Sylhet Today 24 PRINT

যারা এইচএসসি পরীক্ষা দিবে...

সীমান্ত দেব তূর্য |  ২৯ মার্চ, ২০১৬

৩ এপ্রিল থেকে তোমাদের পরীক্ষা শুরু। হয়ত অনেকের প্রস্তুতি অনেক ভালো, আবার অনেকের প্রস্তুতি মোটামুটি, আবার অনেকের হয়ত বেহাল দশা। এই তিন শ্রেণির প্রস্তুতি নেয়াদের নিয়ে আজ কিছু লিখব:

যাদের প্রস্তুতি খুব ভালো: আসলে যাদের প্রস্তুতি খুব ভালো , তাদের নিয়ে কিছু বলার থাকে না, তারা শুধুমাত্র পরীক্ষা হলে ঠিকভাবে পরীক্ষা দিলেই ভালো করার কথা। ভেতরে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস না থাকলে আসলেই ভালো করার কথা কারণ তারা বছরজুড়ে সারা সময়টাকে কাজে লাগিয়েছে, তাদের পরীক্ষা ও ফলাফল ভালো না হলে কাদের হবে? তোমাদের জন্য এতটুকুই পরামর্শ থাকবে যে মাথা ঠাণ্ডা করে পরীক্ষাটুকু দাও, আর পুরো প্রশ্ন পড়ে তারপর বুঝে উত্তর দাও।


যাদের প্রস্তুতি মোটামুটি: এই শ্রেণিতে যারা পড়ো তারাই মূলত গড়ে ভালো ফলাফল করে। তাই তোমার প্রস্তুতি মোটামুটি তা নিয়ে হতাশ হওয়ার  কিছু নেই। কারণ যাদের প্রস্তুতি মোটামুটি থাকে তারাই পরীক্ষার আগের সময়টাকে সবচেয়ে ভালো কাজে লাগাতে পারে। আর যে পরীক্ষার আগের সময়টাকে সবচেয়ে ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারবে তারাই সবচেয়ে ভালো করবে। মূলত এ কারণেই এই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ভালো রেজাল্ট করে থাকে।

যাদের প্রস্তুতি খারাপ: যাদের প্রস্তুতি খারাপ তারা নিশ্চয়ই পরীক্ষাটাকে সিরিয়াসলি নাও নি। হ্যাঁ, আর এই কারণেই তোমরা ভালো করবে। কারণ ভালো প্রস্তুতি যাদের থাকে তাদের মনে সবসময় একটা ভয় কাজ করে পরীক্ষা নিয়ে, যা তাদের পরীক্ষার হলে একটু হলেও তোমার থেকে বেশি অস্বস্তিতে রাখবে। কিন্তু তোমার যে শুধু ভয় নেই আর এ জন্য পরীক্ষা ভালো হয়ে গোল্ডেন এ+ বা এ+ পেয়ে যাবে তা কিন্তু নয়। এখন যতটুকু সময় আছে সে সময়টাকে কাজে লাগাতে হবে তাহলেই তোমরা বাকি দুই শ্রেণির স্টুডেন্টদের সাথে তাল মেলাতে পারবে। আর বাকি দুই শ্রেণির স্টুডেন্টদের চেয়ে এই সময়টা তোমাকে সবচেয়ে বেশি কাজে লাগাতে হবে। কারণ তারা তোমার চেয়ে অনেক এগিয়ে। যাই করো, সাজেশন নাও বা দাগিয়ে পড়ো, যেভাবে খুশি পড়ো , মূল কথা এই সময়টাকে তোমারই সবচেয়ে বেশি কাজে লাগাতে হবে। আমি এরকম অনেককে দেখেছি যারা শুধুমাত্র পরীক্ষার কয়েকদিন আগে থেকে পড়ায় মনোযোগ দিয়ে অনেক ভালো ফলাফল করেছে। তাই এই সময়টা হতাশ না হয়ে পড়াশুনায় কাজে লাগাও।



