Sylhet Today 24 PRINT

কামাল চৌধুরীর কবিতায় মনোমুগ্ধকর বিকেল

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯

পৌষ বিকেল। বাইরে হিম হাওয়া। এমন শীত সন্ধ্যায় কবিতায়, কথায় দারুণ উষ্ণতা ছড়ালেন কবি কামাল চৌধুরী। তাকে ঘিরে সোমবার সিলেটে অনুষ্ঠিত হলো একক কবিতা পাঠের আসর। প্রকাশনা সংস্থা চৈতন্যের আয়োজনে অনুষ্ঠানে প্রায় আড়াই ঘন্টাজুড়ে শ্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখেন সত্তরের দশকের এ শক্তিমান কবি। তার কথায় উঠে এলো বিগত দশকের নানা উল্লেখযোগ্য দিক।

সোমবার বেলা সাড়ে পাঁচটায় শুরু হয় অনুষ্ঠান। প্রথমেই কবি কামাল চৌধুরীকে চৈতন্যের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। এ সময় কবির হাতে সম্মাননা-স্মারক তুলে দেন কবি ও মুক্তিযোদ্ধা তুষার কর। এরপর কবি কামাল চৌধুরীর সৃষ্টিকর্ম নিয়ে প্রবন্ধ পাঠ করেন কবি জাকির জাফরান। পরে স্বাগত বক্তব্য দেন চৈতন্যের কর্ণধার রাজীব চৌধুরী।

শুরুতেই নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে কবি কামাল চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সবাই অতৃপ্ত কবিতা পথের পথিক। কখনোবা কবিকে দিগন্তেও পৌছাতে হয়। একজন কবিকে দিগন্তের কাছে পৌছাতে হলে দিগন্তকে স্পর্শ করতে হবে। থাকতে হবে অতৃপ্তি। এই অতৃপ্তি যদি না থাকে তবে কবিতা পথের যাত্রা খুব একটা মসৃণ হয় না।

আলোচনায় সত্তরের দশকের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, সত্তরের দশকে কবিতা লেখা শুরু করেছিলাম। এই সময়টা মনে হয় যেন একটা মিলনমেলা ছিল। দশকটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ না হলেও কবিকে সময়ের আলোকে চিহ্নিত করার জন্য এই দশক শব্দটির ব্যবহার করে থাকি। এই কয়েকটি দশক যেমন পঞ্চাশ, ষাট এবং সত্তর এগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি সম্পর্কযুক্ত। সত্তরের দশকে অনেক শক্তিশালি লেখা পেয়েছিলাম আমরা। এই দশকে আমরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সাম্যবাদের কবিতা লিখেছিলাম।’

কবিতায় আঘাত করার সাহস আনতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয় তখন যদি কবিরা প্রেমের কবিতা লিখতেন, তাহলে সেটা মাননসই হতো না। কবিতার মাধ্যমে আঘাত করার সাহস কবিদের থাকতে হবে। কারণ, কবি হচ্ছেন সেই মানুষ যিনি তাঁর আত্মজীবনী প্রতিমুহূর্তে লিখে থাকেন। আমরা যে পথ দিয়ে হাটি, যা দেখি, যে অভিজ্ঞতা অর্জন করি এইসবই আমাদের আত্মজীবনী। একজন কবিকে আত্মজীবনী থেকে কবিতা ধারণ করতে হবে। কবিকে শিল্পস্বত্ত এবং বস্তুস্বত্ত এই দুই স্বত্তের সমন্বয় ঘটাতে হয়। এই সমন্বয় ঘটিয়েই কবিতা পথে যাত্রা করতে হয়। কাজটা কঠিন, কারণ এই অতৃপ্ত যাত্রা যে যাত্রায় কেউ কেউ সফল হয়, অনেকেই ব্যর্থ হয়।’

পরে কামাল চৌধুরী তাঁর লেখা কবিতা ‘দর্শক’, ‘শেষ রাতের ট্রেন’, ‘ছাত্রীনিবাস’সহ আরও কয়েকটি জনপ্রিয় কবিতা আবৃত্তি করেন কবি কামাল চৌধুরী। কবি কামাল চৌধুরীর পরিচিতি পাঠ ও তাঁর লেখা নিয়ে আলোচনা করেন কবি জাকির জাফরান। আলোচনায় তিনি বলেন, অনেক প্রতিবাদি কবিকে আমরা অনেক সময় দেখে থাকি, তবে কবি কামাল চৌধুরীর মতো সাহসী কবিকে পাওয়া যাবে না। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারিরা যখন ক্ষমতায়, তখনও তিনি এই বিষয়ে লিখে গেছেন। এই জন্যই কবি কামাল চৌধুরী বাংলা সাহিত্যে একটি বিশেষ স্থান করে নিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, আধুনিক কবিতার বৈশিষ্টের সঙ্গে কামাল চৌধুরীর লেখার ধরণের অমিল রয়েছে। তারপরও নিজস্ব লেখার ভঙ্গিমায় তিনি একজন আধুনিক কবি। সেই সঙ্গে তিনি একজন প্রেমের কবি। তাঁর কবিতায় পোস্ট মর্ডানিজম বা উত্তর আধুনিকায়নের ছোঁয়া পাওয়া যায়। এই লেখার মূল বার্তা হলো শেকড়ের কাছে ফিরে যাওয়া। কামাল চৌধুরীর সব কবিতায় শেকড়ের টান রয়েছে।
আলোচনা অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন চৈতন্যের সত্তাধিকারী রাজীব চৌধুরী। ফাহমিদা খান ঊর্মির সঞ্চালনায় কবি কামাল চৌধুরীর কবিতা ‘ভ্রমণ’ ও ‘সকলেই যোদ্ধা নয়’ কবিতা দুটি পাঠ করেন আবৃত্তিশিল্পী আবু বকর আল আমিন।

কবিকে নানা বিষয়ে প্রশ্ন করেন কবি এ কে শেরাম, লিডিং ইউনিভার্সিটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মোস্তাক আহমাদ দীন, সঞ্জয় নাথ সঞ্জু, আশফাক রহমান প্রমুখ। সবশেষে কবির হাতে উপহার হিসেবে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটি ও মনিপুরি চাদর তুলে দেন লোকসংস্কৃতি গবেষক সুমনকুমার দাশ ও কবি প্রণবকান্তি দেব।
সূত্র: সিলেট মিরর

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.