Sylhet Today 24 PRINT

একটি পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র ‘আধিয়ার’

ফায়েজুর রহমান সৈকত |  ২১ ডিসেম্বর, ২০১৫

আধিয়ার শব্দটি আমার কাছে অপরিচিত ছিল। তাই সাইদুল আনাম টুটুলের “আধিয়ার” চলচ্চিত্রটি দেখতে গিয়ে, চলচ্চিত্রের পটভূমির সাথে মিল রেখে ধরে নিয়েছিলাম আধিয়ার শব্দের অর্থ অধিকার। মূলত আধিয়ার অর্থ বর্গাদার।

অর্থাৎ যিনি বা যারা একটি নির্দিষ্ট শর্তে অন্যের মালিকানার জমিতে হাল চাষ করে উৎপন্ন ফসলের অংশ শর্ত মোতাবেক জমির মালিককে প্রদান করে, তাকে আধিয়ার বা বর্গাদার বলা হয়। আধিয়ার জমি চাষাবাদ করলেও প্রকৃতপক্ষে জমির দখল মালিকের দখল বলে গণ্য হয়।

আধিয়ারদের জীবন নিয়েই তৈরি হয়েছে আধিয়ার চলচ্চিত্রটি। এতে আধিয়ারদের জীবন সংগ্রাম এবং তাদের উপর স্থানীয় জোতদার ও জমিদারদের বিভিন্ন অন্যায় অত্যাচার, অবিচার ইত্যাদি ফুটে উঠেছে।

ইতিহাস সম্পর্কে কারোর বিস্তর ধারণা থাকলে নিশ্চয়ই ১৯৪৬-১৯৪৭ সনে বাংলার কৃষক তথা বর্গা চাষিদের তেভাগা আন্দোলনের কথা পড়েছেন। দীর্ঘ দিনের অন্যায় অত্যাচার আর শোষণের প্রতিবাদে জমিদার এবং ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন গড়ে উঠে।

তেভাগা আন্দোলনকে জমিদার আর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন না বলে আমি বলব অধিকার রক্ষার আন্দোলন। এই তেভাগা আন্দোলন, এর সূত্রপাত এবং এর পরিণতি নিয়েই আধিয়ার চলচ্চিত্রটি সাজানো হয়েছে।

আধিয়ার চরিত্রে অভিনয় করেন রাইসুল ইসলাম আসাদ, মামুনুর রশীদ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়দের মত গুণী অভিনেতারা। এবং পুরো চলচ্চিত্রে নায়ক ভূমিকায় আপনারা দেখতে পাবেন তরুণ লিটু আনামকে। এছাড়া স্থানীয় জোতদার চরিত্রে এটিএম শামসুজ্জামান এবং জমিদার আর তার রক্ষিতা চরিত্রে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং চম্পা অভিনয় করেন।

নিজেদের চরিত্রে তারা এতটাই সাবলীল এবং বাস্তব ছিলেন যে আধিয়ার দেখার কালে একবার অবিচার দেখে বিয়োগ ব্যথায় কাতর হয়েছি আরেকবার প্রেম দেখে আদিম সুখে মুচকি হেসেছি। কিন্তু আধিয়ার সর্বদাই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপনাকে জাগ্রত করে রাখবে। গিয়াসউদ্দিন সেলিম আধিয়ারের কাহিনীকে এমন বাস্তব সম্মত ভাবে সাজিয়েছেন যেন মনে হয় “এ আমার নিজেরই গল্প।”

আর সংলাপ? সম্ভবত রংপুর, দিনাজপুরের ভাষায় এর সংলাপ তৈরি হয়েছে। এই অঞ্চলের ভাষার সাথে যাদের প্রথম পরিচয় হবে প্রাথমিক অবস্থায় একটু দুর্বোধ্য মনে হলেও আপনি যখন আধিয়ার দেখা শুরু করবেন তখন যেন মনে হয় “আরে! এতো নিজেরই ভাষা।” আধিয়ার এর পটভূমি ছিল ১৯৪৬-”৪৭ সনের দিকে। এবং নির্মাতা অত্যন্ত সচেতনভাবে এদিকটির প্রতি খেয়াল রেখেছেন।

চলচ্চিত্র দেখার সময় আমার একবারও মনে হয়নি এটি আধুনিক ২০০১ সনে নির্মিত হয়েছে। আধিয়ারের সঙ্গীত আয়োজন ছিল মনোমুগ্ধকর। এর বেশ কয়েকটি গান আপনার হৃদয় ছুঁয়ে যাবে।

সব মিলিয়ে আধিয়ার ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ এবং সফল চলচ্চিত্র। বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পে আধিয়ার নিজে উজ্জ্বল থাকবে এবং অন্যান্য চলচ্চিত্রকে উৎসাহিত করবে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.