Sylhet Today 24 PRINT

আশিষ আচার্য্যের রং-তুলিতে নারী শক্তির প্রতীক দেবী দুর্গা

শাকিলা ববি, হবিগঞ্জ |  ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

চলছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী হিন্দু ধর্মের সবাই দুর্গাপূজা উদযাপন করছেন। ধর্মীয় উৎসবের মতো একজন মানুষ তার কর্মক্ষেত্রকেও শ্রদ্ধা করেন। অনেকেই নিজ কর্মের মাঝেই ঈশ্বরকে খুঁজে পান। তেমনই একজন হলেন চিত্রশিল্পী আশিষ আচার্য্য। এই দুর্গাপূজায় তিনি তার চিত্রকর্মের মাধ্যমে করেছেন দেবী দুর্গার আরাধনা।

প্রতিটি শিল্পীর প্রতিবাদের ভাষা তার শিল্পকর্ম। বর্তমান সময়ে নারীদের উপর ঘটে যাওয়া অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও এসব হীন কাজ রোধের মাধ্যম হিসেবে আশিষ বেছে নিয়েছেন রং, তুলি আর ক্যানভাস।

‘মা’, ‘জগত জননী’, ‘দুর্গতিনাশিনী’- এই তিন শিরোনামে সেমি এবস্ট্যাক্ট ধরণে জল রং দিয়ে ৩টি চিত্র এঁকেছেন আশিষ আচার্য্য। ছবিগুলো নিয়ে কথা হয় তাঁর সাথে।

‘মা’ শিরোনামের চিত্রটি সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমার মায়ের মধ্যে আমি দেবী দুর্গার স্বরূপ খুঁজে পাই। মাকে উপলব্ধি করেই এই চিত্রটি এঁকেছি। মাকে সারাদিনই দেখি কোন না কোন কাজ করছেন। আমরা ক্লান্ত হয়ে যাই, কিন্তু মাকে কখনো ক্লান্ত হতে দেখিনি। আমার মনে হয়, দেবী দুর্গার ১০ হাতের মতো আমার মায়েরও অদৃশ্যমান ১০টি হাত আছে, যার মাধ্যমে তিনি সব কাজ করেন। সকল মায়ের গৃহস্থালি কাজের শক্তি অনুভব করাতেই আমার এই চিত্র।"

এককালে অসুরের অত্যাচারে স্বর্গের দেবতা ও জগতের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। অসুরের অত্যাচারের কবল থেকে রক্ষার জন্য অনেকবার দেবী দুর্গা নানা রূপে আসেন এই ধরণীতে। একেক সময় একেক নামে এই ধরণীর মানুষের মঙ্গলের জন্য আগমন করে রক্ষা করে আসছেন এই জগতকে। সেই উপলব্ধি থেকেই আশিষ আচার্য্যের চিত্রকর্ম ‘জগত জননী’।

‘জগত জননী’ চিত্রটি নিয়ে তিনি বলেন, "মা, বোন, স্ত্রীসহ কতো কতো রূপ আছে একজন নারীর। এই অনেক রূপের মধ্যে মা হলো একজন নারীর শক্তিশালী রূপ। এ জগতে যতবার পাপ, অনাচার, পাপীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে, ততবার তাদের দমন করতে এই ধরণীতে দেবী দুর্গার আগমন ঘটেছে বিভিন্ন রূপে। সর্বকালে সর্বযুগে অসুরদের বধ করে দেবী দুর্গা এই ধরণীতে তাঁর সন্তানদের রক্ষা করে গেছেন নানা রূপে। নারীর ক্ষমতায়ন থাকলেও বর্তমানে বাংলাদেশের নারীদের উপর চলছে অবর্ণনীয় অত্যাচার। এই চিত্রের মাধ্যমে আমি বর্তমান সময়ের অসুরদের জানান দিতে চাই, প্রতিটি নারীর মধ্যে আছেন একজন মা। কোন নারীকে ধর্ষণ করার আগে একবার চিন্তা করো যে এই নারীই আমাকে জগতের আলো দেখিয়েছেন।"

দুর্গাপূজা হল নারী শক্তির বন্দনা। দেবী দুর্গা হলেন নারী শক্তির প্রতীক। হিন্দু ধর্মশাস্ত্র অনুসারে দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও ভয়-শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা। তাই দেবী দুর্গাকে বলা হয় ‘দুর্গতিনাশিনী’ বা সকল দুঃখ দুর্দশার বিনাশকারিনী। এই বিশ্বাস মনে লালন করেই চিত্রশিল্পী রং-তুলি দিয়ে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছেন চিত্র ‘দুর্গতিনাশিনী’।

চিত্রটি সম্পর্কে আশিষ বলেন, "অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা এবং স্বয়ং যুদ্ধে নেমে স্বর্গে-জগতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দেবী দুর্গা। আমি বিশ্বাস করি, প্রতিটি নারীর ভিতরে একজন দুর্গার বসবাস আছে। তাই যখনই কোন নারী অন্যায়-অত্যাচারের শিকার হবে, তখন যেন সবাই ওই অত্যাচারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। নিজের আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিটি নারীই নিজে যুদ্ধ করে সফলতা পাবে- এই প্রত্যাশা মনে লালন করেই এই চিত্রটি এঁকেছি।’

দুর্গাপূজাকে শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, সামাজিক উৎসবে রূপান্তরের আশা ব্যক্ত করে বর্তমান সমসাময়িক সমস্যাগুলো উত্তরণের উপায় তাঁর শিল্পকর্মে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন আশিষ। তিনি মনে করেন, তাঁর চিত্র দেখে যদি একজন ধর্ষকের ভেতরও নারীদের জন্য সম্মানবোধ সৃষ্টি হয়, তবে সেটাই হবে তাঁর ক্ষুদ্র প্রয়াসের সার্থকতা।

হবিগঞ্জ জেলার বাসিন্দা আশিষ আচার্য্য বর্তমানে বাংলাদেশের তরুণ উদীয়মান চিত্রশিল্পীদের মধ্যে একজন। তিনি ঢাকা আর্ট কলেজে বি.এফ.এ বিভাগে (চূড়ান্ত বর্ষ) অধ্যয়নরত। ২০১৬ সালে তিনি বঙ্গবন্ধু আর্ট এক্সিবিশন ও জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত কাহাল আর্ট ফেয়ারে সম্মানসূচক পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০১৫ এবং ২০১৭ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী আয়োজিত ন্যাশনাল আর্ট এক্সিবিশনে তাঁর চিত্র স্থান পায়।

এছাড়াও দৈনিক ইত্তেফাকের আয়োজনে তরুণ চিত্রশিল্পীদের আঁকা ছবি নিয়ে চিত্র প্রদর্শনী সহ বিভিন্ন জাতীয় চিত্র প্রদর্শনীতে তার আঁকা চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.