Sylhet Today 24 PRINT

শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের মামলা ❛জিঘাংসামূলক নিষ্ঠুর আচরণ❜

শাবিপ্রবির ২৭৬ প্রাক্তন শিক্ষার্থীর বিবৃতি

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ১৬ জুন, ২০২০

সদ্য প্রয়াত সরকারদলীয় এক শীর্ষ নেতার মানহানির অভিযোগ এনে শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের মামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭৬ জন প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তারা এই মামলা দায়েরকে ❛জিঘাংসামূলক নিষ্ঠুর আচরণ❜ হিসেবে উল্লেখ করে এতে জ্ঞান উৎপাদন ও চর্চা ব্যাহত হবে বলে মন্তব্য করেছেন।

মঙ্গলবার (১৬ জুন) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে শাবির প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মুক্ত প্রাঙ্গণ, মুক্তবুদ্ধির মিলনমেলা; এখানে থাকবে অবারিত তর্ক, বিতর্ক, আলাপ, আলোচনা, সমালোচনা ও পর্যালোচনার পরিসর। নৈতিক-অনৈতিক, সৌজন্যমূলক-অসৌজন্যমূলক, ঠিক-বেঠিক এমন হাজারো সমস্যার সমাধান হবে মুক্ত ও স্বাধীন চর্চার মাধ্যমে। এমনকি কোনটা কুরুচিপূর্ণ এবং কোনটা সুরুচিপূর্ণ তাও নির্ধারিত হবে ক্রমাগত আলাপ-আলোচনা ও অনুশীলনের ভেতর দিয়ে। তাই মত -দ্বিমত-ভিন্নমতের সহাবস্থানই একটা স্বাধীন ও মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে প্রশাসন কর্তৃক কোনোভাবে আইনি আশ্রয় নেয়া যেমন চরম নিন্দনীয় কাজ, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় ধারণার সাথেই সাংঘর্ষিক।

গত সোমবার (১৫ জুন) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের (২০১৬-১৭ ব্যাচ) শিক্ষার্থী মাহির চৌধুরীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়। সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর পর মাহির চৌধুরী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনামূলক পোস্ট লেখার প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো ইশফাকুল হোসেন বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন।

বিজ্ঞাপন

মামলা দায়েরের পর শাবিপ্রবির প্রক্টোর সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, 'সে (মাহির চৌধুরী) একজন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস দিয়েছে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ক্ষুণ্ণ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ক্ষুণ্ণ হওয়া মানে রাষ্ট্রের মানহানি হওয়া। আর এ ছেলের বিরুদ্ধে আরো বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। সে কিছুদিন আগে অনলাইন ক্লাস বর্জনের আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিয়েছে।'

বিবৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বলেন, মাহির চৌধুরী ফেসবুক লাইভে এসে তার পূর্বোক্ত মন্তব্যের জন্য দুঃখপ্রকাশ করা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে এই অমানবিক ও বিতর্কিত আইনের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও, নামে-বেনামে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ ও পেজ এবং সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের বিভিন্ন ব্যক্তির পক্ষ থেকে আমরা মাহির চৌধুরীর বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক মন্তব্য করতে দেখেছি। এমন উস্কানিমূলক মন্তব্যে প্রভাবিত হয়েই যে মামলা দায়ের করা হয়েছে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো ইশফাকুল হোসেনের কথা থেকেই স্পষ্ট, 'কেউ না কেউ কর্তৃপক্ষের নজরে এনেছে বিষয়টি। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিয়েছে। যখন বিষয়টা ফেসবুকে আসছে তখন অনেকে তার উপর বিক্ষুব্ধ হয়েছে। তারা বলেছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। তাই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য স্যার নির্দেশনা দিয়েছেন।'

তারা বলেন, আমরা শাবিপ্রবির প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে মনে করি, মাহিরের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ ও মামলা দায়ের স্বাধীন ও মুক্ত ক্যাম্পাস এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল চেতনা-বিরোধী। শিক্ষক বা শিক্ষার্থী কারোরই কোনো 'অসৌজন্যমূলক' লেখার কারণে মামলা করার এখতিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের নেই। আমরা জানি যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় মামলা করতে পারে যদি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে জানমালের কেউ ক্ষতি সাধন করে, এবং, বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তাকর্মীরা তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় বাদী হয়ে মামলা করতে পারেন। কিন্তু, মাহির চৌধুরীর ফেসবুক পোস্টে এমন কোনো আলামত ছিল না যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কোনো জানমালের ক্ষতি হতে পারে।

এই মামলা দায়েরের মাধ্যমে শাবিপ্রবি প্রশাসন এক কলঙ্কজনক নজির স্থাপন করেছে উল্লেখ করে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষক বা শিক্ষার্থীদের নাগরিক অধিকার হরণ ও বাকস্বাধীনতাকে রুদ্ধ করে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মান-সম্মান বৃদ্ধি পায় না। বরং জ্ঞান উৎপাদনে জ্ঞানগত ও আইনি শর্তের যে চেতনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে শাবিপ্রবি প্রশাসনের এমন কর্মকাণ্ড তার চূড়ান্ত বরখেলাপ। এভাবে জিঘাংসামূলক নিষ্ঠুর আচরণ করে কখনো জ্ঞান উৎপাদন ও চর্চা অব্যাহত থাকতে পারে না।

তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট হওয়া এবং চলমান শিক্ষার্থীর চলাচল ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হওয়াতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি অবিলম্বে মাহির চৌধুরীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার; বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকলের বাক স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা; ক্যাম্পাসের যে কোনো ভিন্নমতাবলম্বী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের যাবতীয় হুমকি-ধমকি থেকে হেফাজত নিশ্চিত করে অন্যের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে বা সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের ইচ্ছাকে চরিতার্থ না করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সর্বাবস্থায় অভিভাবকসূলভ, নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করাসহ ক্যাম্পাসে সর্বাত্মক গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি জানান।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.