Sylhet Today 24 PRINT

সিলেটের মানুষের আয় ভালো কিন্তু শিক্ষায় পিছিয়ে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

শাবিপ্রবি প্রতিনিধি  |  ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ছাত্রদের জন্য নবনির্মিত সৈয়দ মুজতবা আলী হলের বর্ধিতাংশের উদ্বোধন করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে এ হলের উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি।

উদ্বোধনের পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য  রাখেন পররাষ্ট্র ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, সৈয়দ মুজতবা আলীর পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারের একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তিনি একজন দূরদর্শী সম্পন্ন মানুষ ছিলেন। পাকিস্তান সৃষ্টির পর বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য অনেক ত্যাগ তিতীক্ষা ও সংগ্রাম করেছেন তিনি। রাষ্ট্রভাষার এক অগ্রদূত ছিলেন তিনি। আমি জেনে আনন্দিত যে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সৈয়দ মুজতবা আলীর নামে হল কটা হয়েছে এবং সেটি প্রথম উদ্বোধন করেন আমার বড় ভাই আবুল মাল আবদুল মুহিত।

শাবিপ্রবির সাফল্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেক আন্তরিকতা ও ইচ্ছা আছে। যার ফলে এত সুন্দর ভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যে পরিকল্পনাগুলো নেওয়া হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন হলে অবকাঠামোর আর অভাব থাকবে না। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলের লিডারশিপের জন্য আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি জেনে আনন্দিত যে এ ধরনের কাজ করতে গিয়ে তারা কোনো ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ততা নেই। এজন্য  এ বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকলকে সহযোগিতা করতে হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সিলেট একটি ঐতিহ্যময় স্থান। জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিদের জায়গা এ সিলেট৷ একসময় বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত মানুষ ছিল সিলেটে। কিন্তু দুঃখের বিষয় সম্প্রতিকালে আমরা শিক্ষা থেকে অনেক পিছিয়ে গেছি। বাংলাদেশে শিক্ষার ক্ষেত্রে সিলেটের অবস্থান অনেক নিছে। ফলে আমাদের মাতৃমৃত্যু ও শিশুর মৃত্যুর হার বেশি। যদিও সিলেটের মানুষের আয় ভালো, তবুও আমরা এ ক্ষেত্রগুলোতে অনেক পিছিয়ে আছি। এর অন্যতম কারণ- অবকাঠামোর অভাব, স্কুল-কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম। এটি নিয়ে ২০০৩ সালে আমি একটা জরিপ চালাই। সে জরিপ অনুযায়ী বৃহত্তর সিলেট এবং বরিশালের মানুষ ছিল সমান সমান। কিন্তু বর্তমানে বরিশালে তুলনায় সিলেটের মানুষ বেশি। তবুও শিক্ষার ক্ষেত্রে সিলেট থেকেও সাড়ে তিন গুণ বেশি স্কুল-কলেজ রয়েছে বরিশালে। আমরা দেখি একটি চাকরির জন্য বরিশালের ৬ জন গ্রাজুয়েট আবেদন করলে সেখানে সিলেটের মানুষ থাকে মাত্র ১ জন। তাই আমাদেরকে শিক্ষার ক্ষেত্রে আরো জোর দিতে হবে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি আমার ছাত্র ভাই-বোনদের প্রতি আহব্বান করবো তোমরা আন্দোলন কর, কিন্তু শিক্ষা ছেড়ো না। আমার খুব দুঃখ লাগে আমার দলের ছেলে-মেয়েগুলো, ছাত্রলীগ-যুবলীগ  করে, এরা চাকরিও করতে পারে না, ব্যবসাটাও করতে পারে না। সামান্য ব্যবসা করতে গেলেও তাদের দুর্নাম হয়, চাকরী তারা সহজে পায়না। তবে তারা পলিটিক্সের জ্ঞান অর্জন করেছে, উই হ্যাভ টু থিংক, আমি শিক্ষকদেরকে অনুরোধ করব এই যে বড় একটা রিসোর্স তাদেরকে কিভাবে সত্যিকার অর্থে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানো যায় সে উপায় আমাদের বের করতে হবে। তাদের অনেক স্পিরিট আছে, কমিউনিকেশন স্কিল আছে, তাদের কিভাবে এসব জায়গায় সম্পৃক্ত করা যায় সে পন্থা আমাদের বের করতে হবে।

বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে সুন্দর একটি দেশ উপহার দিয়ে গেছেন। তার স্বপ্ন ছিল এই দেশকে একটি স্বনির্ভরশীল দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে। এবং সেটি  অল্প দিনের মধ্যেই তিনি প্রমান করেছেন তাই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা, গবেষণা ও অবকাঠামোর দিক দিয়ে অনেকদূর এগিয়ে গেছে। যার ফলশ্রুতিতে সম্প্রতি ওয়েবমেট্রিক্সের রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। এটি একটি দুর্নীতিমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, সুশাসনের দিক দিয়েও আমরা অন্যান্যদের রোল মডেল। বর্তমানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বাজেট ৮ গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এবছর বিশ্বের স্বনামধন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে আমাদোর ৭০০টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। আশা করছি এ ধারা অব্যাহত থাকলে আমরা আগামীতে দেশের নাম্বার ওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিনত হব আমরা।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম, সৈয়দ মুজতবা আলীর ভ্রাতুষ্পুত্র সৈয়দ রুহুল আমীন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক আমিনা পারভীন, প্রক্টর, ছাত্রলীগ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সৈয়দ মুজতবা আলী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু সাঈদ আরেফিন খান। এসময় উপস্থিত ছিলেন অন্যান্যের মধ্যে সিসিক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদসহ সিলেটের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

জানা যায়, ২০১১ সালের ১৩ আগস্টে মুজতবা আলী হলের উদ্বোধন করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। জনপ্রিয় রম্য লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর নামে এ হলের নামকরণ করা হয়। শুরুতে তিন তলাবিশিষ্ট একটিমাত্র ব্লকে শিক্ষার্থী ধারণ ক্ষমতা ছিলো ৬৮ জন। পরবর্তীতে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৯ বছর পর ২০২০ সালের শুরুতে এ হলের বর্ধিত করণের কাজ শুরু হয়। হলটির মোট আয়তন ৭২ হাজার ৯০৫ বর্গফুট। হল বর্ধিতকরণে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ কোটি ৭৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা। বর্তমানে এ হলের ৪টি ব্লকের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এতে শিক্ষার্থী ধারণ ক্ষমতা ৪৪০ জন। এর মধ্যে বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য ১টি কক্ষ, চা শ্রমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য ১টি কক্ষ, অতিথি কক্ষ ১টি, নামাজের কক্ষ ২, মেডিকেল কক্ষ ১, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ৩টি রিডিং রুম, টিভি রুম ১, ডাইনিং, স্টেশনারী শপস, সেলুন, লন্ড্রির জন্য ৩টি কক্ষ বরাদ্দ রয়েছে। এছাড়া মটর সাইকেল স্ট্যান্ড, বাইসাইকেল স্ট্যান্ড, শীতকালীন, গ্রীষ্মকালীন খেলাধূলার ব্যবস্থাসহ ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া হলের সৌন্দর্য্য বর্ধনে হলের চারপাশে বিভিন্ন ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছ লাগানো হয়েছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.