Sylhet Today 24 PRINT

‘সুইসাইড নোট’-এ শাবি ছাত্রের পাঁচ কথা

হিংস নয় মৈত্রী তৈরি করুন, সবাই ভাল থাকবেন- লিখে গেলেন বিশ্বজিত

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ০৮ মে, ২০১৬

'শুধু শুধু ঝগড়া, হিংসা করে আপনার লাভটা কী? সে যাবে তার পথে, আপনি যাবেন আপনার পথে। মৈত্রী তৈরি করুন, আশা করি সবাই ভাল থাকবেন।’- একটি নোটে এমনটিই লিখে রেখেছেন শাবি ছাত্র বিশ্বজিত মল্লিক। শনিবার মধ্যরাতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীর মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।

মরদেহ উদ্ধারের সময় একটি নোটও উদ্ধার করা হয়। পুলিশ যাকে বলছে- সুইসাইড নোট। এতে প্রেম, বন্ধুত্ব, এই দুই নিয়ে সঙ্কট, ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে লিখেছেন বিশ্বজিত।

নোটে লেখা রয়েছে- ‘আমাদের প্রথম বাড়ি আমাদের পরিবার, দ্বিতীয় বাড়ি আমাদের স্কুল এবং তৃতীয় বাড়ি আমার মতে বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে ৪-৫ বছর একসাথে থাকবেন, একটু হলেও সবার সাথে মিলেমিশে সুন্দরভাবে থাকার চেষ্টা করুন। ৪-৫ বছর পর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার পর হয়তোবা কারো সাথে কখনো দেখা হবে না। শুধু শুধু ঝগড়া, হিংসা করে আপনার লাভটা কী? সে যাবে তার পথে, আপনি যাবেন আপনার পথে। মৈত্রী তৈরি করুন, আশা করি সবাই ভাল থাকবেন।’

বিশ্বজিতের সুইসাইড নোটটি ‘প্রথম কথা’ দিয়ে শুরু হয়ে ‘পঞ্চম কথা’ পর্যন্ত লিখে তারপর ‘সর্বশেষ কথা’ বলে একটি পয়েন্টে এ কথাগুলো লেখা।

বিশ্বজিতের সুইসাইড নোটে ‘প্রথম কথায়’ একে অন্যের প্রেমিকাকে নিয়ে কটু কথা বলার বিষয়টি দৃষ্টিপাত করে দোষ-ত্রুটি যা-ই থাক সামনা-সামনি কথা বলার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। কারো পেছনে কোনো কথা না বলার জন্যও বলা হয় সেখানে।

‘দ্বিতীয় কথা’ পয়েন্টেও প্রেমিকা প্রসঙ্গে লেখা হয়েছে। যেখানে, যাদের প্রেমিকা আছে তারাও অপরের প্রেমিকা নিয়ে যেন মাথা ঘামায় এমন কথা বলা হয়েছে।

‘তৃতীয় কথা’ পয়েন্টে লেখা হয়েছে, বন্ধুত্ব নষ্ট হওয়ার পর একে অপরের প্রতি বিদ্রুপ ও অশালীন মন্তব্য করার কথা, যেটা ঠিক নয় তার মতে। এ পয়েন্টে একটা প্রশ্ন করা হয়েছে। ‘তাই বলে একটু মার্জিত মন্তব্য করা উচিত নয় কি?’

‘চতুর্থ কথা’ পয়েন্টে উল্লেখ করা হয়, ‘কিছু কিছু বন্ধু আছেন যারা নিজেদের বন্ধুর ব্যপারে একটু বেশিই নাক গলান। নাকটা কম গলাবেন। অতিরিক্ত নাক গলানো তার যেমন পছন্দ নয়, তেমনি আপনারও নয় মনে রাখবেন।’

এবং ‘পঞ্চম কথা’ পয়েন্টে উল্লেখ করা হয়, ‘যেসব বন্ধু আপনাদের সাথে কম মেশে তাকে নিয়ে মজা করতে আপনার খুবই ভাল লাগে। কিন্তু যাকে নিয়ে মজা করছেন তার ভাল লাগে না। বরং তাকে নিয়ে মজা না করে, কেন সে আপনাদের সাথে কম মিশছে বা আপনাদের সাথে কয়েকদিন মেশার পর কেন এড়িয়ে যাচ্ছে তা বের তো করবেনই না, উল্টো তাকে লুথা বলবেন। সমস্যা দু’জনেরই আছে শুধু যে বন্ধুটি আপনার সাথে কম মিশেছে তাকে একা দোষ দেবেন না।’

শনিবার মধ্য রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের বড়গুল এলাকার ‘সুরমা নীড়’ নামক দোতলা একটি মেস থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে জালালাবাদ থানা পুলিশ।

বিশ্বজিত মল্লিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বিশ্বজিত মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার সোনাকান্দা গ্রামের যাদব মল্লিকের ছেলে।


বিশ্বজিতের বন্ধুরা জানান, শনিবার দুপুরে অন্য বর্ডাররা মেস থেকে বেরিয়ে গেলে বিশ্বজিৎ একাই সেখানে ছিলেন। রাতে বন্ধুরা মেসে ফিরে অনেক ডাকাডাকি করলেও বিশ্বজিৎ কোনো সাড়া দেননি। পরে তাঁরা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে বিশ্বজিতকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। রাত ১২ টার দিকে প্রক্টরের উপস্থিতিতে পুলিশ ঝুলন্ত অবস্থা থেকে বিশ্বজিতের মরদেহ নামিয়ে আনে।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর রাশেদ তালুকদার জানান, প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করছে বিশ্বজিৎ আত্মহত্যা করেছেন। ময়নাতদন্তে এ বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া যাবে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.