Sylhet Today 24 PRINT

মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি উদাহরণ হিসেবে দাঁড়াবে : শিক্ষামন্ত্রী

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২০ এপ্রিল, ২০১৭

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, দেশের খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গ মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির প্রতি তাদের আস্থা জ্ঞাপন করেছেন, এটি অনেক বড় পাওয়া, তাদের জন্য বড় শক্তি। মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি উদাহরণ হিসেবে দাঁড়াবে, সেই কামনা করছি।

বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে সিলেট সদর উপজেলার বটেশ্বরে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। সেখানেই ৮ একর জমির উপর গড়ে উঠছে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির অত্যাধুনিক স্থায়ী ক্যাম্পাস।

নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য স্থায়ী ক্যাম্পাসের জমির পরিমাণ নির্ধারণ করে দিয়েছি আমরা। আমি আনন্দিত, আমাদের নির্ধারিত জমির চেয়ে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি প্রায় দ্বিগুণ বেশি জমিতে স্থায়ী ক্যাম্পাস করছে। এ ক্যাম্পাসের কাজ যে গতিতে চলছে, দ্রুত তা শেষ হবে বলে আমি আশাবাদী।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সরকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একটা পর্যায়ে নিয়ে যেতে চায়, নিয়মের মধ্যে রাখতে চায়। তন্মধ্যে অন্যতম শর্ত হচ্ছে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া। আমরা সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চাপ দিচ্ছি, সময় বেঁধে দিচ্ছি। ইতিমধ্যেই ২৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাস চালু করেছে। বাকিগুলোর মধ্যে কয়েকটি ছাড়া সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ই স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে হলে শর্ত মেনে চলতে হবে। শর্ত পূরণ না করে কেউ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে পারবে না।

তিনি বলেন, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ধনী লোকেরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খুলে একসময় মুনাফা করেছে, সার্টিফিকেট বিক্রি করাই ছিল তাদের লক্ষ্য। ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার সেই ধারা বন্ধ করে দিয়েছে। সরকার চায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন মান ও আস্থার দিক থেকে উন্নত পর্যায়ের হয়। এজন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়মের মধ্যে আনতে আমরা অনেক পরিশ্রম করেছি। দুই বছর তাদের পেছনে ঘুরেছি। তাদেরকে চাপ দেওয়ায় আমার উপর অনেকেই ক্ষিপ্ত হয়েছেন, কিন্তু পরে তারাই আমাদেরকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, আমরা জ্ঞান ও প্রযুক্তির আমদানিকারক। কিন্তু এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। জ্ঞান ও প্রযুক্তি আমদানি নয়, বরং রফতানি করতে চাই আমরা। সে লক্ষ্যে বর্তমান সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি করেছে বলে দেশ-বিদেশের সবাই বলেন। জাতিসংঘ বলেছিল, ২০১৫ সালের আগে দেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় ছেলে-মেয়ের সমতা নিশ্চিত করতে। আমরা তারও তিন বছর আগে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে সমতা নিশ্চিত করেছি। বর্তমানে ছেলেদের সাথে পাল্লা দিয়ে মেয়েরাও উচ্চশিক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয়পড়–য়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে শতকরা ৪৫ ভাগ মেয়ে। বর্তমান সরকার দেশে ৪০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম এবং ৪৫ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ল্যাবরেটরি করেছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখায় সমানভাবে বিচরণ করতে পারে, সেটাই আমরা নিশ্চিত করছি।

অসৎ শিক্ষকদের সমালোচনা করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের সিংহভাগ শিক্ষকই মাথার মণি। কিন্তু কিছু লোক শিক্ষক নামের কুলাঙ্গার। এরা ক্লাসের বাইরে টাকা নিয়ে পড়ায়, এরা প্রশ্নফাঁসে জড়িত। তাই তারা ধরাও পড়ছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী বলেন, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি চালুর সময় আমরা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, শিক্ষাকে পণ্য করবো না, শিক্ষা বেঁচে নিজেদের উন্নতি করবো না। আমরা আমাদের কথা রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন টাকা দিয়ে সার্টিফিকেট নয়, জ্ঞান কাজে লাগিয়ে পড়াশোনা করেই ডিগ্রি অর্জন করে নেয়, সেটা নিশ্চিত করেছি আমরা। আমরা দ্রুততার সাথে স্থায়ী ক্যাম্পাস চালু করতে চাই। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের লালিত যে স্বপ্ন, তা এই স্থায়ী ক্যাম্পাস চালুর মধ্য দিয়ে পূরণ হবে।

মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সালেহ উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সহকারি প্রক্টর এডভোকেট মো. আব্বাস উদ্দিনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব মো. সাইফুজ্জামান শিখর, ডিবিসি টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ফজলুর রব তানভীর। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি কামরুল আহসান ও খাদিমপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আফছর আহমদ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন হাফিজ মো. ইসমাইল হোসেন ও গীতা পাঠ করেন শান্তি রায়। পরে জাতীয় সংগীত গাওয়ার মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমেদ, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ইমেরিটাস অধ্যাপক আবদুল আজিজ, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শিব প্রসাদ সেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক খন্দকার মাহমুদুর রহমান, পরিচালক (প্রশাসন ও শিক্ষা) তারেক ইসলাম, পরিচালক (অর্থ) মিহির কান্তি চৌধুরী, সহকারি রেজিস্ট্রার লোকমান আহমদ চৌধুরী, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন সেলিমসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধানগণ, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

অনুষ্ঠানে হাতে বেলচা তুলে নিয়ে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন কাজের শুভ সূচনা করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বোর্ড অব ট্রাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ড. তৌফিক রহমান চৌধুরীসহ অন্যরা। এর আগে জাতীয় পতাকা ও মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির পতাকা উত্তোলন করেন তারা।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.