Sylhet Today 24 PRINT

নাজমুল হুসাইন : আড়ালের বিরল বাকশিল্পী

বিউটিকুইন শাবানা, ইন্টারন্যাশনাল টেলেন্ট ববিতা, ড্রিমগার্ল সুচরিতা, সুপার স্টার ফারুক, ডেসিং স্টার সোহেল রানা, মাস্টার মেকার এজে মিন্টু- সবগুলো উপাধিই নাজমুল হুসাইনের দেওয়া

অঞ্জন আচার্য  |  ১৭ জানুয়ারী, ২০১৫

নাজমুল হুসাইন

অচেনা নম্বর থেকে আসা কল ধরেন না উনি। তবে আমার মোবাইল নম্বরটি উনার সেটে সেইভ করা আছে বলে ভরসা। ফোন দিলাম। এক, দুই... তিন নম্বর রিংটা বাজতে না বাজতেই ওপাশ থেকে ভেসে এল ভারি কণ্ঠস্বর- হ্যালো! বললাম- দাদা, কেমন আছেন? উত্তর পেলাম- ভালো। এক-দুই কথার পর বললাম- বাসায় আসতে চাই। একটা ছোট্ট ইন্টারভিউ...! আমার কথা শেষ হতে না হতেই উত্তর এল- না, না, প্লিজ! সাক্ষাৎকার-টাক্ষাৎকার দিতে আমি চাই না। সেই একই কথা আর কতবার বলবো? এমনিতে আসতে চাও তো আসতে পারো। কিন্তু ওসব হবে না। আমি বললাম- ঠিক আছে দাদা, তবে না-হয় আড্ডাই দেবো আপনার সাথে। উত্তর পেলাম- চলে এসো। বিজ্ঞাপন শিল্পের কিংবদন্তী কণ্ঠদাতা নাজমুল হুসাইনের সান্নিধ্য পাওয়ার আশায় ছুটলাম উনার বাড়ির উদ্দেশে।

শীতের সন্ধ্যা। নিউ ইস্কাটনের অফিস থেকে হাঁটা পথে পনেরো থেকে কুড়ি মিনিট পথ। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ব্যস্ততম ফুটপাথের রাস্তা ধরে হাঁটছি, পাশ দিয়ে সাঁই সাঁই করে ছুটে যাচ্ছে গাড়ি। সেই সাথে হাঁটছে ঘরে ফেরা ক্লান্ত মানুষও। মানুষের ভিড়ে হাঁটতে হাঁটতে এসে পৌঁছাই ফার্মগেটের তেজতুরি বাজারে। সেখানকার এক নীরব গলি পথ ধরে কিছুটা এগুলোই উনার বাড়ি। পাঁচ তলা বাড়িটির নিচতলাতেই থাকেন তিনি, একা। দরজার পাশের কলিং বেল চেপে খানিকক্ষণের অপেক্ষা করি। দরজা খুলে দাঁড়ালেন উনি। পেলাম ঘরে প্রবেশের অনুমতি। 

বসার ঘরের সোফায় বসতে বসতে দেখি শারদীয় দেশ পত্রিকার কোনো একটি পুরোনো পূজা সংখ্যা উল্টে পড়ে আছে সোফার ওপর। বুঝলাম, সেটাই পড়ছিলেন তিনি। দু-একটা সৌজন্যমূলক কথা দিয়ে আলাপপর্ব শুরু। তারপর কত বিষয়-আশয় চলে এল দুজনার কথোপকথনে বুঝতেই পারিনি। উনিও ফিরে গেলেন পুরোনো সেইসব ধূসর-স্বর্ণালী দিনে। বললেন, রেডিও প্রতি উনার অজান্তে প্রেমের পড়ার কথা : ছেলেবেলার কথা। 

