Sylhet Today 24 PRINT

বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার মান দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

মানসম্মত শিক্ষায় প্রয়োজন পর্যাপ্ত সংখ্যক যোগ্য ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক। পাশাপাশি থাকতে হবে শিখন, প্রশিক্ষণ ও গবেষণার পরিবেশ। শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ও তাদের আবাসনসহ প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করাও জরুরি। সর্বোপরি থাকতে হবে বৈশ্বিক জ্ঞানলাভের সুযোগ। অথচ বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় এর সব ক’টি ক্ষেত্রে রয়েছে সংকট। ফলে মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) তথ্য বলছে, উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার মানের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিচে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। আর বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে উচ্চশিক্ষার মানের দিক দিয়ে ১৩৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪তম। এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে ভারত। তালিকায় ভারতের বৈশ্বিক অবস্থান ২৯তম। বাকি দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলংকা ৪১, পাকিস্তান ৭১ ও নেপালের অবস্থান ৭৭তম।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এমএ মান্নান এ প্রসঙ্গে বলেন, স্বাধীনতার পর তিন দশকের বেশি সময় উচ্চশিক্ষা তেমন গুরুত্ব পায়নি। এ কারণে একটা বড় সময় ধরে অবহেলিত ছিল দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা। মানে পিছিয়ে পড়ার এটি একটি কারণ হতে পারে। এছাড়া গত দুই দশকে এ খাতের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। অর্থ বরাদ্দ কম থাকার ফলে পরিধি বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নয়ন করা সম্ভব হয়নি।

সম্প্রতি সর্বশেষ বৈশ্বিক সক্ষমতা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ডব্লিউইএফ। প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহূত ১২টি স্তম্ভের দুটিই শিক্ষাবিষয়ক। সূচকের পঞ্চম স্তম্ভ উচ্চশিক্ষা-বিষয়ক। এ স্তম্ভে উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে উচ্চশিক্ষায় বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ কম থাকার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

ডব্লিউইএফের বৈশ্বিক সক্ষমতা প্রতিবেদন ২০১৬-১৭ অনুযায়ী, বাংলাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ১৩ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। যদিও নেপালে এ হার ১৬, শ্রীলংকায় ২১ ও ভারতে ২৪ শতাংশ। ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের তথ্যের ভিত্তিতে হিসাবটি করা হয়েছে। এটিই সর্বশেষ তথ্য।

উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীদের কম অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এ.কে. আজাদ চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশে জনসংখ্যার তুলনায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা একেবারেই কম। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়লেও তা ব্যয়বহুল হওয়ায় দেশের মানুষের বড় একটা অংশ উচ্চশিক্ষা নিতে পারে না। তাছাড়া জনসংখ্যার বড় অংশ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর শেষ করেই কর্মজীবনে প্রবেশ এবং দেশের বাইরে চলে যাওয়ায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণের হার কম। আবার অনেকেরই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গ্রহণের সামর্থ্য নেই। এ কারণে এ হার কম। তবে গত কয়েক বছর ধরে এ হার বাড়ছে।

বিজ্ঞান ও গণিত শিক্ষার মানের দিক থেকেও পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ। বিজ্ঞান ও গণিত শিক্ষার বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৬তম। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এ অবস্থান সর্বনিম্নে। তালিকায় অন্তর্ভুক্ত বাকি দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলংকা ২৮, ভারত ৪৪, নেপাল ৮৬ ও পাকিস্তান ৯৮তম অবস্থানে রয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মানের দিক থেকেও বাংলাদেশের অবস্থান নিম্ন সারিতেই। প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মানের সূচকে বাংলাদেশ ১০৯তম। এক্ষেত্রে পাকিস্তান বাংলাদেশ থেকে ছয় ধাপ পিছিয়ে (১১৫তম) থাকলেও দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলো এগিয়ে রয়েছে। বাকি দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলংকা ৩৮তম, ভারত ৪০তম ও নেপাল ৯৪তম অবস্থানে রয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা না করেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। শ্রেণীকক্ষ নির্মাণ না করেই নতুন নতুন বিভাগ চালু করা হচ্ছে। দু-একজন শিক্ষক দিয়েই কোনো কোনো বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। আর উচ্চশিক্ষায় অর্থ বরাদ্দও খুবই অপ্রতুল। এ যদি হয় অবস্থা, তখন র্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকার সুযোগ কোথায়? তাই শুধু বিশ্ববিদ্যালয় খুলে বসে থাকলে চলবে না। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেয়া, হল নির্মাণ, গবেষণাগার নির্মাণ ও গবেষণায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেয়াসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সব বিষয় শিক্ষাব্যবস্থায় নিশ্চিত করতে হবে।
সূত্র : বণিক বার্তা

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.