Sylhet Today 24 PRINT

বাংলাদেশের মঞ্চ নাটক তরুণদের কতটা টানতে পারছে

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২২ জুলাই, ২০১৫

বাংলাদেশে টেলিভিশন নাটকে অভিনয় শিল্পী তৈরির জন্য মঞ্চ নাটক ছিল একটি বড় ক্ষেত্র। কিন্তু এক দশকে মঞ্চ নাটকের প্রতি তরুণ অভিনয় শিল্পীদের আগ্রহ অনেকটাই কমে গেছে। নাটক নির্মাতারা বলছেন মঞ্চের প্রতি তরুণ অভিনয় শিল্পীদের এই অনাগ্রহ টেলিভিশন নাটকের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

তাছাড়া বাংলাদেশের মঞ্চ নাটক ঢাকা শহরের কয়েকটি অডিটোরিয়ামের গণ্ডি পেরিয়ে তেমন একটা বিস্তার লাভ করতে পারেনি। থিয়েটারের প্রসঙ্গ উঠলেই ঘুরে ফিরে কয়েকটি দলের কথা আসে। মঞ্চ নাটকের পরিবেশনাও ঢাকা শহরের কয়েকটি অডিটোরিয়ামের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

মঞ্চ নাটকে দর্শকের সংখ্যা বরাবরই সীমিত ছিল। কিন্তু সেই সীমিত সংখ্যক দর্শকের মধ্যেও থিয়েটার নিয়ে আগ্রহে ভাটা পড়েছে। এক সময় ঢাকায় নিয়মিত মঞ্চ নাটক দেখতেন বেসরকারি চাকুরীজীবী জহির রায়হান। কিন্তু গত বেশ ক’বছর তিনি আর দেখছেন না।

মি. রায়হান বলেন, “এই যানজটের শহরে অফিস শেষ করে সন্ধ্যেয় থিয়েটার দেখা হয় না। কারণ সবার অফিস তো আর বেইলি রোড অথবা শিল্পকলার আশেপাশে না।”

তাছাড়া এখন টেলিভিশনের ব্যাপক প্রসার এবং ইন্টারনেটের কারণে বিনোদনের নানা ধরনের মাধ্যম তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশে মঞ্চ নাটকের দর্শক শহরের শিক্ষিত-মধ্যবিত্তের কাছেই সীমাবদ্ধ ছিল। সেই গণ্ডি থেকে মঞ্চ নাটক আরও বিস্তৃত হতে পারেনি। এর একটি বড় কারণ দ্রুত বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। মঞ্চ ও টেলিভিশন নাটকে অত্যন্ত জনপ্রিয় অভিনেতা তারিক আনাম খান। তার নিজেরও মঞ্চ নাটকের দল রয়েছে।

মি. আনাম মনে করেন বাংলাদেশের মঞ্চ নাটক এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। বাংলাদেশে থিয়েটারের চর্চা শহরকেন্দ্রিক রয়ে গেছে বলে তিনি মনে করেন।

মি. আনাম বলেন, “পুরনো আমলে কোলকাতায় বলা হতো শহুরে বাবুদের থিয়েটার। সেটা বাবুদের থিয়েটারই রয়ে গেছে। ” মঞ্চ নাটক বিস্তৃত না হবার পেছনে একটি বড় কারণ মনে করা হয় দ্রুত টেলিভিশনের বিস্তারকে।

দর্শকরা যেমন টেলিভিশনের দিকে ঝুঁকেছেন তেমনি অভিনয় শিল্পীরাও এখন টেলিভিশন নাটকে বেশি আগ্রহী। ফলে মঞ্চ নাটক সেই সীমিত পরিসরেই রয়ে গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলার অধ্যাপক ইসরাফিল শাহিন বলেন টেলিভিশন নাটকে দ্রুত পরিচিতি পাওয়া যেমন সম্ভব তেমনি অর্থ উপার্জনও সম্ভব। বাণিজ্যিক কারণেই মঞ্চ নাটক পিছিয়ে পড়েছে বলে তিনি মনে করেন।

অভিনেতা তারিক আনাম খানও মনে করেন মঞ্চ নাটক কখনোই অর্থ উপার্জনের জায়গা ছিল না। যারা মঞ্চে অভিনয় করেন তারা নিজের আবেগ এবং তাগিদ থেকেই অভিনয় করেন। একটি নাটক মঞ্চস্থ করতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়, শুধু টিকিট বিক্রি থেকে তা উঠে আসে না। অন্যদিকে এখানে বেসরকারি স্পন্সরও তেমন একটা নেই । সেজন্য অনেক অভিনয় শিল্পী মঞ্চে কাজ করার চেয়ে টেলিভিশন নাটকে কাজ করতে আগ্রহী।