আমার এক চাচা থাকতেন আমাদের বাড়িতে। উনি ছিলেন রেডিও অনুষ্ঠানের একনিষ্ঠ শ্রোতা। মনোযোগ দিয়ে শুনতেন ‘রেডিও সিলন’, বর্তমানে যা ‘শ্রীলংকা ব্রডকাস্টিং করপোরেশন’ নামে পরিচিত। যাই হোক, ওই চাচা এমনভাবে রেডিও শুনতেন যে আমার মাও বিরক্ত হয়ে যেতেন। মায়ের এ বিরক্তির কারণ অবশ্য ছিল। মা শুনতে চাইতেন কলকাতার নাটক, ঢাকার নাটক- এসব। তবে রেডিও সিলনের অনুষ্ঠান বেশিরভাগ সময় শুরু হতো সকাল ৮টার দিকে। ওই সময়ে মা-খালারা রেডিও শুনতেন না। উনারা শুনতেন সাধারণত বিকেল বা রাতে। এই সুযোগটি নিতেন চাচা। তো, চাচার দেখাদেখি আমিও শুরু করলাম রেডিও নাড়াচাড়া। শিখে গেলাম রেডিও টিউনিং।” 

১৯৬৮ সাল। তিনি ভর্তি হন জগন্নাথ কলেজে। কলেজের এক ভবনের ক্লাস শেষে অন্য ভবনে ফাঁকে হিন্দি ভাষায় হঠাৎ হঠাৎ বলে উঠতেন ‘আ রাহা হ্যায়...!’ এরপর বাংলায় বিজ্ঞাপনের আদলে বলতেন, ‘প্রস্তুতকারক বেঙ্গল কেমিক্যাল’। কেউ কেউ ভাবতেন মাথায় কোনো গণ্ডগোল আছে তাঁর। সেই পাগলামির টানেই হয়তো একটা জীবন পার করে দিলেন তিনি রেডিও’র সঙ্গে। 

স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পী ছিলেন নাজমুল হুসাইন। অস্ত্র হাতে নয়, বরং কণ্ঠযুদ্ধে শরিক হন তিনি। উপস্থাপনা করেছেন অনুষ্ঠান, অভিনয় করেছেন বিভিন্ন নাটকে। নাটকে কখনো রাজাকার হয়েছেন, কখনো-বা মুক্তিযোদ্ধা। আবার কখনো নায়কের ভূমিকায়, কখনো-বা মোড়ল-মাতব্বরের চরিত্রে করেছেন অভিনয়। সে সময় বেতারে উনার কতখানি ভূমিকা ছিল তা লিপিবদ্ধ আছে লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরীর লেখা “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম” নামের মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক গ্রন্থে। কণ্ঠযোদ্ধা এই প্রচারবিমুখ মানুষটির কাছে যখন জানতে চাওয়া হয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে, তখন অনেকটা খেদের সঙ্গে বলেন- “নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে আমি কোনো সরকারের কাছেই কোনোদিন কোনো আবেদন করিনি। কারণ মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি পেলে আমার আর্থসামাজিক অবস্থা আমূল পাল্টে যাবে- এমনটা নয়। কেননা সরকারি ভাতার নামে মুক্তিযোদ্ধাদের যা দেওয়া হয় তা তো ভিক্ষারই নামান্তর। আমি রাষ্ট্রের কাছ থেকে কোনো ভিক্ষা নিতে চাই না”। 

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেই পরিচয় হয় নাট্যকার মামুনুর রশীদের সঙ্গে। স্বাধীন বাংলায় ফিরেও সেই মানুষটির নেতৃত্বে গঠন করেন ‘আরণ্যক নাট্যদল’। সেই দলের হয়ে অভিনয় করেছেন ‘পশ্চিমের সিঁড়ি’ এবং মুনীর চৌধুরীর আলোচিত নাটক ‘কবর’সহ অনেক নাটকে। 

৭২ সালের ঘটনা। মামুনুর রশীদের কাহিনী অবলম্বনের নির্মিত হয় চলচ্চিত্র ‘পায়ে চলা পথ’। সেই ছবির মধ্য দিয়েই নাজমুল হুসাইনের অভিনয়ের পথ চলা। উনার মুখ থেকেই না হয় শোনা যাক সেই গল্প- মামুনুর রশীদ ভাই একজন প্রডিউসর পেলেন যিনি সিনেমা বানাতে চান। কাহিনী লিখবেন মামুন ভাই নিজেই। আমার ভাবনায় তখন সিনেমা জগতে যাবার। যদিও ওই জগৎটা আমার কাছে নতুন কিছু ছিল না। পরিচালক ও অভিনেতা খান আতাউর রহমান (খান আতা) আমার সেজো মামা। আমার আপন খালাতো বোন আতিয়া তখন নায়িকা (বিন্দু থেকে বৃত্ত, শনিবারের চিঠি ইত্যাদি)। তাঁদের মাধ্যমে সিনেমায় আসা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। মামা শুনলে তো রেগে একাকার হয়ে যেতেন। বলতেন- লেখাপড়ায় মন দে। যাই হোক, অনেকটা গোপনে থেকে গেলাম মামুন ভাইয়ের সঙ্গেই।

