Sylhet Today 24 PRINT

রাবির চলমান পরীক্ষা স্থগিত, অনিশ্চয়তায় শিক্ষার্থীরা

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

করোনার প্রাদুর্ভাব নিম্নমুখী হয়ে আসায় বিভিন্ন বর্ষের আটকে থাকা পরীক্ষা নিতে শুরু করেছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসন। গত সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তাৎক্ষণিক সকল পরীক্ষা স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে অনিশ্চয়তায় মুখে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।

এমন সিদ্ধান্তকে ‘অবিবেচক' উল্লেখ করে তারা বলছেন, পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি তারা সমাজের জন্য বোঝা হয়ে পড়ছে। শিক্ষাজীবন দীর্ঘায়ত হওয়ায় অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য দ্রুত সময়ে পরীক্ষা নেওয়াই একমাত্র পথ বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।

বিজ্ঞাপন

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, ‘চলমান পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীরা ক্ষতির মুখে পড়বে। এছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষাজীবন ব্যাহত হচ্ছে। তার মধ্যে আটকে থাকা পরীক্ষা পুনরায় স্থগিত হল। প্রশাসন চাইলে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে পরীক্ষাগুলো নেওয়া যেত।'

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, করোনা প্রাদুর্ভাব এড়াতে গত বছর মার্চে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের চলমান বিভিন্ন পরীক্ষা আটকে যায়। প্রায় দশ মাস পর আটকে থাকা পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাই পরীক্ষা দেওয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজশাহী এসেছেন শিক্ষার্থীরা। অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও অনেকেই বাধ্য হয়ে মেসে ওঠেন।

বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা, পপুলেশন সায়েন্স এন্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট, পদার্থ বিজ্ঞান, ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্স, নৃবিজ্ঞান, নাট্যকলা ও সঙ্গীতসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি বিভাগের চলমান পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

কক্সবাজার থেকে পরীক্ষা দিতে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী কে এ এম সাকিব। ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, বিভাগ থেকে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তের পর রাজশাহী এসেছি। হল বন্ধ থাকায় মেস নিয়ে আছি। কিন্তু হঠাৎ করে পরীক্ষা স্থগিত করায় রাজশাহীতে থাকা নিয়ে দোটানার মধ্যে আছি। তাছাড়া আর্থিক সমস্যা তো আছেই। সামনে অনেকগুলো চাকরির পরীক্ষা। সেগুলোতে অংশগ্রহণ নিয়ে সংশয়ে আছি। সব কিছু নিয়ে আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছি।

বিজ্ঞাপন

আর্থিক অস্বচ্ছলতার কথা জানিয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, অনেকটা টানাপোড়নের মধ্যে পরিবার চলছে। এমন অবস্থায় পরিবার থেকে টাকা এনে চলতে হচ্ছে। হল বন্ধ থাকায় মেসের ভাড়া গুনতে হয়। এদিকে পরীক্ষা শেষ না হওয়ায় চাকরির পরীক্ষাগুলোয় অংশ নিতে পারছি না। এখন আবার পরীক্ষা স্থগিতের এমন সিদ্ধান্তে ‘হতাশা' কাজ করছে। পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় বাকিরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। খুব শীঘ্রই পরীক্ষাগুলো নেওয়ার দাবি জানাই।

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষাগুলো ২ জানুয়ারি থেকে নেওয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনার্স ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা নিয়েছি। এতে কোনও ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়নি। বাকিদের পরীক্ষাও নিয়ে নিতে পারতাম। মাস্টার্সের পরীক্ষা প্রায় শেষের পথে ছিল। পরীক্ষা নিয়ে তাদের যে মানসিক প্রস্তুতি, তা এখন বিপর্যস্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেওয়ার জন্য মেস ভাড়া করে আছে। পরীক্ষা বন্ধের এমন সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগে পড়তেই পারে।

নৃবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক বখতিয়ার আহমেদ বলেন, ‘হুট করে পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর ক্ষতির মুখে ফেলছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের যেসব আইন আছে সেটির কোনও প্রতিফলন দেখা যায়নি।'

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.