Sylhet Today 24 PRINT

রাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা একাংশের, কর্মসূচি

রাবি প্রতিনিধি |  ১০ এপ্রিল, ২০১৮

কোটা সংস্কার আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখার নেতৃবৃন্দ আন্দোলন স্থগিতের পর আন্দোলনকারীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। তারা আন্দোলন স্থগিত করলেও শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

আন্দোলন নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে এই দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুর ২টায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী উম্মে কুলসুম কনি।

সেখানে উম্মে কুলসুম কনি জানান, “কোটা সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত তারা মানেন না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আগামীকাল বুধবার বেলা ১১টায় তারা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে। সেই সঙ্গে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস বর্জন কর্মসূচি চলবে।”

এর আগে দুপুর দেড়টায় সংবাদ সম্মেলন করেন ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন রাবি শাখা’র নেতৃবৃন্দ। সেখানে কমিটির আহ্বায়ক মাসুদ মুন্নাফ জানান, “এখন যারা আন্দোলন করছে তাদের সঙ্গে এই কমিটির কোনো সম্পর্ক নেই। আগামী ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে। তাই ওই সময় পর্যন্ত তাদের কমিটি ও কমিটির কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। সরকার যদি ৭ তারিখের মধ্যে তাদের দাবি মেনে না নেয়, তবে তারা আবারো আন্দোলন শুরু করবে।”

এর আগে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের এক অংশ বিক্ষোভ-মিছিলের প্রস্তুতি নেয়। এতে আন্দোলনের আগের আহ্বায়কসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এসে আন্দোলন না করতে শিক্ষার্থীদেরকে অনুরোধ করে।

তবে অধিকাংশ শিক্ষার্থী সে সিদ্ধান্ত না মেনে প্যারিস রোড হয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের দিকে যেতে থাকে। জোহা চত্বরের কাছে গিয়ে সেখানে কোটা সংস্কারের পক্ষে স্লোগান দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। পরে সেখানে সাড়ে ১২টার দিকে ছাত্রলীগের ১২-১৩টি মোটরবাইক সো-ডাউন করলে আন্দোলনকারীরা চলে যায়।

তখন কোটা সংস্কার আন্দোলনের রাবি শাখার আহ্বায়ক মাসুদ মুন্নাফ গ্রন্থাগারের সামনে গণমাধ্যমকে জানান, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে এক মাস সময় দিয়েছে, তার এসময়ে বিদেশ সফরসহ অন্যান্য কার্যক্রম রয়েছে। আরেকটি বিষয় হলো, কোটা সংস্কার আন্দোলন অনেকদিন ধরেই চলে আসছে, আমরাও চাচ্ছি এটা সংস্কার হোক। আমরা মাঠে আছি, আগামীতেও থাকবো। এ কোটা সংস্কার করতে হলে অবশ্যই সকলের মতামত নিতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে। এজন্য তিনি আমাদের কাছে সময় চেয়েছেন, আমাদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি দিয়েছে।”

“কিন্তু একটি কুচক্রী মহল গতকাল রাতের আধারে একটি কমিটি দিয়ে তারা আমাদের কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে কর্মসূচি দিয়েছে। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এবং সেই সাথে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কেউ এদের সঙ্গে একমত না। আমাদের কর্মসূচি আমরা স্থগিত করেছি। এখানে সব জায়গায় ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে। এ ক্যাম্পাসে যদি কিছু হয়ে যায়, তবে যারা কর্মসূচি দিচ্ছে তাদেরকেই নিতে হবে।”

আন্দোলনকারীদের মধ্যে আব্দুল মজিদ অন্তর সেখানে সাংবাদিকদেরকে বলেন, “যারা আন্দোলন স্থগিত করেছে, তাদের কথা সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেনে নেয়নি। তাছাড়া সামনে রমজান ও গ্রীষ্মকালীন লম্বা ছুটি রয়েছে। তখন আমাদের দাবি আর পূরণ হবে না। তাই সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। আর আন্দোলনকারীরাই একটি কমিটি রাজপথে গঠন করবে।”

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী রিপন মাহমুদ বলেন, “একমাস সময় কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এ আন্দোলন থামিয়ে দেওয়ার জন্যই এতো সময় নিয়েছে। সামনে নানারকম নির্বাচন, নানারকম ছুটি রয়েছে-এর মাঝে এটা অনেকেই ভুলেই যাবে। তাই আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।”

জোহা চত্বরের সামনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বিশ^বিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর রওশন জাহিদ বলেন, “আমাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা সম্মান আছে, আমরা কেউ চাই না সেটা ক্ষুণ্ণ হোক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একমাস সময় নিয়েছে, এটা মেনে নেওয়া উচিত। সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনকারীদের তখন স্লোগান দিতে দেখা যায়।”

এসময় আন্দোলনকারীরা ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, প্রশাসনের কালো হাত ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও’ সহ নানা স্লোগান দিতে থাকেন।

বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, “প্রধানমন্ত্রী সাধারণ শিক্ষার্থীদের এক মাস আন্দোলন স্থগিত রাখতে বলেছেন। আর শিক্ষার্থীরাও তা মেনে নিয়েছে। আজকে যারা আন্দোলন করল, এদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। এরা উস্কানি দিচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। তবে কোনো ধরনের সহিংসতার সৃষ্টি করার চেষ্টা করলে এদের প্রতিহত করা হবে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির পক্ষে আছি। আমরাও বলব, শিক্ষার্থীরা যেন, এক মাস অপেক্ষা করে।”

নেতাকর্মীদের মোটরবাইক সো-ডাউনের বিষয়ে তিনি বলেন, “তারা হয়তো ক্যাম্পাসে ঘুরছিলো। ছাত্রলীগ কাউকে আজকে বাধা দেয়নি।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের পর এক মাসের জন্য আন্দোলন স্থগিত করেছে শিক্ষার্থীরা। আজকে আন্দোলন কোনোভাবেই সে অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য নয়। হয়তে তারা বিভ্রান্তি হচ্ছে।”

“কোনো ধরনের সহিংসতা মেনে নেওয়া যাবে না। সহিংসতার চেষ্টা করলে বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবে।”

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.