Sylhet Today 24 PRINT

ষোলকলা

গোঁসাই পাহ্‌লভী  |  ২৮ এপ্রিল, ২০১৬

দেবাশিষ পাল, গেম, ক্যানভাসে এ্যাক্রেলিক

ষোলজন শিল্পীর তিনটি করে মোট আটচল্লিশটি পেইন্টিং নিয়ে ‘ষোলকলা’ শীর্ষক দলবদ্ধ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে চারুকলা অনুষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়নুল গ্যালারীতে। অংশগ্রহনকারী শিল্পীদের মধ্যে কয়েক জন নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। কেহ সিরামিক স্কাল্পটর হিসাবে, কেহ বা ক্রাফ্টে, কয়েকজন অ্যামেচার শিল্পীও রয়েছেন। সকলেরই মাধ্যম পেইন্টিং। বিষয়ের দিক থেকে অবশ্য বৈচিত্র আছে।

‘ষোলকলা’ শিরোনামের এই প্রদর্শনী বেশ কয়েকটি কারণে গুরুত্বপূর্ন মনে হয়েছে আমাদের কাছে। প্রথমত, অধিকাংশ শিল্পীই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।তাঁরা বিভিন্ন মাধ্যমের শিক্ষক হলেও তাদের এই কাজগুলি একদিকে যেমন শিল্পকর্ম হিসাবে হাজির হয়, অন্যদিকে তাঁদের চিত্রকলা বিষয়ক দক্ষতা, দ্বি-মাত্রিক তলে বিষয়বস্তুর উপস্থাপন বিষয়ক টেকনিক, জ্ঞান- গরিমাও আমাদের কাছে হাজির হয়। কাজগুলি শিল্পকর্ম হিসাবে বিবেচিত হবার বিষয়েও কতগুলো গুণসম্মিলন আছে। ফলে, শিল্পকর্মগুলো থেকে নতুন কোনও পাঠোদ্ধারের ইঙ্গিত আছে কিনা আমরা দেখে নিতে পারি।

পুঁজিবাদী সভ্যতা বিকাশের সাথে সাথে যান্ত্র্রীক শাসন ব্যবস্থার একচেটিয়া অস্তিত্ত্বভাবনার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছে কৌমভিত্তিক ধর্ম ব্যবস্থা। ফলে ধর্ম এবং পুঁজির আভ্যন্তরীন লড়াইয়ে কৌম সংগঠনের বাইরেও ধর্মের প্রাতিষ্ঠানি ক্ষেত্রগুলোতে অভিঘাত সৃষ্টি হয়। ফলে, সন্ত্রাসবাদ নামক তৎপরতা ধর্মের সাথে সেক্যুলারিজমের দ্বন্দ্ব হিসাবে দেখার যে প্রবণতা আমাদের এখানে আছে, খেয়াল করলে দেখবেন, ঐতিহাসিকভাবে এর ভিত্তি ততটা মজবুত নয়। এখানকার অনেক ধর্মবেত্তা সকল ধর্মের সমন্বয় চেয়েছেন, সেই মতে ডায়লগটা ধর্মে ধর্মে ঘটেছে। কিন্তু ডিবেট তো কোনও গ্রন্থ করে না, ডিবেটের কর্তা হচ্ছেন কার্তিক। ফলে, বহুধর্মের সমন্বয়ের ক্ষেত্রে ডায়লগটা ধর্মের ভেতরই সীমাবদ্ধ থেকে গেলো।

পুঁজির সাথে এর কথাবার্তা তো হলো না! আধুনিকতা এইভাবে, ধর্ম সহিংসতার যেভাবে সমাধান দেখেছেন, সমাধান প্রকাশের ধরনটা বেছে নিয়েছেন, সেই পদ্ধতিতে কিছুটা ভুল রয়েছে। যেমন আপনি যদি মান্ডালার ডিজাইনের ভেতর কোনও প্রতীক স্থাপণ করেন, মান্ডালার বিবিধ ফর্মের অর্থ নির্দেশনার কথা বিবেচনায় এনে সে অনুযায়ী সংখ্যা কিংবা বর্ণ বা অক্ষর, কোথাও শব্দও ব্যবহৃত হয়। ফলে, এই যে বর্ণ সংখ্যা বা জ্যামিতির সাথে একটা সম্মিলিত ভাব, এর তন্ত্রগত এবং মন্ত্রগত অর্থপূর্ণতার ধারা গোপনীয়, আব্দুল মোমেন মিল্টন গোপনীয়ত সেই ধারার  থেকে কিছুটা প্রকাশ করেছেন।

আজহারুল ইসলাম চঞ্চল ক্যানভাসে এক্রিলিকে এঁকেছেন ‘হেরিটেজ’ শিরোনামে একটি জানালার কম্পোজিশন। রং এবং টেক্সারের ব্যবহারে পুরনো ক্ষয়িষ্ণু হলেও চিত্রপটে রোমান্টিক আবহ উঁকি দিচ্ছে।

বি এম জামাল হোসেনের ‘রিক্সা’, ফারজানা আহমেদের ‘রিদম অব কালার’ ফারুক আহমাদ মুল্লাহ’র ‘রয়েল বেঙ্গল’ লাইন ড্রইংয়ে এক্সপেশন। মোটা তুলির ব্যবহার এবং কদাচিৎ খুচরো রেখায় বিন্যাস ভারসাম্য রয়েছে।

জি সি ত্রিবেদী’র ‘ফোক’ পেইন্টিং কামরুল হাসানের ড্রইংয়ের কথা মনে করিয়ে দেবে। কান্তিদেব অধিকারীর ‘আনসার্টের লাইফ’, হাঠৎ গজিয়ে ওঠা কোনো লতাগুল্ম কিংবা পরগাছা, মাসুদুর রাহমানের ‘উইন্ডো’,মোহাম্মদ সাব্বির আল রাজি’র টেক্সচার নির্ভর ‘স্টাডি-২৫’, মর্জিয়া সুমি’র ‘আউট অব ক্যানভাস-২’,মুকুল কুমার বারৈ’র ‘ফেস-১’ এ অনেকটা পোর্স্ট ইমপ্রেশনিস্ট গঁগের স্ট্রোক, প্রট্রেটে রংয়ের ব্যবহার অনেকটাই বিয়ন্ড দ্য জেন্ডার।

রেজা আসাদ আল হুদা অনুপমের ‘সানশকড মেলানকোলি’,রবিউল ইসলামের ‘সিকিং ফর রেইন’, ক্যানভাসে ময়ূরের উপস্থিতি, তবে পুরো চিত্রপটে বৃষ্টির অপেক্ষার থেকে রোমান্টিক আবহই বেশি সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ আকুলতাকে ততটা প্রকাশ করেনি।

সাবিন শাহরিয়ারের ‘নেচার-৩’ এবং উম্মে হাবিবার ‘গিটার’ শিরোনামের কাজটিতে ফোক, বিশেষ করে সাবঅলটার্ন কালার ব্যবহারের প্রবণতা হাজির। শিল্পী আব্দুশ শাকুর শাহের প্রভাব দৃষ্ট হয়।

দেবাশিষ পালের ‘গেম’ শিরোনামের কাজটিতে হ্যাঙ্গারে ঝুলন্ত টাই, এবং কেন্দ্রে বিড়ালের উপস্থিতি অনেকটা পরাবাস্তব পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। একই সাথে বাস্তবতার প্রতীকায়ন কাজে কাজেই স্যাটায়ার করতেও ভোলে না।

২৪ তারিখ শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী চলবে আগামী ৩০ এপ্রিল ২০১৬ পর্য়ন্ত।

 

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.