এবারের ঘটনা ১৯৭৫ সালে। একটি ছবি এল সেসময়। সেই ছবির কাহিনী নিয়ে একদিন উপস্থাপনার ভঙ্গিতে নিজে নিজেই আওড়াতে থাকেন তিনি। ছবিটির পরিচালক ছিলেন ইবনে মিজান। উনি তাঁকে ডেকে বললেন, এই ছেলে তুমি তো ছবির ধারাভাষ্য হিন্দিতে বললে। তিনি বললেন- জি স্যার। পরিচালক বললেন, একইভাবে বাংলায় বলো তো দেখি।

 এভাবে ইবনে মিজানের ‘দুই রাজকুমার’ সিনেমায় প্রথম কণ্ঠ দিলেন তিনি। সেই সাথে লেখা হলো ইতিহাস। ৩০ সেকেন্ডের সেই বিজ্ঞাপনটিই বাংলাদেশের প্রথম কোনো ছায়াছবির বিজ্ঞাপন আজও অম্লান হয়ে আছে। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৪ বছর। ওই বয়সে কণ্ঠ তেমন মসৃণ ছিল না। তার ওপর উচ্চারণটা ছিল হিন্দির ঢঙে। বিষয়টি হয়তো শ্রোতাদের কাছে নতুন বলে মনে হয়েছিল। যেমন- ‘সংগীত’  উচ্চারণ তাঁর ভালো করেই ছিল জানা। তারপরেও তিনি বলতেন ‘ছংগীত’, সত্য সাহাকে বলতেন ‘সাত্য শাহা’।

এদিকে সাড়া পড়ে গেল শ্রোতামহলে, অন্যদিকে সাড়া পড়ে সিনেমার দর্শক-প্রযোজকের মধ্যেও। ছবিটিও হিট হয়। তিনি বলেন- হয়তো ছবির গুণেই সেটি হিট হতোই, তারপরও আমার কণ্ঠ হয়তো মিলে গেছে জনপ্রিয়তার পথ সহজ করতে। এছাড়া আমজাদ হোসেন সিনেমা করছেন ‘নয়নমনি’ নামে। আমজাদ ভাইকে বললাম- ভাই, রেডিও সিলনে আমিন সাহানি নামে এক ভদ্রলোক বোম্বে থেকে হিন্দিতে ১৫ মিনিটের অনুষ্ঠান করেন। আপনি চাইলে আপনার সিনেমারও বিজ্ঞাপন এভাবে হতে পারে।

এরপর এ ব্যাপারে একটি স্ক্রিপ্ট দাঁড় করালাম। ওই সিনেমার শ্যুটিংয়ে আমিও ছিলাম। তাই সিনেমাটির আদ্যোপান্ত আমার জানা ছিল। এ সিনেমার বিজ্ঞাপনের রেকর্ডিং হলো ইপসা রেকর্ডিংয়ে। এটা বলা যায় বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি রেকর্ডিং স্টুডিও। এরপর স্ক্রিপ্টটি টেলিসামাদ, আবদুল আজিজ, আমজাদ হোসেন ও আমি ভাগ করে শুরু করলাম। লেখাটা ছিল আমার। সিনেমার প্রথম বিজ্ঞাপন, সিনেমার প্রথম রেডিও অনুষ্ঠান এখান থেকেই শুরু। দুই মাস চলেছিল অনুষ্ঠানটি। সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ল ছবিটার নামডাক।

