Sylhet Today 24 PRINT

শাবিতে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও জেনোসাইড’ বিষয়ক আলোচনা

শাবি প্রতিনিধি |  ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে 'মুক্তিযুদ্ধ ও জেনোসাইড' বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় বাংলা বিভাগের মাস্টার্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষক হাসান মোরশেদ। আলোচনা অনুষ্ঠানের সমন্বয়ক ছিলেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফারজানা সিদ্ধিকা রনি।

'মুক্তিযুদ্ধ ও জেনোসাইড 'শিরোনামের এ আলোচনায় ১৯৯৭১ সালে সংঘটিত মুক্তিযুদ্ধ, ৫২'র ভাষা আন্দোলন, ৪৭'র দেশভাগ প্রভৃতি বিষয়গুলো উঠে আসে।

১৯৯৭১ সালে বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত নিধনযজ্ঞকে গণহত্যা বলছেন না হাসান মোরশেদ; তিনি বলছেন এটি একটি জেনোসাইড। অর্থাৎ জাতি হিসেবে বাঙালিকে নিধন করার পাঁয়তারা।

তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধকে গণহত্যা বললে পাকিস্তান বাহিনীর অন্যান্য অপরাধকে স্বীকার করা হয় না। গণহত্যার পাশাপাশি তখন তারা বাঙালি নারীদের ধর্ষণ করেছিল, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিল, বসত-ভিটা থেকে উচ্ছেদ করেছিল। শরণার্থী হয়ে ভারতে যেতে বাধ্য করেছিল।”
    
“জেনোসাইড বললে পাকিস্তান বাহিনীর সবগুলো অপরাধকে স্বীকার করা হয়। আর তাদের এই বর্বরোচিত নিধন অভিযান ছিল জাতি হিসেবে বাঙালির পরিচয়কে মুছে দেওয়ার জন্য।” বলেন তিনি

“এই জেনোসাইডের নীল নকশা রচনা হয়েছিল ৪৭’র দেশভাগের সময়। পাকিস্তান সৃষ্টির পর পূর্ব বাংলার বাঙালিকে তারা ধ্বংস করে পশ্চিম পাকিস্তানের জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত করতে চেয়েছিল। পূর্ব বাংলার হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে শুধুমাত্র বাঙালি পরিচয়ের কারণে তাদের রোষাণলে পড়তে হয়েছিল।”

স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৮ বছর পরও পাকিস্তান বাহিনীর এমন বীভৎসতাকে শুধুমাত্র গণহত্যা বলে সংকুচিত করায় হতাশা ব্যক্ত করেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বর্তমান সময়ের এই প্রখ্যাত গবেষক।

তিনি বলেন, “ইতিহাস চর্চায় আমাদের আরও উদ্যোগী হতে হবে। তৎকালীন বর্বরতার শিকার ভূক্তভোগীদের সাক্ষাৎকার নিতে হবে। সেগুলো ডিজিটাল পদ্ধতিতে আর্কাইভ করে রাখতে হবে। নতুন করে তথ্য সমৃদ্ধ করে বর্তমান সময়ের মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসকে তুলে ধরতে হবে।”

হাসান মোরশেদ নিজে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার ভূক্তভোগীদের সাক্ষাতকার নিয়ে অনলাইনে আর্কাইভে সংরক্ষণ করে রাখছেন। আগামী কয়েক বছরে দেশব্যাপী অন্যান্য ভূক্তভোগীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
হাসান মোরশেদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক অন্যান্য রচনার মধ্যে রয়েছে ‘দাস পার্টির খোঁজে’,  ‘জেনোসাইড ৭১’, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ নির্মাণ’ ও ‘বঙ্গবন্ধুর নীতি নৈতিকতা’।

ফারজানা সিদ্ধিকা রনি বলেন, “এই আলোচনার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নানা অজানা তথ্য জানা গেল। বর্তমান প্রজন্ম এ ধরণের তরুণ গবেষকদের অনুসরণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকে নতুনভাবে পাঠ করতে পারবে।”

বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আশ্রাফুল করিম হাসান মোরশেদকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, “ বিভিন্ন বিষয়ে যারা স্কলার, গবেষক; তাদের আমরা বিভাগে আমন্ত্রণ জানিয়ে এভাবে আলোচনায় বসতে পারি। এক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। আমরা সামনের দিনেও এমন আয়োজন করব।”

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.