Sylhet Today 24 PRINT

রাবিতে বেড়েই চলেছে ছিনতাই, শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে

শফিকুল ইসলাম, রাবি প্রতিনিধি |  ১৭ মার্চ, ২০১৭

‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে বাবার স্ট্রোকের খবর পেয়েই আমি বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিই। নাটোরে যেতেই সাড়ে ৯টা বেজে যায়। নাটোর থেকে বগুড়ার কোনো গাড়ি না পেয়ে বাড়িতে ফোন করি। বাবা মোটামুটি সুস্থ আছে জেনে রাজশাহীতে ফেরার সিদ্ধান্ত নিই।

বাস যোগে নাটোর থেকে ১২টার দিকে রাবির কাজলা গেটে পৌঁছি। হলে ফেরার রিক্সা না পেয়ে বন্ধুদের ফোন করি, কিন্তু সে সময় কাউকেই পাইনি। পাশেই কিছু লোকের আচরণ অসুবিধাজনক মনে হওয়ায় হেঁটেই রওনা দিই। প্যারিস রোডে আসা মাত্রই মটরসাইকেল আরোহী তিনজন আমার ট্রাভেল ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ব্যাগে টাকা, আইডি কার্ড, এটিএম কার্ড ও জামাকাপড়সহ আমার প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই ছিলো।’

এরকম ছিনতাইয়ের ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন ছিনতায়ের শিকার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাসমী তামান্না।’

তিনি আরো জানান, ‘এর আগে ১৩ মার্চ রাত সাড়ে ৮টার দিকে পুরাতন ফোকলোর চত্বর রাস্তায় রিক্সাযোগে যাওয়ার সময় তাঁর ভ্যানেটি ব্যাগ ধরে টান দেয় মটরসাইকেল আরোহী দুই যুবক। হাতের সঙ্গে ব্যাগ আটকে রাখায় সে যাত্রায় তাঁর ব্যাগটি রক্ষা পায়।’

গত কয়েক দিনে ছিনতাইয়ের শিকার হন রাবির বেশ ক’জন শিক্ষার্থী। ১৩ মার্চ রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় পার্শ্বস্থ বিনোদপুর এলাকায় ছিনতাই ও মারধরের শিকার হন ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের পলাশ ও সুজন।

তাদের দাবি, ‘নেশাগ্রস্ত অবস্থায় স্থানীয় যুবলীগের কার্যালয় থেকে কয়েকজন নেতা-কর্মী বের হয়ে কোন কারণ ছাড়াই তাদের বেধড়ক চড়-থাপ্পর ও কিল-ঘুষি দিতে থাকে। আশেপাশে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের উদ্ধার করতে ঘটনাস্থলে গেলে তাদের সঙ্গে থাকা মোবাইল কেড়ে নেয় তারা। পরে দেশিয় অস্ত্র হাতে তাদের ধাওয়া দেয় এই নেতা-কর্মীরা।’ এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা দু’দফায় মানববন্ধনও করে।

এদিকে গত মাসের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ছিনতাইয়ের শিকার হন ফাইন্যান্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম মিলন। এসময় তাকে ছুরির আঘাতে আহত করে সঙ্গে থাকা টাকা ও একটি মোবাইল নেয় ছিনতাইকারীরা।

চলমান এসব ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। সন্ধ্যা হলেই বের হতে ভয় পাচ্ছেন তারা। অনেকে শহরে টিউশনি করাতে যায়, তাদের ভয়টা যেনো আরো বেশি। তবে প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ না থাকায় অনেকটাই আবদ্ধ হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স অ্যা- হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আবিদ হাসান অভিযোগ করে বলেন,‘ক্যাম্পাস হবে একটি নিরাপদ জায়গা। যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিরাপদে চলাফেরা করবে। কিন্তু ইদানিং ছিনতাইয়ের ঘটনায় আমরা আতঙ্কিত। আর এসব দুর্ঘটনা বাড়ছে প্রশাসনের অবহেলায় এবং ক্যাম্পাসের যথেষ্ঠ নিরাপত্তা না থাকায়।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, বাংলাদেশে কোন বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ পাহারায় চলে না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলে, ক্যাম্পাসের বিশেষ জায়গাগুলোতে দিন-রাত পুলিশের গাড়ি টহল দেয়। আবার ক্যাম্পাসের ভেতরেই পুলিশ ফাঁড়ি। এমন অবস্থায় আমরা নিয়মিত ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মারধর, নানা ভাবে হয়রানী এমনকি হত্যার শিকার হচ্ছি।

আরেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, প্রায় সন্ধ্যায় লক্ষ্য করা যায়, প্রক্টরের গাড়ি ছাত্রীদের আবাসিক এলাকায় টহল দেয়। নয়টা পার হলেই রাস্তায় দাঁড় করিয়ে শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দু’জন ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে থাকলে তাদের আলাদা করে দেয়া হয়। অথচ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ভিতরেই বারবার ছিনতাইসহ হয়রানির শিকার হন, কিন্তু প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ নেই।

রাবি শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তমাশ্রী দাস বলেন, ‘প্রশাসন নিরাপত্তার নামে পুলিশের হাতে বিশ্ববিদ্যালয়কে এক ধরনের ইজারা দিয়ে রেখেছে। এসব পুলিশি নিরাপত্তা বিষয়টা ফাঁকা বুলি। অপরাধীরা দলীয় ক্ষমতার সুযোগ নিচ্ছে মাত্র। প্রশাসন এসব ঘটনায় কঠোর আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অল্প সময়েই এটা প্রশমিত হবে। এতে শিক্ষার্থীরা ভীতিমুক্ত হবে, অপরাধীরা অপরাধ ঘটাতে পিছুপা হবে। কিন্তু প্রশাসন তো এসবের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নিচ্ছে না।’

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মুজিবুল হক আজাদ খান বলেন, ‘রাত ১২টার দিকে কোথাও ছিনতাই হয়েছে এমন তথ্য আমার কাছে নেই। রাতে জরুরি মনে হলে সাহায্য চাইতে হবে। অ্যাম্বুলেন্স না থাকলে প্রক্টরের গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ তো আছেই।’

ছিনতাই বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি-না জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, ‘এত বড় ক্যাম্পাস, ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা দিতে পাঁচ হাজার পুলিশ লাগবে। যা বাস্তবসম্মত নয়। এসব ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় সচেতন থেকে চলাচল করতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে কাউকে নিরাপত্তা দেওয়া খুবই কঠিন, দুর্বৃত্তরা সুযোগ খুঁজবেই। ক্যাম্পাসে তাদের প্রতিরোধ করতে পুলিশের চারটি গাড়ি রাতে টহল দেয়।’

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.