পরের ছবি ‘দ্য রেইন’। ওই ছবির পরিচালক ছিলেন এসএম শফি, বেশ রাশভারী লোক। এবার তিনি প্রস্তাব দিলেন নাজমুল হুসাইনকে। কাজটা করলেন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। ১৯৭৫ থেকে ৭৮ সাল পর্যন্ত সিনেমার সব বিজ্ঞাপন করতে হয়েছে তাঁকে। প্রতি সপ্তাহে তখন মুক্তি পেতো দুটো করে সিনেমা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন- বেড়ে গেল কাজের চাপ। আর পারছিলাম না। এরকম একসময়ে এফ কবির এলেন (এখন প্রয়াত)। লোকটির ছিল অনেক হামবড়া ভাব। তিনি আমাকে প্রস্তাব দিলেন কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে নিজের সিনেমা ‘রাজমহল’-এর বিজ্ঞাপনের রেকর্ড করে দিতে। আমার হাতে তখন সময় খুব কম ছিল, তা ছাড়া স্ক্রিপ্টও তৈরি ছিল না। সেই কাজটি করা হয়নি। এফ কবির আমার প্রতি বিরক্ত হলেন, মনে মনে অপমানিত বোধ করলেন হয়তো। 

এরপর তিনি ওই কাজটি দিলেন মাজহারুল ইসলামকে। মাজহার ভাই প্রথম বিজ্ঞাপন করলেন ‘রাজমহল’ সিনেমার। তখন তিনি তখন রেডিওতে কাজ করতেন। বেশকিছু রেডিও নাটকে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের জগতে এসে তিনি কণ্ঠটাকে নষ্ট করে ফেললেন।

১৯৭৮ সাল। বাংলাদেশ বেতারে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের সফল স্পন্সরড প্রোগ্রাম প্রথম শুরু করেন নাজমুল হুসাইন। নাম ছিল ‘শনিবারের সুর’। এটাই বাণিজ্যিক কার্যক্রমের প্রথম অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানের প্রতিটি আসরে তিনি বাছাই করে নিতেন একটা শব্দ। যেমন- ‘সুখ’, ‘ভালোবাসা’, ‘প্রেম’ ইত্যাদি। বিষয়ভিত্তিক সেই কথার ফাঁকে ফাঁকে শোনানো হতো গান। পুরো অনুষ্ঠানে গান বাজানো হতো ৫টি। কখনো কখনো শোনানো হতো কোনো গানের অংশ বিশেষ, এক অন্তরা। সবই ছিল ওই নির্ধারিত বিষয়ের ওপর গান। 

অল্প দিনেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেল ‘শনিবারের সুর’ অনুষ্ঠানটি। এরপর ‘সুরে সুরে কেয়া সুপার বিউটি সোপ’, ‘হাঁসমার্কা নারিকেল তেল গানের দোলা’, ‘অভিযাত্রী সুরবিহার’ বাংলার মানুষের শ্রবণে ও মনে আজও গেঁথে আছে। 

টানা ১১ বছর করেছেন ‘হেনোলাক্স সুরের পরশ’ বিজ্ঞাপনে। ‘গানে গানে গন্ধরাজ কেশতেল’ ও ‘হাঁসমার্কা নারিকেল তেল গানের দোলা’ চলছে এখনও। এছাড়া কয়েক হাজার টিভি বিজ্ঞাপনে দিয়েছেন কণ্ঠ। চলচ্চিত্র তারকাদেরকে তিনিই করলেন বিশেষণে অলংকিত। তাঁর দেওয়া বহুল আলোচিত উপাধিগুলো আজও মুখে মুখে ফেরে। বিউটিকুইন শাবানা, ইন্টারন্যাশনাল টেলেন্ট ববিতা, ড্রিমগার্ল সুচরিতা, সুপার স্টার ফারুক, ডেসিং স্টার সোহেল রানা, মাস্টার মেকার এজে মিন্টু, গোল্ডেন জুবিলি ডিরেক্টর ইবনে মিজান, অর্থাৎ ‘নায়করাজ রাজ্জাক’ ছাড়া বাকি প্রায় সব চলচ্চিত্র তারকারই নামের আগের বিশেষণটি নাজমুল হুসাইনের দেওয়া। ‘ইতিহাস’, ‘বর্তমান’, ‘যন্ত্রণা’, ‘বড় সাহেব’, ‘অশান্তি’, ‘মহানগর’- এমন সব জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে তিনি করেছেন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়।

