Sylhet Today 24 PRINT

অনলাইন ক্লাস নিয়ে শাবি উপাচার্যের বক্তব্যের নিন্দা শিক্ষার্থীদের

শাবি প্রতিনিধি |  ১৪ মে, ২০২০

অনলাইন ক্লাস বিষয়ে গণমাধ্যমে দেওয়া উপাচার্যের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী।

একই সাথে ক্লাস বর্জনের সিদ্ধান্তে অনড় থাকার কথা জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে শাহ মো. মাহমুদুল হাসান, রাজন আচার্য, ইলিয়াস শাহ্‌ রাফি, জারিন তাসনিম, সাব্বির আহমেদ, সাদ আব্দুল্লাহ, তাজদিদ রহমান, আশরাফ ইবনে হেলাল মিনহাজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানান।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, পুরো বিশ্বের বর্তমান আতঙ্কের নাম- করোনা ভাইরাস। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু দেশের এহেন অবস্থায়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস করার জন্য শিক্ষার্থীদের আহ্বান করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে বর্তমানে অধ্যয়নরত ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ ব্যাচ বিভিন্ন সমস্যা উল্লেখপূর্বক অনলাইন ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেয়।

এ বিষয়ে সাংবাদিকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে তাঁর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি তার বক্তব্য দেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালকেরও বক্তব্যও রয়েছে। আমরা বর্তমানে অধ্যয়নরত সকল ব্যাচ একত্রে উনাদের এসকল বক্তব্যের বিভিন্ন অসঙ্গতি সবার সামনে তুলে ধরছি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'সম্মানিত ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক বলেছেন যে, “নেটওয়ার্কের সমস্যা আছে তা আমি অস্বীকার করছি না তবে তারা চাইলে ৬০ শতাংশের উপরে অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত থাকতে পারে।” অর্থাৎ তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত থাকতে পারে না। তাহলে এই ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীদের কথা আগে থেকে না ভেবেই অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্ত কেন এল? অবশিষ্ট ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী কি বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ নয়? তাদের কোনো দায়ভার কি প্রশাসনের নেই? সুযোগ সুবিধা না পাওয়া কি তাদের ব্যর্থতা?

বিজ্ঞাপন



আর্থিক সমস্যার কারণে যারা ক্লাসে অনুপস্থিত এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে সম্মানিত ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক বলেন, “আমার জানা মতে ১০-১৫ শতাংশ শিক্ষার্থী  আর্থিক সমস্যার কারণে অনলাইন ক্লাস করতে পারছে না।”

এই ১০-১৫ শতাংশ শিক্ষার্থী সম্পর্কে কোন রকম সিদ্ধান্ত না নিয়েই প্রশাসন কেন শুরুতেই শিক্ষার্থীদের উপর অনলাইন ক্লাস চাপিয়ে দিল? প্রশাসনের কি উচিৎ ছিল না এই ১০-১৫ শতাংশ শিক্ষার্থীদের নিয়ে কি করা যায় তা সম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়ে এরপর অনলাইন ক্লাস শুরু করা?,

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, সার্বিক বিষয়ে মাননীয় উপার্চায বলেন, “আমাদের নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে। আমরা ইউজিসির নির্দেশনা অনুসারে ক্লাস চালিয়ে যাবো। কতিপয়  শিক্ষার্থী আছে যারা সবসময় বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করতে চায়। তাদের তালিকা আমাদের কাছে আছে।”

নায্য দাবী উত্থাপনকারী শিক্ষার্থীদের এধরণের মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার প্রবণতা খুব দুর্ভাগ্যজনক। ব্যাচের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থীদের মতামত অনুসারেই ক্লাস বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবং এর উপযুক্ত প্রমাণও আছে। তাহলে মাননীয় উপাচার্য ঢালাও ভাবে সব শিক্ষার্থীকেই অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী কীভাবে বলতে পারেন?

মাননীয় উপাচার্য আরও বলেন, “আর যারা ক্লাস করবে না বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী তাদের সেশন ড্রপ হয়ে যাবে।”

মহামারীর মত দূর্যোগের সময়ে যেসব শিক্ষার্থীরা অর্থনৈতিক সমস্যায়, উপযুক্ত ডিভাইসের অভাবে কিংবা নেটওয়ার্কজনিত সমস্যায় ক্লাস করতে পারছে না, তাদের সেশন ড্রপ হয়ে যাওয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই ধরনের উক্তি কি ওইসব সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের বর্তমান পরিস্থিতিকে বিশ্ববিদ্যালয় অবহেলা করছে, এমন ইঙ্গিতই কি দেয় না?,

মাননীয় উপাচার্য আরও বলেছেন, “গত একমাস টানা ক্লাস হয়েছে। বেশিরভাগ বিভাগে  ক্লাস শেষ। দুই-একটা ক্লাস হয়তো বাকি আছে। এখন এতদূর এসে আমাদের পিছিয়ে আসার আর কোন সুযোগ নেই।”

এখানে উল্লেখ্য, সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ হয় মার্চের ১৮ তারিখ থেকে। এরপর UGC থেকে গত ২৪ মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনলাইন কার্যক্রম শুরুর কথা বললেও, এর কিছুদিন পরেই সে সিদ্ধান্ত থেকে তারা সরে আসে। এরপরই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু কিছু ডিপার্টমেন্টে ক্লাস নেওয়া শুরু হয়। এর আগেও ২/৩ টি ডিপার্টমেন্টে কিছু কোর্স অনলাইনে চালু থাকলেও তা বাধ্যতামূলক ছিল না। সুতরাং, "গত একমাস টানা ক্লাস হয়েছে" কথাটি কোনভাবেই সবার জন্য সত্য নয়।

শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষা আমাদের অধিকার। অনলাইন ক্লাসের ফলে সকল শিক্ষার্থীদের পক্ষে এই অধিকার অর্জন করা সম্ভব নয়। যতক্ষণ শাবিপ্রবির সকল শিক্ষার্থী শিক্ষার্জনে সমান সুযোগ লাভ করতে ব্যর্থ হচ্ছে, ততক্ষণ আমরা শাবিপ্রবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে ক্লাস বর্জনের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলাম, আছি এবং থাকবো।

এছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে অনলাইন ক্লাস বন্ধের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানান শিক্ষার্থীরা।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.