Sylhet Today 24 PRINT

রাবিতে শহীদ ড. শামসুজ্জোহাকে স্মরণ

রাবি প্রতিনিধি |  ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. শামসুজ্জোহাকে নানা আয়োজনে স্মরণ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠনসমূহ।

সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠন ড. জোহার সমাধি ও স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।

ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থানকালে এই দিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা প্রক্টরের দায়িত্ব পালনকালে পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে নিহত হন। তিনিই এদেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী। দিনটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

দিবসটি উপলক্ষে এদিন ৭টায় উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়াসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ শহীদ ড. জোহার সমাধি ও জোহার স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন ও মোনাজাত করেন।

এরপর রসায়ন বিভাগ ও শহীদ শামসুজ্জোহা হলসহ অন্যান্য আবাসিক হল, বিভাগ, পেশাজীবী সমিতি, ইউনিয়ন, সাংবাদিক-সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠনসমূহ প্রভাতফেরিসহ শহীদ জোহার সমাধি ও স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।

এদিন সকাল ১০টায় শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হয় জোহা স্মারক বক্তৃতা। এতে ‘চরিতার্থ এক বিজ্ঞান জীবন: নির্মিতি ও সমকালের ভাবনা’ শীর্ষক বক্তৃতা করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক শ্যামল চক্রবর্তী।

রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. বেলায়েত হোসেন হাওলাদারের সভাপতিত্বে এই আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান।

সেখানে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া।

স্মারক বক্তৃতায় অধ্যাপক শ্যামল চক্রবর্তী বলেন, 'যে সকল গুণাবলির জন্য একজন পাঠদাতা প্রকৃত শিক্ষকের মর্যাদা লাভ করেন, ড. শামসুজ্জোহা নিঃসন্দেহে সেই স্থান অর্জন করেছেন। সর্বোপল্লী রাধাকৃষ্ণন বলেছিলেন, ‘শিক্ষকসমাজ জাতির মেরুদণ্ড’। এর সত্য-মিথ্যা পরীক্ষা করবেন সাধারণ সুশীল সমাজ। তবে ‘ভঙ্গুর’ মেরুদণ্ড নিয়ে দিন অতিবাহিত করলে জাতির যে ‘ঋজু’ মেরুদণ্ড নির্মাণ হয় না, নিজের জীবনদান করে আমাদের জানিয়ে গিয়েছিলেন শহীদ ড. শামসুজ্জোহা। তাঁর প্রত্যয়ী আত্মদানে তৈরি হয়েছে পাকিস্তানের বন্দিশালা থেকে মুক্ত বাংলাদেশ। যাঁরা সেই লড়াইয়ের ময়দানে নানা সময়ে আমাদের সামিল করেছেন তিনি ছিলেন তাঁদের উত্তরসূরি।

তিনি আরও বলেন, 'মনে পড়ে ড. কুদরাত-এ-খুদার এক দৃঢ়চেতা আবেদন, যার কথা বলেছেন বিশিষ্ট লেখিকা রাজিয়া খান। ‘দ্রৌপদী’ উপন্যাসে এক জায়গায় রাজিয়া লিখেছেন, ‘তখন আমার মনে পড়ল আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সমাবর্তনে ড. কুদরতে খুদার প্রধান অতিথির ভাষণের কথা। সেটা বোধহয় ছিল সত্তর সাল। তিনি বাঙালিকে সামরিক শিক্ষা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছিলেন।’ এই তথ্যকে মান্যতা দান করে আমরা বলতে পারি, এক বছর আগে, ১৯৬৯ সালে, ড. শামসুজ্জোহার প্রাণদান প্রবীণ বিজ্ঞানীর মনে এক তীব্র অনুরণন তৈরি করেছিল যা তিনি তরুণ সমাজের কাছে নিবেদন করেছিলেন।'

স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে শহীদ জোহার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন ও মোনাজাত করা হয়।

সেখানে শহীদের জীবনালেখ্যও উপস্থাপন করা হয়। সেখানে অন্যদের মধ্যে রুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম শেখ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক প্রভাষ কুমার কর্মকার, প্রক্টর অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান, অনুষদ অধিকর্তা, বিভাগীয় সভাপতি, রসায়ন বিভাগসহ অন্য বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তা তার প্রণীত একটি বই উপাচার্যকে উপহার দেন।

দিবসের কর্মসূচিতে আরো ছিল সকাল সাড়ে ৮টায় অফিসার সমিতি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা, বাদ জোহর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন খানি ও বিশেষ মোনাজাত, রয়েছে শহীদ শামসুজ্জোহা হলে মাহফিল ও প্রদীপ প্রজ্বালন।

এদিন শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দর্শকের জন্য খোলা থাকে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.