাবল ষ্টীটে বর্ণবাদীদের প্রতিহত করতে সমাবেশের আয়োজন করে, ১৯৩৬ সালের ৪ অক্টোবর ঘোষণা দিয়ে বর্ণবাদীরা আসলেও পুলিশ এবং বর্ণবাদবিরোধীদের প্রতিরোধের কারণে এগুতে পারেনি, ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
 
এ-তো গেল ১৯৩৬ সালের কথা। পরবর্তিতে এই এলাকায় আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠে বর্ণবাদ। বিশেষ করে বর্ণবাদী ন্যাশনালফ্রন্ট ও স্কীন-হ্যাডের টার্গেটে পরিণত হয় পূর্ব লন্ডনের বাঙালি কমিউনিটি।
 
১৯৭৫/৭৬ সাল থেকে শুরু করে ১৯৮০/৯০ সাল পর্যন্ত পূর্বলন্ডনের বাঙালি কমিউনিটিকে রীতিমতো যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয়েছে। বাঙালি কমিউনিটি সংঘবদ্ধভাবে এর বিরুদ্ধে রুখে দাড়ায়, বাঙালিদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসেন বর্ণবাদবিরোধী ইংরেজসহ অন্যান্য মাইগ্রেন্ট কমিউনিটি। # শুধু বাঙালি নয় ভারতীয় পাকিস্তানী এবং কালোদেরও বর্ণবাদী হামলার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ব্রিকলেন ছিল বর্ণবাদীদের আক্রমণের টার্গেট তখনকার সময় যারা তরুণ ছিলেন তাদের রীতিমতো রাতে ব্রিকলেনকে পাহারা দিতে হতো।
 
আলতাব আলী ছাড়াও এই সময়কার ভেতর হ্যাকনী এলাকায় ৫০ বছর বয়সী ইসহাক আলী নামের আরেক বাঙালিকে বর্ণবাদীদের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছে। এ সময় বর্ণবাদ প্রতিরোধে ন্যাশনাল ফ্রন্টের বিরুদ্ধে কয়েকটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এ্যাকশন কমিটি এ্যাগেইনষ্ট রেসিয়াল এটাকস, এশিয়ান কমিউনিটি ট্রেইড কাউন্সিল।
 
এসব সংগঠনের নেতৃত্বে ১৯৭৮ সালে ১৪ মে বৃটেনের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে ১০হাজার মানুষ সমবেত হন ব্রিকলেনের আলতাব আলী পার্কে এখান থেকে এসব সংগঠনের নেতৃত্বে দশ হাজার মানুষের বর্ণবাদবিরোধি র্যা লি নিয়ে যান দশ নাম্বার ডাউনিং ষ্টীটে।
 
বাঙালিদের এসময়কার স্লোগান ছিল- ‘‘স্লেফ ডিফেন্স নো অফেন্স’’ (আত্মরক্ষা অপরাধ নয়), ‘‘ব্লাক এন্ড হোয়াই ইউনাইট এন্ড ফাইট’’, (সাদা কালো এক হও প্রতিরোধ করো), এন্ড, হু কিল আলতাব আলী ? রেসিজম! রেসিজম! (কে আলতাব আলীকে হত্যা করেছে? বর্ণবাদ! বর্ণবাদ!)। ন্যাশনাল ফ্রন্ট স্কীন হ্যাডরা ইষ্ট লন্ডন থেকে বিতাড়িত হলেও নতুন করে আবারও গজিয়ে উঠেছে ইংশিল ডিফেন্স লীগ বা ইডিএল। এর সাথে পূর্ব লন্ডনে নতুন আতঙ্ক যোগ হয়েছে ধর্মীয় উগ্রবাদ।
 
 

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.