Sylhet Today 24 PRINT

ব্রিটিশ নির্বাচনে রেকর্ড ১২ বাংলাদেশি : এগিয়ে আছেন টিউলিপ, রূপা আর রুশনারা

নিউজ ডেস্ক  |  ০৬ মে, ২০১৫

৭ মে অনুষ্ঠেয় ব্রিটেনের পার্লামেন্ট নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক ১২ জন বাংলাদেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিভিন্ন জনমত জরিপে বেশ এগিয়ে আছেন টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক, রূপা হক আর রুশনারা আলী।

রুশনারা আলীর জন্যে ব্রিটেনের সংসদে যাওয়া হবে এটা দ্বিতীয়বারের মতো ঘটনা আর টিউলিপ আর রূপার জন্যে হবে প্রথম। এছাড়াও আছেন আরও নয় বাংলাদেশি প্রার্থী, যারা ব্রিটেনের পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

বিশ্বের একটি শক্তিধর এই রাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশিদের আগ্রহ যেন এবার একটু বেশিই। ‍কারণ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক যিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনী, বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ রেহানার মেয়ে এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি।

লেবার পার্টির হয়ে সংসদ সদস্য হতে এই লড়াইয়ে হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে প্রার্থী হয়েছেন টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক। রূপা লড়ছেন ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসনে। কিংস্টন ইউনিভার্সিটির শিক্ষক রূপা হকও লেবার পার্টির প্রার্থী। আগে থেকেই সুপরিচিত নাম ও নির্বাচিত লেবার পার্টির এমপি রুশনারা আলী এবারও জয়ী হবেন বলে অনেকেই ধারণা করছেন।

টিউলিপ জনপ্রিয়তায় এগিয়ে তবে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বলা হচ্ছে লন্ডনে যে ক’টি আসনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তার শীর্ষে রয়েছে টিউলিপের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন।

২৩ বছর ধরে লেবার পার্টির দখলে রয়েছে হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন। কিন্তু এবার জটিল এক সমীকরণে রয়েছে এই আসন। ২০১০ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে লেবার দলীয় প্রার্থী গ্লেন্ডা জ্যাকসন অনেকটা হারতে হারতেই মাত্র ৪২ ভোটে জিতে যান হ্যামস্টেড ও কিলবার্নের এ আসন। এ কারণেই ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি এবার এই আসনটিকে ‘টার্গেট সিট’ বানিয়েছে।

তবে হিসাব নিকেশে টিউলিপেরই পাল্লা ভারী বলে জানাচ্ছেন বিশ্লেষকরা। আশার খবর হচ্ছে, সবশেষ প্রাক নির্বাচনী জরিপ টিউলিপকে ৪৮ শতাংশ ভোট দিয়ে নির্বাচন জয়ের পথে এগিয়ে রেখেছে।

জরিপে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী টোরি সায়মন মার্কাস ৩২ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন। আর লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী মাজিদ নেওয়াজ পেয়েছেন ১০ শতাংশ ভোটারের সমর্থন।

এই এগিয়ে থাকাকেই বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ ২০১০ সালের নির্বাচনে এই আসনের ভোট ভাগাভাগি হয় কড়ায় গণ্ডায়। সেবার এই আসনে প্রধান তিনটি দলের মধ্যে লেবার পার্টি ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ, কনজারভেটিভ পার্টি ৩২ দশমিক ৭ শতাংশ এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাটস পার্টি ৩১ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পায়।

তবে জরিপে যতই এগিয়ে থাকুন নির্বাচনে জয়ী হওয়াকে এখনো চ্যালেঞ্জিং হিসেবেই দেখছেন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি মনে করেন কিশোর বয়স থেকেই এই এলাকায় বড় হয়েছেন, স্কুলে পড়েছেন। এখানকার প্রতিটি ঘটনা, প্রতিটি অগ্রগতি তার জানা। মানুষের চাওয়া পাওয়ার হিসাব-নিকাশও রয়েছে তার কাছে।

এর আগেই কাউন্সিলর হিসেবে জনগণকে সেবা যেমন দিতে পেরেছেন, ভালোবাসাও পেয়েছেন। আর তাতেই আশাবাদী হয়ে উঠেছেন তিনি। ক্যামডেন এলাকায় এর আগে নির্বাচিত কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি যোগ দিয়েছিলেন লেবার পার্টিতে।

