Sylhet Today 24 PRINT

২২ মাস পর শাবির হলের দখল পেলো ছাত্রলীগের সন্দিপন গ্রুপ

পুলিশ প্রহরায় হলে উঠলেন ছাত্রলীগের কমিটির দায়িত্বশীলরা, অঞ্জন-উত্তম গ্রুপের আপত্তি, সংঘাতের শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ১৬ মার্চ, ২০১৫

ছাত্রলীগের সভাপতি গ্রুপের নেতাদের হলে নিয়ে যাচ্ছেন শাবি উপাচার্য

অবশেষে হলে ঠাই হলো শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক অনুসারী গ্রুপের। কমিটি গঠনের দীর্ঘ ২২ মাস পর পুলিশী সহযোগীতায় সোমবার সন্ধ্যায় হলে তোলা হয় তাদের।

এর আগে প্রায় ২ বছর ধরে চেষ্টা করেও ছাত্রলীগের আরেকটি গ্রুপের বাধার মুখে হলে উঠতে পারেননি শাবি ছত্রলীগের কমিটির পদস্তরা। হল দখল নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘাত-প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।

সভাপতি সন্দিপন চক্রবর্তী গ্রুপকে সোমবার পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন হলে তুলে দেওয়ায় এ নিয়ে ফের সংঘাতের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যথারীতি সন্দিপন গ্রুপকে হলে তোলার বিরোধীতা করেছে অঞ্জন-উত্তম গ্রুপ।

সোমবার সকাল থেকে ছাত্রলীগের সন্দিপন গ্রুপ ও অঞ্জন-উত্তম গ্রুপের মধ্যে দিনভর উত্তেজনা বিরাজ করছিলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করায় ক্যাম্পাস ও হলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

জানা যায়, ২০১৩ সালের ৮ মে ছাত্রলীগের সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি হলেও ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারেনি কমিটির নেতারা। এমনকি গত ২২ মাসে ক্যাম্পাসে একটি মিছিলওকরতে পারেনি ছাত্রলীগের কমিটির দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতারা।। আবাসিক হলগুলো দখল করেছিল ছাত্রলীগের উত্তম কুমার দাশ ও অঞ্জন রায় অনুসারি কর্মীরা। এতে কমিটি পক্ষের নেতা-কর্মীরা হলে উঠতে চাইলে ২০ নভেম্বর দু’পক্ষের বন্দুকযুদ্ধে সুমন দাশ নামে এক বহিরাগত ছাত্রলীগ কর্মী খুন হওয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

উভয় পক্ষের সমঝোতা ছাড়াই ১৮ জানুয়ারি ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ায় ফের গত ৮ মার্চ হল দখল নিয়ে দুইপক্ষ পাল্টপাল্টি কর্মসূচি পালন করে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিবদমান গ্রুপগুলো নিয়ে কয়েকদফা মিটিং আহ্বান করলেও এক পক্ষ বৈঠক বয়কট করেন।

গত রোববার হলে ভর্তিকৃত বৈধ শিক্ষার্থীদের হলে উঠানো হবে শাবি প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সোমবার সকাল ১০টায় সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ, সহ-সভাপতি আবু সাইদ আকন্দ, সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান ও সহ-সাধারণ সম্পাদক সাজিদুল ইসলাম সবুজ নেতৃত্বে ৭টি সিএনজিযোগে ৪০-৪৫ জন ছাত্রলীগকর্মী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। এসময় হলে অবস্থানকারী কিছু ছাত্রলীগ কর্মীরাও তাদের সাথে যোগ দেয়।

পরে তারা শাবি ভিসির সাথে দেখা করেন শাবি ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক সামসুজ্জামান চৌধুরী সুমন ও বর্তমান সাধারন সম্পাদক ইমরান খানের উপর হামলার বিচার, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং তাদেরকে হলে উঠানো দাবি জানান।

এদিকে কমিটির পক্ষ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছে খবর পেয়ে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অন্জন রায় ও মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক উত্তম কুমার দাশের অনুসারিরা শাহপরান হলের সামনে বিক্ষোভ করে। তারা কমিটির পক্ষের নেতাকর্মীদের সুমন দাশ হত্যাকারী অ্যাখ্যায়িত তাদের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে থাকে।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও হল প্রভোস্টরা হলে যেতে চাইলে তাদের সাথে উত্তম-অন্জন সমর্থিত কর্মীদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এসময় ছাত্রলীগকর্মীরা উপস্থিত শিক্ষদেরকে সুমন হত্যার খুনিদের দালাল ও খুনিদের মদদ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করে। উপস্থিত শিক্ষকরা ঘটনাস্থল থেকে চলে আসলে পুলিশ ছাত্রলীগ কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।

পরে শাবি ভিসি, কোষাধ্যক্ষ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক, শিক্ষক পরিষদের আহবায়ক, রেজিস্টার, প্রক্টরিয়াল ও প্রভোস্ট বডির শিক্ষকরা হলে আসেন। এসময় তারা জরুরী সভা করে ছাত্রলীগের কমিটির নেতাকর্মীদের সোমবার হলে উঠানো এবং মঙ্গলবার ১২টায় বিবদমান গ্রুপের সাথে মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ছাত্রলীগের কমিটির নেতাকর্মীরা ভিসি ভবন থেকে অর্ধশতাধিক পুলিশ প্রহরায় হলে আসেন। এসময় নেতাকর্মীদের সামনের পুলিশের দুটি ভ্যান ও একটি সাঁজোয়াযান এবং পেছনে একটি পুলিশ ভ্যান দেখা গেছে। পরে তারা শাহপরান হলে প্রবেশ করে।

কমিটি পক্ষের ৩১জন শিক্ষার্থী হলে ভর্তির জন্য আবেদন করে এবং তাদের ভাইবা নেওয়া হয়েছে বলে শাহপরান হলের ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্ট সহকারী অধ্যাপক সঞ্জয় কৃষ্ণ বিশ্বাস জানান।

হল দখল নিয়ে ছাত্রলীগের দুইপক্ষের মাঝে স্থায়ী কোন সমাধান না হওয়া আবারো সংঘর্ষের আশংকা করেছে সাধারন শিক্ষার্থীরা।

শাবি ছাত্রলীগের এক গ্রুপের নেতা অঞ্জন রায় বলেন, ২০ নভেম্বর সুমন দাশ হত্যার চিহ্নিত খুনি ও অছাত্র, যাদের ভিডিও ফুটেজ ও অস্ত্রসহ কিছু ছবি থাকারও পর তাদেরকে হলে উঠিয়ে ক্যাম্পাসকে আবারো অস্থিতিশীল করা হচ্ছে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে সঙ্কিত। এ নিয়ে কোন অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটলে দায়ভার প্রশাসনকেই নিতে হবে।

শাবি ছাত্রলীগের সহ-সাধারন সম্পাদক সাজিদুল ইসলাম সবুজ বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ভর্তিকৃত বৈধ শিক্ষার্থীরা হলে উঠার জন্য এসেছি। বহিরাগত কিছু অস্ত্রধারি সন্ত্রাসীরা হলে অবস্থান করায় শাবি প্রশাসনের সহায়তায় আমরা হলে উঠেছি।

শাবি ভিসি প্রফেসর আমিনুল হক ভুঁইয়া জানান, হল প্রশাসনের নিয়মানুযায়ি শিক্ষার্থীদের হলে উঠানো হচ্ছে। পরবর্তিতে যারা কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাবে তাদেও বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.