Sylhet Today 24 PRINT

সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ ও অপরাজেয় বাংলা

দ্বোহা চৌধুরী |  ২২ মে, ২০১৭

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব বেশি যাওয়া হয় না। তবুও, যতবার যাই, ততবারই মুগ্ধ হয়ে দেখি একটি ভাস্কর্য, ‌'অপরাজেয় বাংলা'।

ছোটবেলার সাধারণ জ্ঞানের বই পড়েই জেনেছিলাম এ অপরাজেয় বাংলার ভাস্কর সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ। ব্যস, এটুকুই।

জানতাম না সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ আমার শহরেরই সন্তান, জানতাম না এ ভাস্কর্য নির্মাণের ইতিহাস, শুধু ভাস্কর্যটাই তাঁর সৌন্দর্যে মুগ্ধ করেছে, যতবার দেখেছি, ততবারই।।

খুব বেশিদিন হয়নি, বেশ ভালভাবেই জেনেছি সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ সম্পর্ক, তিনি এ শহরেরই মানুষ, এ শহরেই জন্ম নিয়েছিলেন অনেককাল আগে। তাঁর সাথে মাত্র ক'মাস আগে প্রথম পরিচয় হলো, ইচ্ছে ছিলো কথা হবে অনেক; কিন্তু দুর্ভাগ্য।

তাঁর সাথে কথা বলার আগ্রহ থেকেই তাঁর সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করি, আর তখনই অপরাজেয় বাংলা'র নির্মাণ ইতিহাসটাও জেনে নেই। ইচ্ছে ছিল, তাঁর জবানীতে জেনে নিবো ইতিহাস, কিন্তু সুযোগটা আর হলো না, হবেও না।

১৯৭৩ সালে ঢাকসু'র থেকে কলাভবনের সামনে একটি মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়, আর এর দায়িত্ব দেয়া হয় তরুণ ভাস্কর সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদকে। এ ভাস্কর্য নির্মাণে সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদকে সহযোগিতা করেন বদরুল আলম বেনু।

১৯৭৩ থেকে শুরু করে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত টানা কাজ করেন সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ। সে বছরই ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে উদ্বোধন করা হয় ভাস্কর্যটি।

তবে ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ যতটা সহজ ভাবা হয়েছিলো, ততটা সহজ হয়নি। ভাস্কর্য নির্মাণাধীন অবস্থায়ই ১৫ আগস্ট স্বপরিবারে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। রাজনীতির ভোল যায় পাল্টে, নেমে আসে অন্ধকার।

জানা যায়, সামরিক জান্তাদের একটি ট্যাংক নাকি সবসময় তাক করা থাকতো নির্মাণাধীন অপরাজেয় বাংলার দিকে। আর সেই ট্যাংকের বিপরীতে বুকে অসীম সাহস নিয়ে সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ সিনা টান করে কাজ করে গেছেন দিনের পর দিন, রাতের পর রাত।

বর্তমানে যে ভাস্কর্য বিরোধি উচ্চবাচ্য চলছে একদল মৌলবাদীর, ঠিক সে সময়টা পার করে এসেছেন সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ নিজেও। ১৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পরপরই অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসে কিছু মানুষ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই তারা ভাস্কর্যবিরোধি প্রচারণা শুরু করে। তবে তখনকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আজকালকার ভীরু শিক্ষার্থী নয়, তারা দুই ভাস্কর্যবিরোধিকে ধরে মুখে চুনকালি দিয়ে কান ধরিয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরিয়ে প্রতিবাদ করেন।

অপরাজেয় বাংলায় তিনজনের প্রতিকৃতি দেখা যায়। ফাস্ট এইড বাক্স হাতে প্রতিবাদী নারী, কাধে রাইফেল হাতে গ্রামের বিপ্লবী তরুণ আর হাতে রাইফেল নিয়ে শহুরে বীর যুবক।

সেবিকা রূপে প্রতিবাদী নারীর মডেল ছিলেন হাসিনা আহমেদ, হাতে রাইফেল ধারী গ্রামের তরুণের মডেল সৈয়দ হামিদ মকসুদ এবং কাধে রাইফেল নেয়া গ্রামীণ যুবকের মডেল ভাস্কর্য নির্মাণ সহযোগী বদরুল আলম বেনু।

এ ভাস্কর্য নির্মাণাধীন সময়ে এনায়েদ করিম বাবুল নির্মাণ করেন স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি 'চাক্কি'। আর চাক্কি'র চিত্রধারণের মধ্য দিয়েই আত্মপ্রকাশ ঘটে কিংবদন্তী চিত্রগ্রাহক মিশুক মুনিরের।

অপরাজেয় বাংলা  বাঙালির সুদীর্ঘ স্বাধীকার আন্দোলন ও ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধকে নিবিড়ভাবে ফুটিয়ে তোলা গোটা দেশের একটি প্রতিকৃতি।

এ প্রতিকৃতির বাস্তবায়নকারী সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ গত শনিবার (২০ মে) রাত ১১:৪৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। আর অপরাজেয় বাংলা'র মতোই তিনি চিরভাস্কর হয়ে থাকবেন এ দেশের মানুষের কাছে।

(তথ্য ও ছবি অনলাইন থেকে সংগৃহিত)

লেখক : সাংবাদিক

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.