Sylhet Today 24 PRINT

সিকৃবি শিক্ষার্থী মুহিবের রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি

ক্যাম্পাসে মানববন্ধন

সিকৃবি প্রতিনিধি |  ১৬ মে, ২০১৯

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী কাজী মুহিব হাসান এবং তার মা ও বোনের রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার কৃষি অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদীয় ছাত্রসমিতির উদ্যোগে এ মানববন্ধনে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ মতিয়ার রহমান হাওলাদার, কৃষি অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ জসিম উদ্দিন আহমদ, কৃষি অর্থনীতি ও পলিসি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. রোমেজা খানম, কৃষি অর্থসংস্থান ও ব্যাংকিং বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. জীবন কৃষ্ণ সাহা, কৃষি বিপনন ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান মোঃ মুস্তাফিজুর রহমানসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও কর্মকর্তাবৃন্দ।

গত ১২ মে রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানী ঢাকার উত্তরখানের ময়নারটেকের ৩৪/বি বাসা থেকে সিকৃবির শিক্ষার্থী কাজী মুহিব হাসান (২৮) এবং তার মা জাহানারা খাতুন মুক্তা (৪৮) ও প্রতিবন্ধী বোন আফিয়া সুলতানা মিমের (২০) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের বলছে, ২/৩ দিন আগে তাদের মৃত্যু হয়েছে এবং ভেতর থেকে তাদের দরজার সিটিকিনি লাগানো ছিল। পরে পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে পচন ধরা মৃতদেহগুলো উদ্ধার করে। উদ্ধারের সময় মুহিবের মরদেহ ফ্লোরে পরেছিলো এবং তার মা ও বোনের মরদেহ ছিল বিছানায়। পাশে ড্রয়িংরুমের টেবিলে একটি চিরকুট পাওয়া যায়। যেখানে লেখা ছিল, ‘আমাদের মৃত্যুর জন্য ভাগ্য ও আমাদের আত্মীয়স্বজনের অবহেলাই দায়ী। আমাদের মৃত্যুর পর আমাদের সম্পদ গরিবদের মাঝে বিলিয়ে দেয়া হোক।’

এদিকে ময়নাতদন্ত বলছে ভিন্ন কথা। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেল ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেছেন, আত্মহত্যার কোন আলামত পাওয়া যায়নি, মুহিবকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। তার মা ও বোনকেও শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। মায়ের গলা ও পেটে কাটা চিহ্ন রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত মুহিবের বাবা মৃত ইকবাল হোসেন। মুহিব সম্প্রতি শেষ হওয়া ৪০তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। তার বোন মিম ছিল মানসিক প্রতিবন্ধী। বাবা ইকবাল হোসেন পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন অফিসের শাখা ম্যানেজার ছিলেন। তিনি ২০১৬ সালে চাকরিরত অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। সে সময় পরিবারটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভাড়া বাসা নিয়ে বসবাস করতো। ইকবালের মৃত্যুর পর মুহিবের পরিবার ঢাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতে শুরু করে। দুই মাস আগে তারা কিশোরগঞ্জের ভৈরবে নিজ বাড়ির পাশে একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। প্রতিবেশীরা জানায়, মুহিবের চাচাদের সাথে তাদের সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ থাকায় তারা গ্রামের বাড়িতে থাকতো না। সম্পত্তির ভাগবাঁটোয়ারা করতে আগামী ঈদের পর বাড়িতে সালিশি বৈঠক বসার কথা ছিল।

এদিকে একই পবিারের ৩জনকে হারিয়ে শোকাগ্রস্থ মুহিবের নানী তাজমহল বেগমও না ফেরার দেশে চলে গেলেন। বুধবার সকালে ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান বলে পারিবারিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। মেয়ে ও নাতি-নাতনির মৃত্যুর খবর শুনে রোববারই অসুস্থ হয়ে পড়েন তাজমহল বেগম। পরিস্থিতির অবনতি হলে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

মুহিব ও তার পরিবারের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। তার বন্ধুরা কান্নায় ভেঙে পড়ে। মৃত্যুরহস্য উদঘাটন করে খুনিদের শাস্তি দেয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.