বাংলাদেশে এখন বহু বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল হওয়ায় প্রতিদিন গড়ে ৫০টির মতো নাটক প্রচারিত হচ্ছে। সেজন্য প্রচুর অভিনয় শিল্পীর চাহিদা তৈরি হয়েছে। কিন্তু মঞ্চ নাটকে অনাগ্রহের কারণে দক্ষ অভিনয় শিল্পী তৈরি হচ্ছে না বলে নির্মাতারা মনে করেন। অর্থাৎ মঞ্চ নাটকের সংকট টেলিভিশন নাটককে প্রভাবিত করছে।

বাংলাদেশে টেলিভিশন যুগের সূচনা থেকেই আছেন নওয়াজিশ আলী খান। বাংলাদেশে টেলিভিশনে তিনি বহু জনপ্রিয় নাটক প্রযোজনা করেছেন। এখন তিনি বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল এটিএন বাংলার অন্যতম কর্ণধার। মি. খান বলেন, “অভিনয় মানেই শুধু ডায়ালগ বলা নয়। অভিনয় মানে চরিত্রের সাথে মিশে যাওয়া।”

মঞ্চনাটক থেকে যেসব অভিনয় শিল্পী আসেন তারা চরিত্রের সাথে সহজেই মিশে যেতে পারেন। তিনি বলেন এখন যারা অভিনয় করছে তাদের তাদের অনেকেই চরিত্রের সাথে মিশতে পারেন না। সেজন্য একজন ব্যক্তি ৫০টি নাটক করলেও সেখানে চরিত্র ফুটে উঠে না। এসব নাটকে ব্যক্তিকেই দেখা যায়, চরিত্র দেখা যায়না বলে মি. খান উল্লেখ করেন।

কিন্তু মঞ্চে কাজ না করেও টেলিভিশন নাটকে অনেকেই জনপ্রিয় হয়েছেন। মূলত বিভিন্ন রিয়েলিটি শো’র মাধ্যমে তারা উঠে এসেছেন কিংবা অন্য কোন পেশা থেকে তারা নাটকের জগতে এসেছেন। দর্শকদের কাছেও তাদের গ্রহণযোগ্যতা ভালো। এরকম একজন অভিনয় শিল্পী ও মডেল বাঁধন। তিনি মনে করেন এখন সময় ও দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টেছে।

অভিনয় শিল্পী বাঁধন বলেন, “আপনি যদি মন থেকে চান তাহলে আপনি যেখান থেকেই আসেন না কেন, আপনি ভালো করতে পারবেন।”

তিনি বলেন- এখন বিনোদনের বহু মাধ্যম তৈরি হওয়াতে দর্শকরাও মঞ্চ নাটক থেকে অনেকটাই সরে এসেছে।

তিনি বলেন, “এখন অভিনয় করে আমি টাকা উপার্জন করতে পারছি, সংসার চালাতে পারছি। এটা আগে কারো মাথায়ই আসেনি।তখন তাদের চিন্তা-ভাবনা আর এখন আমাদের চিন্তা ভাবনা কখনোই মিলবে না।”

এই অভিনয় শিল্পী বলেন আগে যারা মঞ্চ নাটকের সাথে জড়িত ছিলেন তখন তারা সবাই ‘বিখ্যাত মানুষ’ ছিলেন।

অনেক দর্শক মঞ্চে তাদের অভিনয় দেখার জন্য ভিড় করতো। বাঁধন মনে করেন এখন সেই বিষয়টি আর নেই। সেক্ষেত্রে শুধু নতুনদের দোষ দেয়া যাবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ঢাকায় এখনো নামকরা দলের নাটক মঞ্চস্থ হলে দর্শকরা অডিটোরিয়ামে ভিড় করছে। তাছাড়া বাংলাদেশের কিছু দল দেশের বাইরে গিয়েও নাটক করছে।

অভিনেতা তারিক আনাম খান মনে করেন সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে মঞ্চনাটক আরও বিস্তৃত হবে।

মি. আনাম বলেন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মঞ্চ নাটকের আরও আধুনিক অডিটোরিয়াম গড়ে তুললে মঞ্চ নাটককে মানুষের আরও কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। কিন্তু টেলিভিশনের এই যুগে নতুনরা মঞ্চের প্রতি কতটা ঝুঁকবে সেটি নিয়ে অনেকের সন্দেহ আছে। বিবিসি বাংলা।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.