যারা পরীক্ষা দিবে তাদের জন্য কিছু টিপসঃ

.    প্রস্তুতি যেমনই হোক পরীক্ষা সবসময় মাথা ঠাণ্ডা করে দিবে। কারণ প্রস্তুতি খুব ভালো হলো আর পরীক্ষা হলে গিয়ে ঠিকঠাক কিছু এন্সার করতে পারলে তাহলে কিন্তু কোনো লাভ নেই। যেসময়টুকু পরীক্ষার হলে বসে ঐ সময়টুকু সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ধরো, পরীক্ষার হলে গিয়ে দেখলে অবজেক্টিভ তোমার অর্ধেক কমন পড়েছে আর অর্ধেক পড়ে নি! তো অর্ধেক তো এন্সার করতে পারবে ঠিকভাবে কিন্তু বাকি অর্ধেক কিভাবে উত্তর দিবে?এক্সেক্টলি ঐসময়ই মাথা গরম হবে। কিন্তু তখন মাথা যত ঠান্ডা রাখবে ততই বুদ্ধিমান তুমি। কারণ একমাত্র মাথা ঠান্ডা রাখার জোরে তুমি ঐ অর্ধেক ঠিকঠাক এন্সার করে দিয়ে আসতে পারো। মোট কথা, তোমার পরীক্ষার ফলাফল কেমন হবে তার সবটাই নির্ধারণ করে পরীক্ষার ঐ ৩ঘন্টা সময়। আর মাথা ঠাণ্ডা রাখার একটা গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হল, নিজের কনফিডেন্স ধরে রাখা। তাই যদি পরীক্ষায় সবকিছু পড়ে নাও যেতে পারো তাহলেও মনে মনে ধরে নিবা তুমি সব পড়ে গেছো, আর যখন পড়ে যাওয়া যায় তখন মনে এমনি থেকেই একটা আত্মবিশ্বাস চলে আসে। তাই, আমি বলব, নিজের উপর আত্মবিশ্বাস রাখতে। মনে রেখো- Self- Confidence is the best outfit, rock it and own it.


২. আর তোমাদের জন্য আরেকটা সুখবর হচ্ছে, পরীক্ষার মাঝে মাঝে অনেক গ্যাপ আছে। কিন্তু বাংলা ও ইংরেজির আগে তেমন একটা বন্ধ নাই। তাই বাংলা ও ইংরেজির জন্য একটু সাজেশন থাকবে-  

বাংলা: বাংলা ১ম পত্রের বহুনির্বাচনী অংশে (অবজেক্টিভ পার্ট) মূলত অনেকেই ধরা খায়। বাংলা ১ম পত্রের সৃজনশীল অংশে যত পারো লিখে দিয়ে আসবে। আর যেহেতু ২ ঘণ্টা ২০ মিনিটে ৬টা প্রশ্নের উত্তর  দিতে হয় তাই এই ক্ষেত্রে টাইম টা একটু খেয়াল রাখতে হবে। কারণ বাংলায় প্রচুর লেখা থাকে আর সময়ের ভেতর তা শেষ করতে অনেকেই হিমশিম খায়। তাই সৃজনশীল লেখার আগে মনে মনে সময়টা ভাগ করে নিবা। আর পারলে ৫ মিনিট আগে শেষ করার চেষ্টা করবা, তাহলে মনে হবে ভালোভাবে শেষ করতে পেরেছ এবং বহু নির্বাচনীর সময় মাথা ঠাণ্ডা রেখে উত্তর করতে পারবা। কারণ বাংলা অবজেক্টিভ মাথা ঠাণ্ডা রেখে উত্তর দিতে  পারাটা খুবই জরুরি। আর পরীক্ষার আগে বাংলা ১ম পত্রের মেইন বইটা অবশ্যই খুটে খুটে পড়ে যাবা, আর দরকার পড়লে গাইড বইটাকেও সাথে রাখবে আর পড়তে থাকবে। আর যেহেতু উপন্যাস পার্ট থেকে অবজেক্টিভ আসে না , তাই এর প্রতি লাইন এত খুটে খুটে না পড়লেও চলবে। কিন্তু গদ্য ও পদ্য এর ক্ষেত্রে বিষয়টা পুরো উলটো। তোমাকে পাঠগুলা খুব ভালোভাবে পড়ে যেতে হবে, আর কবিতাগুলো অবশ্যই পড়ে যাবা ভালো করে। আর আরেকটা জিনিস মাথায় রাখবা, পরীক্ষা থেকে বের হওয়ার পর অনেকেই অনেক কথা বলবে, যে সে প্রায় সবগুলোই সিউর হয়ে দিয়ে আসছে, তার ভুল হবে না, এইসব কথায় মোটেও কান দিবা না। পরীক্ষার ফলাফলের পর দেখা যায় কার কয়টা সঠিক হয়েছে। আর বাসায় এসে দেখবা সন্ধ্যার সময় কোনো একটা ওয়েবসাইটে তোমার বোর্ডের সবগুলা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিছে। এইটা মূলত যেকোনো একটা কোচিং সেন্টার প্রশ্ন কালেক্ট করে উত্তর বের করে দেয়, কিন্তু এই উত্তর পেয়ে হতাশ হওয়ারও কিছু নেই আর উচ্ছ্বাসিতও হওয়ার কিছু নেই। কারণ তাদের আপলোড করা উত্তরপত্রে যে কয়টা ভুল থাকে ঐটা তারা নিজেও জানে না। তোমার কনফিউশন থাকলে মেইন বই থেকে মিলিয়ে নিবে, আর না পেলে রেখে দিবে। যে যাই বলুক এত কান দেয়ার কিছু নেই। প্রশ্ন রেখে পরবর্তী পরীক্ষার প্রিপারেশন নিবা।

