Sylhet Today 24 PRINT

রাবি শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ‘প্রাণনাশের হুমকির’ অভিযোগ শাশুড়ির

রাবি প্রতিনিধি |  ০৩ জানুয়ারী, ২০১৮

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুখসানা পারভীনের বিরুদ্ধে পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার অভিযোগ করেছেন তাঁর শাশুড়ি। বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর অশ্রাব্য গালিগালাজের কয়েকটি অডিও রেকর্ডিংসহ এবং মানসিক নির্যাতনের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ওই শিক্ষিকার শাশুড়ি রোকেয়া বেগম।

অভিযোগপত্র পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস। এই প্রতিবেদকের কাছে অডিও রেকর্ডিং ও অভিযোগপত্র সংরক্ষিত আছে।

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ‘আমার একমাত্র পুত্র বেলায়েত হোসেনের (অ্যাডিশনাল এস.পি. বাংলাদেশ পুলিশ) সঙ্গে রুখসানা পারভীনের বিবাহের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে এবং বর্তমানেও নানাভাবে আমাকে এবং আমার পরিবারের অন্যদের চরমভাবে অপমান-অপদস্থ, অরুচিকর আচরণ এবং হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে। তাদের বিবাহের পর থেকে রুখসানা পারভীন আমাকে প্রাণনাশের হুমকিসহ গালাগালি এবং নানা ধরনের মানসিক নির্যাতন করে আসছে। মোবাইল কথোপকথনে যেসব নোংরা ও অরুচিকর গালাগালি রয়েছে সেগুলো আপনার নিকট প্রমাণস্বরুপ তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে পেশ করছি।’

তবে গত ৫-৬ বছর ধরে রুখসানা পারভীন এই ধরনের কর্মকাণ্ড করে আসলেও তারা কোনো ধরনের আইনের আশ্রয় নেননি বলে জানিয়েছেন তাঁর ননদ দিলারা সুলতানা।

রুখসানা পারভীনের শাশুড়ি রোকেয়া বেগমের বরাত দিয়ে ননদ দিলারা সুলতানা বলেন, ‘রুখসানা পারভীন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিকা হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছেই আমরা প্রথম অভিযোগ করলাম।’

রোকেয়া বেগমের বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘বিয়ের পর থেকেই রুখসানা পারভীন আমাদের সঙ্গে আমার ভাইয়ের একটা দূরত্ব তৈরির চেষ্টা করেন। আমার ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের পরিবারের কাউকে মিশতে দেয়না। এমনকি কথা বলতেও দেয় না। যদি আমরা কেউ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করি তাহলে রুখসানা পারভীন আমাদেরকে ফোন দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। প্রাণনাশের হুমকি দেন। আমরা যদি কখনো ক্যাম্পাসে আসি তাহলে রুখসানা পারভীন তার গুণ্ডাপাণ্ডা দিয়ে আমাদেরকে হত্যা করবে বলে হুমকি দেন।’

তবে অভিযুক্ত শিক্ষিকার স্বামী এএসপি বেলায়েত হোসেনের দাবি, ‘তাঁর স্ত্রীকে হেয় প্রতিপন্ন করতেই বিভাগের অন্য শিক্ষকরা এটা করিয়েছেন। পারিবারিক কলহের সুযোগ নিয়ে নিজেদের অপরাধ ধামাচাপা দেয়ার জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকরা তার পরিবারকে দিয়ে এ কাজ করাচ্ছে।’

অভিযোগের বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক রুখসানা পারভীন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে তারা কী অভিযোগ দিয়েছে তা আমি জানি না। তারা যদি আমার পারিবারিক কোনো বিষয়ে অভিযোগ দিয়ে থাকে তাহলে সেটা আমি পারিবারিকভাবে মোকাবেলা করব। তারা আমার বিরুদ্ধে যে ধরনের অভিযোগই করুক না কেন, আমি তা মোকাবেলা করতে প্রস্তুত। তবে সেটা অবশ্যই আমাকে আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে জানাতে হবে। তবে পারিবারিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে কেন অভিযোগ করা হচ্ছে তা আমার কাছে বোধগম্য নয়।’

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘সহকারী অধ্যাপক রুখসানা পারভীনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগপত্র পেয়েছি। এটা তাদের পারিবারিক বিষয়ে অভিযোগপত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ যা সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, তার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৭ জুলাই সহকারী অধ্যাপক রুখসানা পারভীনের বিরুদ্ধে শ্রেণীকক্ষে এবং এর বাইরে শিক্ষকদের নামে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করার অভিযোগ এনে তাঁর ১১ জন সহকর্মী বিভাগীয় সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। অন্যদিকে ৩১ জুলাই রুখসানা পারভীনও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে সহকর্মীরা মানহানিকর তথ্য ছড়ানোর পাল্টা অভিযোগ করেন। তিনি ওই অভিযোগপত্রে বিভাগের এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগও আনেন।

তবে সহকারী অধ্যাপক রুখসানা পারভীনের আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭৪তম সিন্ডিকেট সভায় রুখসানা পারভীনের অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত কমিটি। সেই সঙ্গে ১৫ দিনের মধ্যে রুখসানা পারভীনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। কারণ দর্শানোর আগেই নতুন করে রুখসানা পারভীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললো তার শাশুড়ি।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.