পুরো এলাকা সম্পর্কে তার জ্ঞান ও ধারণা, জনগণের বন্ধুত্ব ও ভালোবাসাকে কাজে লাগিয়েই চ্যালেঞ্জ জয় করতে চান টিউলিপ। প্রত্যাশা অনুযায়ী সবার সাড়া পাচ্ছেন, আর তাতেই আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছেন তিনি।

হ্যামস্টেড ও কিলবার্নের জনগণের মনের ভাষা শুনতে ও বুঝতে পারেন বলেই মনে করেন একজন দৃঢ়চেতা টিউলিপ সিদ্দিক।

এদিকে জরিপে এগিয়ে থাকার দিকটিতো রয়েছেই। লর্ড আসক্রফটের ওই জরিপ প্রতিবেদন সবচেয়ে বড় যে আশার বাণী দিচ্ছে তা হচ্ছে গত নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টির ভোট থেকে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ এবার লেবার পার্টির প্রার্থী টিউলিপের দিকে ঝুঁকছে।

টিউলিপ নিজেও জানেন হ্যামস্টেড ও কিলবার্ন আসনটি ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের অন্যতম প্রধান টার্গেট। এর পরও ৭ মে’র নির্বাচনে আসনটি লেবার পার্টির হাতে তুলে দিতে কঠোর শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

প্রভাবশালী সব অনলাইন, প্রিন্ট আর ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে আসছে টিউলিপ সিদ্দিকী ও ডা. রূপা হককে নিয়ে খবর। গত রোববার মেয়র জনসন যখন ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসনে টোরি দলের প্রার্থী এনজি ব্রের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন, সে সময় রূপা হক প্রশ্ন করতে এগিয়ে এলে তাকে নাজেহাল হতে হয়। সে ঘটনায় রূপার পক্ষ নিয়ে ফলাও করে খবর প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যমগুলো।

তবে সবকিছু ছাপিয়ে অনেকেরই চোখ টিউলিপ সিদ্দিকী আর রূপা হকের দিকে। রাজনীতিকদের পাশাপাশি চলচ্চিত্র তারকা, প্রখ্যাত লেখক, শিল্পী কলা-কুশলীদেরও দেখা গেছে তাদের পাশে দাঁড়াতে, ক্যাম্পেইনে অংশ নিতে। ব্রডকাস্টার ম্যালভিন ব্রাগ, অভিনেতা রিচার্ড উইলসন, ডেভিড ব্যাডিয়েল, গ্রেগ ওয়াইস এবং এমা থম্পসন, লেখক বনি গ্রির, ক্যাথি লেট, থিয়েটার পরিচালক জনাথান মিলার, নাট্যকার ডেভিড হ্যার, কমেডিয়ান এডি ইজ্জার্ড ছাড়াও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব রবার্ট ওয়েব সরাসরি ক্যাম্পেইনে যোগ দিয়েছেন টিউলিপের।

এবারের নির্বাচনে অপর বাংলাদেশি ব্রিটিশ প্রার্থীরা হচ্ছেন- বেকেনহাম আসনে লেবার পার্টির ব্যারিস্টার মেরিনা আহমেদ, ওয়েলউইন অ্যান্ড হাটফিল্ড আসন থেকে লেবার পার্টির ব্যারিস্টার আনোয়ার বাবুল মিয়া, নর্থহ্যামটন সাউথ আসন থেকে লিবারেল ডেমোক্রেট দলের প্রিন্স সাদিক চৌধুরী, সারের রায়গেইট ও বানস্টেড আসনে লেবার পার্টির আলী আখলাকুল, লুটন সাউথ থেকে লিবারেল ডেমোক্রেটের আশুক আহমেদ, নর্থ ইস্ট হ্যাম্পশায়ার আসন থেকে লেবার পার্টির এমরান হোসাইন, স্কটল্যান্ডের এভারডিনশায়ারের বেনফ অ্যান্ড বুখান আসন থেকে লেবার পার্টির সুমন হক এবং ওয়েলসের আরফন আসন থেকে লিবারেল ডেমোক্রেট দলের মোহাম্মদ সুলতান। তাদের পক্ষেও বাংলাদেশি কমিউনিটি প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.