Sylhet Today 24 PRINT

চা শ্রমিকদের আন্দোলনে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের সংহতি

শাবিপ্রবি প্রতিনিধি |  ১৬ আগস্ট, ২০২২

দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে চা শ্রমিকদের আন্দোলনে একাত্মতা জানিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই দাবির সাথে একাত্মতা জানিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন।

দুপুরে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে,  চা শ্রমিকদের মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবি জানানো হয়।

মানববন্ধন পরবর্তী সমাবেশে সাংস্কৃতিক জোটের সমন্বয়ক ইফরাতুল হাসান রাহিম বলেন, দেশের অর্থনীতিতে চা শ্রমিকরা বড় একটা যোগান দিয়ে থাকেন। তবে তাদের সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে তাদের জীবন আরো দূর্বিষহ হয়ে পড়ছে। ১২০ টাকা পর্যন্ত মজুুরি বাড়াতে প্রায় ৫০ বছর লেগেছে তাদের। এই সময়ে ১২০ টাকা মজুরি দেওয়া একটা জুলুম। আমরা সরাসরি তাদের সাথে দাঁড়াতে পারছি না কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি এখান থেকে সংহতি জানাতে। সরকার চাইলেই এই সমস্যার সমাধান অচিরেই করতে পারে।

তিনি বলেন, চা শ্রমিকদেরর প্রতি এতবছর ধরে কেন সুনজর দেয়া হচ্ছে না? সমাজের প্রত্যেকটা অংশের জন্য আলাদা আলাদা মৌলিক অধিকার থাকবে কেন? খেতে পারার অধিকার, পড়তে পারার অধিকার, শিক্ষার অধিকার, স্বাস্থ্যের অধিকার এগুলো তো সবার মৌলিক অধিকার। মৌলিক অধিকার কেন সমাজের একটা অংশ পাবে একটা অংশ পাবে না? এই অসমতা কেন আমাদের এই প্রশ্ন সরকারের কাছে রাষ্ট্রের কাছে প্রশাসনের কাছে পাশাপাশি আমাদের নিজেদের কাছেও যে আমরা কি করছি তাদের সাথে?

তিনি আরও বলেন, চা শ্রমিকরা দৈনিক ২৪ কেজি চা যদি তুলতে পারলে তাদের মজুরি ১২০ টাকা দেওয়া হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ শ্রমিকই ২৪ কেজি চা পাতা তুলতে পারে না। তাতে ১২০টাকা বেতনও পান না তারা। আর পেলেও তা দিয়ে কতটুকু ভালো জীবনযাপন করতে পারে? তাই অধিকাংশ সময় তারা চা পাতার ভর্তা দিয়ে নাস্তা বা চা দিয়ে মসলা বানিয়ে খাবার খেয়ে জীবনযাপন করে।

সমাবেশে চা শ্রমিকদের প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রূপালী পাল বলেন, চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির এই আন্দোলন অনেক আগে থেকেই। এখন দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ার কারণে এ আন্দোলন আরও জোরদার করা হয়েছে। প্রায় ৬ দিন হয়ে গেছে তাদের আন্দোলন চলছে কিন্তু মালিক পক্ষ থেকে এখনো কোন আশারূপ ফলাফল আসেনি। বর্তমান সমাজের অন্যান্যদের তুলনায় চা শ্রমিকরা মানবেতার জীবনযাপন করেন। চা’য়ের শ্রমের মজুরি নির্ভর মানুষগুলো একবেলা খেতে পেলে আরেক বেলা খেতে পায় না। চায়ের সাথ রুটি বা চা দিয়ে ভাত এমন খাবার তাদের শরীরের পুষ্টিমান পূরণ করতে পারেনা। চা শ্রমিকদের ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ থাকলেও তারা ঝরে পড়ছে অচিরেই।

এদিকে, শোকদিবসের কারণে দুইদিন চলমান আন্দোলন কর্মসূচী শিথিল করলেও মঙ্গলবার থেকে ফের কর্মবিরতি শুরু করেছেন দেশের ১৬৬টি চা বাগানের শ্রমিকরা।

মঙ্গলবার সিলেটের বাগানগুলোতেও কর্মবিরতি পালন করেন চা শ্রমিকরাও। এসময় বিভিন্ন বাগানে বিক্ষোভও করেন তারা।

চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতিসহ আমাদের আন্দোলন অব্যাহগত থাকবে।

তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আজ শ্রীমঙ্গলে চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের সাথে বাংলাদেশীয় চা সংসদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে মজুরি বৃদ্ধিসহ অন্যান্য দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনা করা হবে।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার থেকে চা বাগানের শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে ৪ দিন দুইঘণ্টা করে কর্মবিরতি ও গত শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে নামে চা শ্রমিকরা। শোক দিবস উপলক্ষে রবি ও সোমবার কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়। আজ সকাল থেকে পুনরায় কর্মবিরতি পালন করছেন তারা। দাবি আদায়ে তারা বাগান ছেড়ে রাজপথে নেমে আসে। এতে বাগানের উৎপাদনের বন্ধ হয়ে গেছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.