Sylhet Today 24 PRINT

যুদ্ধাপরাধী দল জামাতের প্রচার প্রোপাগান্ডার পুরোটাই ‘হেইট স্পিচ’ : টরন্টোতে মফিদুল হক

টরন্টো সংবাদদাতা |  ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ট্রাস্টি ও বিশিষ্ট লেখক মফিদুল হক বলেছেন, জাতিসংঘসহ পশ্চিমা দেশগুলো এখন হেইট স্পিচ বা ঘৃণা উদ্রেগকারী বক্তব্য কিভাবে বন্ধ করা যায় তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। কেননা তারা মনে করছে হেইট স্পিচ হচ্ছে গণহত্যার জন্য উসকানিমূলক তৎপরতা।

বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় টরন্টোর ডেনফোর্থে রেডহট তন্দুরিতে টরন্টোর সুধী সমাজের সঙ্গে আলোচনাকালে এই মত প্রকাশ করেন। শহরের লেখক, সাংস্কৃতিক কর্মী, সাংবাদিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক উদ্যোগের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এসময় উপস্থিত ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী রাজনৈতিক দল জামাতে ইসলামের প্রচার প্রোপাগান্ডার পুরোটাই ‘হেইট স্পিচ’ বা ঘৃণা উদ্রেককারী বক্তৃতা। তারা বিশেষ গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা উদ্রেককারী বক্তব্য প্রচার করছে। তিনি হেইট স্পিচ এর দায়ে জামাতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

নতুনদেশ ডটকম এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আরী সাগর এর সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডাকসুর সাবেক এজিএস নাসির উদ দোজা। সমাপনী বক্তব্য রাখেন প্রবীন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আজিজুল মালিক।

বাংলাদেশে চলমান মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক গণহত্যা বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করেছে। পশ্চিমা দেশগুলোসহ বিভিন্ন দেশের পন্ডিতরা এই বিচার প্রক্রিয়াকে গুরুত্ব দিচ্ছেন এবং ৭১ এ সংঘটিত গণহত্যা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য উপাত্তের ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

তিনি জানান, ইউরোপের অনেকগুলো সংগঠন এবং পন্ডিত ব্যক্তি বাংলাদেশে সংঘটিত ৭১ এর গণহত্যা নিয়ে কাজ করছেন।

মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে দেশে বিদেশে জামাত সুপরিকল্পিতভাবে জোড়ালো অপপ্রচার চালাচ্ছে। তার বিপরীতে বহির্বিশ্বে প্রচার-প্রোপাগান্ডার লড়াইয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি।

তিনি ৭১ এর গণহত্যা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টিকে জোরালোভাবে আন্তর্জাতিক মহলে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটি বাংলাদেশের জনগণের ন্যায় বিচারের অধিকার- রাইট টু জাস্টিস। এই জন অধিকারের স্বপক্ষে বহির্বিশ্বে আরো বুদ্ধিবৃত্তিক উদ্যোগ প্রয়োজন।

মানবাধিকারের বিরুদ্ধে অপরাধ, এই সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইন এবং বাংলাদেশে চলমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিভিন্ন দিক নিয়ে উপস্থিত সুধীমন্ডলী প্রশ্ন ও মতামত তুলে ধরেন। এতে অংশ নেন প্রবীণ সংগঠন বিদ্যুৎ দে, বাংলা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী সাজ্জাদ আলী, বিজ্ঞান লেখক স্বপন বসু, প্রজন্ম কানাডার ফারহানা আজিম শিউলী, সাংবাদিক মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি সুধান রয় প্রমূখ।

গত সপ্তাহে আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠিত তিনটি দেশের গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বিষয়ক আদালতের বিচারকদের একটি সম্মেলনে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে মফিদুল হক বলেন, বাংলাদেশ ছাড়াও আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়ার মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বিষয়ক আদালতের বিচারক এবং অন্যান্য কলাকুশলীরা এই সম্মেলনে অংশ নেন। বাংলাদেশের চলমান মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি গণহত্যা বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছেন।

মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের এ ট্রাস্টি আরও বলেন, বাংলাদেশে মানবতার বিরুদ্ধে বিচার হচ্ছে ১৯৭৩ সালের আইনের আওতায় যেটি জাতীয় সংসদের মাধ্যমে প্রণীত হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে আন্তর্জাতিকভাবে যে ন্যূরেমবাগ ট্রায়ালের কথা বলা হয়, সেটিও অস্থায়ী আইনে সামরিক বিচার ছিলো। সংসদ কর্তৃক পাশ করা কোনো আইন দিয়ে সেই বিচার হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশে সংসদ কর্তৃক পাশ করা আইনের আওতায় বিচার পরিচালিত হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে যে আইনটি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা সম্পৃক্ত ছিলেন।

দন্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের ফাসিঁ নিয়ে জাতিসংঘ বা পশ্চিমা প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে মফিদুল হক বলেন, মৃত্যুদন্ড জাতিসংঘ অনুমোদন করে না, কিন্তু আমাদের অভ্যন্তরীন আইন অনুমোদন করে। ফলে বাইরের শক্তির বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে বরং বাংলাদেশে ৭১ এর গণহত্যার বিভিষীকাময় চিত্র তুলে ধরে তাদের সাথে দেনদরবার করতে হবে।

তিনি বলেন, ৭১ এ সংঘটিত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারের প্রশ্নে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায়ই আলাপ আলোচনা শুরু হয়েছিলো। জাতিসঙ্গ সচিবালয়ের কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধু এবং ভূট্টোর সঙ্গে দফায় দফায় এ নিয়ে আলোচনা করেছেন। বিচারের কাঠামো এমনকি বিচার প্রক্রিয়া নিয়েও আলাপ আলোচনা অনেকটা এগিয়েছিলো। এসবই হয়েছিলো জাতিসংঘের মধ্যস্থতায়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায়ই জাতিসংঘের এক ধরনের স্বীকৃতি পেয়েছিলো।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভবিষ্যতে রাজনীতি করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেই রাজনীতি করতে হবে। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.