Sylhet Today 24 PRINT

করোনাতেও থেমে নেই শাবিপ্রবির উন্নয়ন

একাডেমিকের পাশাপাশি চলছে কোভিড-১৯ পরীক্ষা

শাবি প্রতিনিধি |  ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২০

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) গত ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষা, গবেষণা ও অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের গতিশীল নেতৃত্ব ও দৃঢ় সিদ্ধান্তে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের স্বার্থে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

গত ৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের মধ্যে Best Digital Campus Award পুরস্কার প্রদান করেন। এতে এ বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কার্যক্রমের স্বীকৃতিসরূপ অর্জন করে 'বেস্ট ডিজিটাল ক্যাম্পাস এওয়ার্ড'ও শাবিপ্রবি ।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ করোনা মহামারীতে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক Covid-19 Tasting Lab স্থাপন করা হয়েছে। এ ল্যাব থেকে প্রতিদিন নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং এ পর্যন্ত ১৭৩৬০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

ক্যাম্পাসকে মাদকমুক্ত করা এবং মাদকের ছোবল থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। এজন্য দেশে প্রথমবারের মতো ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে ডোপ টেস্টের মাধ্যমে সকল শিক্ষার্থী ভর্তির করা হয়েছে যা জাতীয়ভাবে সমাদৃত হয়েছে।

বর্তমানে বিশেষ পরিস্থিতিতে অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অনলাইন ক্লাসে সহজ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২২১৬ জন শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ১৫ জিবি ডাটা প্রদান করা হয়েছে। এ সুবিধা অব্যাহত রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সচেষ্ট রয়েছে। তাছাড়া বন্যা কবলিত জেলাসমূহের শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে এবং তা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে দৃষ্টি নন্দন বেঞ্চ স্থাপন করা হয়েছে। করোনা মহামারীর শুরুতে মোবাইল ব্যাংকিং এর সাহায্যে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের প্রত্যেককে তিন হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। তাদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য প্রথমবারের মতো স্থায়ী কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট নিয়োগ করা হয়েছে।

দীর্ঘ ১৩ বছর পরে গত ৮ জানুয়ারি ছাত্রছাত্রীদের তৃতীয় সমাবর্তন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী সকল গ্রাজুয়েটকে স্থায়ীভাবে গাওন ও হ্যাট প্রদান করা হয়েছে।

শিক্ষকদের কল্যাণে প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। তরুণ শিক্ষকদের ল্যাপটপ ক্রয়ের জন্য বিনা সুদে পঞ্চাশ হাজার টাকা করে সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। শিক্ষকরা যাতে সুষ্ঠুভাবে অনলাইন ক্লাস নিতে পারেন সেজন্য তাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং অনলাইন ক্লাসের লজিস্টিক সামগ্রী সংগ্রহের জন্য সকল শিক্ষককে দশ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালনের সময় যাতে শিক্ষকদের ছোট বাচ্চাদের নিয়ে ঝামেলা না পোহাতে হয় সেজন্য ইউনিভার্সিটি সেন্টার ভবনে মানসম্মত ‘ডে কেয়ার সেন্টার’ স্থাপন করা হয়েছে।

গবেষণাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করছে। সেজন্য গবেষণা খাতে বাজেট নব্বই লক্ষ টাকা থেকে পাঁচ গুণ বৃদ্ধি করে সাড়ে চার কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লেখা ও গবেষণাকে Plagarism মুক্ত রাখতে Turnitin Software এর বহুল ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাংলা ও ইংরেজি জার্নাল হালনাগাদ করা হয়েছে। একইসাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন মানসম্পন্ন ও হালনাগাদ করা হয়েছে। বাংলাদেশে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তাৎক্ষনিক সার্টিফিকেট যাচাই বাছাইয়ের জন্য Block Chain System চালু করা হয়েছে।

করোনার দুর্যোগেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবকাঠামো উন্নয়নে পিছিয়ে নেই। করোনায় ভয়কে জয় করে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলসহ ৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ঢাকায় ৬০০০ বর্গফুট আয়তনের আধুনিক মানের একটি গেস্ট হাউজ ক্রয় করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবকে আধুনিক ক্লাবে রূপান্তর করা হয়েছে। ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বর্ধনে বিভিন্ন প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত গোলচত্বরকে দৃষ্টি নন্দন করে সাজানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলে অ্যাম্বুলেন্সসহ ৫টি নতুন গাড়ি সংযোজিত হয়েছে।

চলমান বৈশ্বিক করোনা কালে বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের আর্থিক সুবিধা প্রদানে প্রশাসন বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর জন্য রেয়াতী সুদে গৃহনির্মাণ ঋণ সুবিধার (সর্বোচ্চ ৭৫ লক্ষ টাকা) ব্যবস্থা করা হয়েছে। সোনালী ব্যাংক থেকে তাদের জন্য সহজ শর্তে ১০০ কোটি টাকা লোনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাকে সিলেট সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত করা হয়েছে।

তাছাড়ার মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের সাথে শাবিপ্রবি এর কর্পোরেট চুক্তি অনুযায়ী করোনা আক্রান্ত শাবিপ্রবি সদস্যদের (শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী) অগ্রাধিকার ও দ্রুততা নিশ্চিত করে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসসহ চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

কম্পাসের সৌন্দর্য বর্ধন ও সবুজায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে ১৪ হাজার চারা ক্যাম্পাসে রোপণ করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে রোপণের জন্য বনবিভাগ থেকে আরও ১০হাজার চারা পাওয়া যাবে যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সকলের প্রিয় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায় সকলের সহযোগিতা কামনা করা যাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়কে আমি মনে প্রাণে ধারণ ও লালন করি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা,গবেষণা, অবকাঠামো, সুশাসন, সেশনজট ও র‌্যাগিংমুক্ত এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। তার জন্য কোথাও চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখিনি। সকলের সহযোগিতার ফলে আমরা প্রায় সব সেক্টরে সফলতা অর্জন করতে পেরেছি। আগামীতেও এ ধারা চলমান থাকবে।’

 

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.