প্রযোজনা করেছেন সালমান শাহ-শাবনূর অভিনীত ‘রঙিন সুজন-সখী’ ছবিটি। চলচ্চিত্র জগতের শুরুর দিকে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন বেবী ইসলামের ‘চরিত্রহীন’, মোহাম্মদ সাঈদের ‘সাধু-শয়তান’, আমজাদ হোসেনের ‘বাংলার মুখ’ (অপ্রকাশিত)সহ অনেক গুণী পরিচালকের সঙ্গে। বাদল রহমানের ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’ ছবিটিতে কাজ করেন প্রধান সহকারী হিসেবে। 

১৯৯১ সালে গড়ে তুলেন ‘ভাইব্রেশন টু’ নামে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা। সেসময় চলচ্চিত্রের বিজ্ঞাপনের প্রায় ৭০ ভাগ কাজ ওই সংস্থা থেকেই হতো। এমন এক বর্ণাঢ্য ও ব্যস্ততম জীবন অতিবাহিত করেছেন নাজমুল হুসাইন। জীবনের এ প্রান্তে এসে এখন তাঁর সময় কাটে কেবলই বই পড়ে, টিভি দেখে, বিদেশি চলচ্চিত্র দেখে, লেখালেখি করে, ইন্টারনেট ব্রাউজিং করে এবং দুটো রেডিও অনুষ্ঠান করে। 

গত ৩৯ বছর ধরে যে মানুষটি রেডিও’র স্পিকারের মতো জড়িয়ে আছেন বেতারের সাথে, সেই মানুষটিকেই অবহেলাভরে দেখতে দেখা গেছে বেতারের হীরকজয়ন্তী উৎসবে। নিতান্ত সৌজন্যতায় পাঠানো হয় উনাকে উৎসবের কার্ড। ফোন দিয়ে জানানোর ভদ্রতাটুকুও কেউ বোধ করেননি। সংবেদনশীল এই শিল্পী মানুষটিকে তাই দুঃখভারাক্রান্ত কণ্ঠে বলতে শোনা যায়- বেতারের হীরক জয়ন্তী সম্পর্কে পত্রপত্রিকা পড়ে সবাই যা জানে, আমিও তাই জানি। আমার কাছে এ বিষয়টা বিভ্রান্তকর বলে মনে হয়। এখানে ১৯৩৯ সাল থেকে বেতারের জন্মসাল ধরা হয়েছে। কিন্তু সেসময় তো আজকের এ বেতার ছিল ‘অলইন্ডিয়া রেডিও’। এরপর সেটি হলো ‘রেডিও পাকিস্তান’। স্বাধীনতার পর এর নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ বেতার। সেই হিসেবে এর বয়স তো ৪৩ বছর মাত্র। তো সেই উৎসবে একবারের জন্যেও আমাকে ডাকার প্রয়োজন মনে করেননি বেতার কর্তৃপক্ষ। অথচ ‘সিলভার জুবিলি’ উৎসবে পুরো অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ছিল আমার ওপরই। তাদের কথা না হয় বাদই দিলাম। বেতার তো আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বন্দি। কিন্তু দেশে এত এত সব টেলিভিশন চ্যানেল হলো। সেখানে কত রকম অনুষ্ঠান হচ্ছে। অথচ আজ পর্যন্ত একটা অনুষ্ঠানেও উপস্থাপনা করার সুযোগ পেলাম না। অন্যদিকে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে। সেই ছবি গণমানুষের কাছে পৌঁছাতে বিজ্ঞাপনের কোনো প্রয়াসও দেখি না।

কথা শেষ। এবার উঠবো উঠবো করছিলাম। এমন সময় উনার একটি কথায় মনটা ধক করে উঠলো। বললেন- ‘চাকরি করিনি, ব্যবসা যা করেছিলাম তাও ছিল ক্ষণস্থায়ী। হিসেবী না বলে, টাকা-পয়সাও সঞ্চয় করিনি ব্যাংকে। জীবনে সঞ্চয় বলতে আমার এই গলটাই আছে। আজ যদি আমার এ গলাটা নষ্ট হয়ে যায়, কাল থেকে আমি বেকার’। 


অঞ্জন আচার্য: কবি, সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.