Sylhet Today 24 PRINT

ব্রিটেনে শিশু প্রতিপালনে বাংলাদেশি নারীর মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননা

জুয়েল রাজ, যুক্তরাজ্য |  ২৭ অক্টোবর, ২০১৮

ব্রিটেনে শিশু প্রতিপালন বা ফস্টার কেয়ার খুবই চ্যালেঞ্জিং একটা পেশা। অন্যের অবুঝ শিশুকে মাতৃস্নেহে দিয়ে সারাদিন দেখাশোনা করা, চাট্টিখানি কথা না। কর্মজীবী মায়েদের শিশুরাই সাধারণত ফস্টার কেয়ারে লালিতপালিত হয়ে থাকে। আর এই কাজের জন্যই সম্মানিত হলেন ব্রিটিশ বাংলাদেশি আফিয়া চৌধুরী। যিনি গত ১৩ বছরে প্রায় ৩০ জন শিশুকে নিজের মাতৃস্নেহে প্রতিপালন করার পাশাপাশি শতশত ফস্টার কেয়ারারকে নানাভাবে সাহায্য করেছেন।

তার সেই কাজের স্বীকৃতি হিসাবে পেয়েছেন অত্যন্ত মর্যাদাকর ফস্টারিং নেটওয়ার্কস প্রেসিডেন্টস এওয়ার্ড। ফস্টারিং বা প্রতিপালনের ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদান রাখায় তাকে মর্যাদাকর এই সম্মানে ভূষিত করা হয়।

বুধবার (২৪ অক্টোবর) লন্ডনের ড্রাপারস হলে ইউকে’র শীর্ষস্থানীয় ফস্টারিং চ্যারিটি দ্যা ফস্টারিং নেটওয়ার্ক এর উদ্যোগে আয়োজিত ফস্টারিং এওয়ার্ড বিতরণী অনুষ্ঠানে আফিয়া চৌধুরীর হাতে এই এওয়ার্ড তুলে দেন শিশুবিষয়ক মন্ত্রী নাদিম যাহাউই।

স্বামী কামরুজ এবং ৪ ছেলেকে সাথে নিয়ে আফিয়া চৌধুরী গত ৭ বছর ধরে ৩ ভাইবোনকে এক সাথে প্রতিপালন করছেন। শিশুরা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যাতে পারিবারিক পরিবেশে বসবাস করতে পারে, সেজন্য তারা তাদের ঘরকে বর্ধিত করেছেন। আফিয়া চৌধুরী শুধু যে মাতৃস্নেহে এই তিন বাচ্চাকে প্রতিপালন করছেন, তা নয়, অসংখ্য শিশুর জীবনে তিনি মায়ের স্নেহ মমতা দিয়েছেন এবং টাওয়ার হ্যামলেটস’ ফস্টার কেয়াররাস এসোসিয়েশনের চেয়ার হিসেবে অন্যান্য ফস্টার ফ্যামিলি বা শিশু প্রতিপালনকারী পরিবারগুলোকেও সহকর্মী হিসেবে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। অন্যান্য পরিচর্যাকারীদের কাছ থেকে তিনি গত একবছরে ৪৬০টিরও বেশি ফোন কল পেয়েছেন।

টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের ফস্টার এম্বাসেডর হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে নতুন ফস্টার কেয়ারার নিয়োগে অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত রয়েছেন।

এওয়ার্ড লাভের পর এক প্রতিক্রিয়ায় আফিয়া চৌধুরী বলেন, দ্যা ফস্টারিং নেটওয়ার্কের কাছ থেকে এমন সম্মানজনক পুরস্কার পাওয়ায় আমি ভীষণ খুশি এবং সম্মানিত বোধ করছি। আমি টাওয়ার হ্যামলেটসকে ধন্যবাদ দিতে চাই, যারা বছরের পর বছর ধরে আমার কথা শুনে, প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও সহযোগিতা দিয়েছে এবং অসাধারণ কিছু বাচ্চাকে প্রতিপালন করার সুযোগ দিয়ে আমাকে ভাগ্যবান হওয়ার সুযোগ দিয়েছে এবং এই এওয়ার্ডের জন্য আমার নাম মনোনীত করেছে।

তিনি বলেন, বাচ্চাদের জীবনে পরিবর্তন আনতে আমি ফস্টারিংয়ে এসেছিলাম, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারাই আমার জীবনে পরিবর্তন এনেছে। যারা ফস্টার কেয়ারার হওয়ার বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন, আমি তাদেরকে এগিয়ে আসতে অনুরোধ করছি। নানা কারণে অসহায় হয়ে পড়া বাচ্চাদের প্রতিপালন জীবন বদলে দেয়ার অভিজ্ঞতা, যা আমি আর কোন কিছুর বিনিময়ে পরিবর্তন করবো না।

দ্যা ফস্টারিং নেটওয়ার্ক এর প্রেসিডেন্ট লিবিধ্বথ্রনহিল বলেন, শুধু এই বছরেই সারা দেশে নতুন ৮ হাজার ফস্টার পরিবার দরকার। বিশেষ করে ভাইবোনকে একসাথে লালন পালনে আগ্রহী ফস্টার পরিবারের প্রয়োজনীয়তা খুবই বেশি। মুসলিম কমিউনিটি থেকে আরও অধিক সংখ্যক মানুষ ফস্টার কেয়ারিংয়ে এগিয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ করতে আমাদের আরও অনেক কিছু করতে হবে। ফস্টার কেয়ারার হিসেবেই শুধু নয়, এই কাজে সম্পৃক্ত হতে অন্যদের উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করার ক্ষেত্রেও আফিয়া চৌধুরী একজন অনুকরণীয় মডেল। প্রেসিডেন্টের এওয়ার্ড দিয়ে তাকে সম্মানিত করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।

আফিয়া চৌধুরীকে মনোনয়নকারী টাওয়ার হ্যামলেটসের ফস্টারিং টিম ম্যানেজার, ইশারা তেওয়ারি বলেন, এটা বলা হয়ে থাকে যে, শিশুদের লালন পালনের বিষয়টি আফিয়ার রক্তের সাথে মিশে আছে। তিনি সত্যিকার অর্থেই অসাধারণ একজন ফস্টার কেয়ারার। তিনটি শিশুকে তিনি সযত্নে লালন পালন করায় তারা যেমন আনন্দের সাথে বড় হচ্ছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.