বাংলা ২য় পত্রে এখনকার সিলেবাসে মূলত সবই রচনামূলক। তাই আমি বলব পরীক্ষার ঐ ৩ ঘণ্টা ভালোভাবে কাজে লাগাও। ঐ ৩ঘন্টায় তুমি যত ভালো ও বেশি লিখতে পারবে এই সাবজেক্টে তত ভালো মার্ক তুলতে পারবে। আমি একটা সাজেশন অবশ্যই দিব, আর তা হলো, প্রচুর লিখে আসবা। আর লেখা অবশ্যই পরিষ্কার রাখবা। লেখা পরিষ্কার থাকলে অনেক এক্সট্রা বেনিফিট পাওয়া যায়।

ইংরেজি: ইংরেজিতে আসলে সবাই ভালো করে। ইংরেজির জন্য শুধু এতটুকুই বলব যে, এডভান্স পড়ার সাথে সাথে নবদূত-টাও পড়ো। এডভান্সে যেসব টেবিল-রিএরেঞ্জগুলো পাবা না সেগুলো নবদূত থেকে কালেক্ট করে পড়বা।


৩. আর অন্যান্য সাবজেক্টগুলার মধ্যে আইসিটি সাবজেক্টটা একটু নতুন। এবং অনেকের জন্যই কঠিন। কিন্তু এইবার সৃজনশীল হওয়াতে মার্ক তোলা-টা আগের চেয়ে সহজ হবে। চিন্তার কোনো কারণ নেই, এই বিষয়টা সব গ্রুপ এর জন্য, তাই সব গ্রুপ এর কথা বিবেচনা করেই প্রশ্ন করবে। শুধু যে প্রোগ্রামিং আর ম্যাথ রিলেটেড প্রশ্ন হবে এমন না। সব মিলিয়েই প্রশ্ন হবে। আর যেহেতু এইবারই বিষয়টা প্রথম সৃজনশীল , তাই বিষয়টাকে একদম ফেলে দিও না।

৪. বাংলা, ইংরেজি আর আইসিটি বাদে সবগুলাই গ্রুপ সাবজেক্ট। গ্রুপ সাবজেক্টগুলো নিয়েই সবার ভয় থাকে। গ্রুপ সাবজেক্ট গুলো নিয়ে টেনশন নিয়ো না। গ্রুপ সাবজেক্টগুলোর আগে প্রচুর বন্ধ আছে। ঐসময় ভালোভাবে পড়লে তোমার এ+ কে আটকায়!


***৪র্থ বিষয়ে ৪.০০ পয়েন্ট পেয়ে মোট ৪টি তে ৫.০০ ও বাকি দুইটিতে ৪.০০ পেলে এ+ হবে। তাই আমি বলব ৪র্থ বিষয়কে অবহেলা না করে ঐটাতে ভালো মার্ক তোলার চেষ্টা কর, তাহলে অন্য একটিতে মিস হলেও সমস্যা হবে না।


আর একটা জিনিস সবসময় মনে রাখবে, যে এইচএসসি তে সবগুলো বিষয়ের দুইটা করে পার্ট আছে। তাই ১ম পত্র খারাপ হলে ভেঙে পড়ার কিছু নেই, ২য় পত্র এর মার্ক দিয়ে তা কাভার করে ফেলতে পারবে।   

আজ এ পর্যন্তই। প্রয়োজনে আগামীতে আবার লিখব। সবাই ভালো থাকবা। ভালো করে পরীক্ষা দাও। বিন্দাস হয়ে পরীক্ষা দাও। সবার জন্য শুভকামনা।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.