Sylhet Today 24 PRINT

বাঁশ, বানর এবং তেলের অংক

জাহাঙ্গীর জয়েস |  ২০ মে, ২০২০

করোনা ভাইরাস কোনো সীমানার তোয়াক্কা করছে না, কিন্তু লকডাউন সীমানার চিত্র তুলে ধরছে ঠিকই। বড়লেখা, জুড়ি, কুলাউড়া এবং রাজনগর উপজেলার লোকজনকে জেলা সদর মৌলভীবাজারে আসতে হয় বড়লেখা-জুড়ি-কুলাউড়া-মৌলভীবাজার সড়ক, ফেঞ্চুগঞ্জ- মৌলভীবাজার ও বালাগঞ্জ-মৌলভীবাজার সড়ক দিয়ে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে ধাইসার, বালিসহস্র, ভানুরমহল, তাহারলামু, সুরুপুরা, বাহাদুরগঞ্জ, বড়গাঁওসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষজন রাজনগর উপজেলার বাসিন্দা হলেও যোগাযোগের সুবিধার কারণে সব সময়ই মৌলভীবাজার সদরে যাতায়াত করেন। তারা এমপির বাজার-পশ্চিম কদমহাটা সড়ক হয়ে মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কে ওঠে মৌলভীবাজারে যান। রাজনগর এবং মৌলভীবাজার সদর আলাদা এ কারণে ওই সড়কের বিভিন্ন জায়গায় টহল পুলিশ থাকে এবং দু'দিক থেকে আসা ফোরস্টোক (সিএনজি), টমটম প্রভৃতি থেকে লোকজনকে নামিয়ে দেয়। কিন্তু ২০/৩০ গজ হেঁটে গিয়েই আবার তারা অন্যপ্রান্তের যানবাহনে চড়েন। এতে কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না শুধু শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্যে বাধ্য হয়ে আসা লোকজনকে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া গুণতে হচ্ছে। এই সময় যেহেতু মানুষ কমপক্ষে সপ্তাহ- দশ দিনের জন্যে বাজার করছেন। তাই তাদের ৫/৭ কেজি থেকে ১০/১৫ কেজি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি ওজন বহন করতে হচ্ছে টানাহেঁচড়া করে।

একদিকে দোকানপাট খোলা রাখবেন আবার মানুষজনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেবেন। এই মানুষ কয়েক গজ গিয়ে আবার অন্য গাড়িতে চড়ে গন্তব্যে যাবে ভোগান্তি করে। কী সব কাণ্ড কারখানা বুঝা মুশকিল। একেক দিন একেক জায়গায় একেক রূপ!

এবার আসুন কোভিড১৯ এ রেকর্ড মৃত্যুকে মাথায় রেখে সারা দেশের ভেতরে একবার চোখ বুলিয়ে দেখে আসি। দোকান পাট, রাস্তা ঘাট, ফেরি, উপাসনালয়, হাসপাতাল কোথায় জনসমাগম নেই। কোনো কোনো হাসপাতালের সামনে করোনা পরীক্ষার সিরিয়াল নিতে গিয়ে রাস্তায় বসে থাকতে হচ্ছে, রাস্তায়ই ঘুমাতে হচ্ছে। কোথাও কোথাও জনগণের ঢল দেখা যাচ্ছে। জনসমাগমে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী কিন্তু এর দায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিবে না। কথায় যুক্তি আছে। সবকিছু তো আর তাদের এক্তিয়ারের মধ্যে নয়। এদিকে আইজিপি বলেছেন ঈদে ঢাকা থেকে কাউকে গ্রামে যেতে দেওয়া হবে না। মানুষ তো থেমে নেই।

বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠন এবং ব্যক্তি উদ্যোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকছে। উপর থেকে বলে দেয়া হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে। বাস্তবে কয়জন সেটা মানছেন সেগুলো গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভালোই দেখা যাচ্ছে। আবার বাধ্য হয়েই অনেককে বেরুতে হচ্ছে, এটা একটু চোখ কান খোলা রাখলেই বুঝতে কষ্ট হয় না।পেটের ক্ষুধায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, গরীব মানুষ, দিন মজুর, দিন আনে দিন খাওয়া মানুষ বেরুতে বাধ্য হচ্ছে। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে বাধ্য হচ্ছে।

মূলত একটা হযবরল অবস্থা। আপনারা উন্নয়নের রোল মডেল করেছেন দেশকে। অনেক উন্নত দেশ আমাদের পেছন পেছন ঘুরে। সুইজারল্যান্ড, সিংগাপুর, কানাডা বানাইছেন। এসব তারাই বুঝতে পারে যারা আলু ক্ষেত, পুকুর খনন, ঘর সাজানো ধরনের বিভিন্ন ট্রেনিং নিয়ে আসছে বিদেশ থেকে। কিন্তু আমজনতা এমনকি অনেক শিক্ষিত লোকজনকেও তো তাদের কালচার শেখান নাই। তাই আপনি চোঙা ফোঁকে দিলেন আর সবাই ওমনি স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনা ভাইরাসকে বাই বাই বলে বিদায় জানিয়ে দেবে তা মনে করার কোনো কারণ আছে?

বিজ্ঞাপন

তাদের উন্নয়ন শিখাইছেন। উন্নয়ন মানে শুধু বিল্ডিং, ব্রিজ, রাস্তা ঘাট আর টাকা বানানো। প্রজেক্টের টাকা হজম করতে, পাশের উচ্চ হার দেখাতে বেশুমার শিক্ষিত বানাইছেন কিন্তু নৈতিকতা, বিজ্ঞান মনষ্কতা, যুক্তিবোধ শেখাতে পারেননি বা চাননি। তেঁতুল গাছে নিশ্চয়ই তাল ধরবে না।

সুতরাং যা হওয়ার তাই হচ্ছে। নাটাইয়ের সুতা বেশি ছেড়ে দিলে যা হয়। একদিকে জনতার ঢল। সেই ঢল এক জায়গায় আসছে। আবার ফেরত দিচ্ছেন। বিভিন্ন জায়গায় কয়েকদিন গা ঘেঁষাঘেঁষি করে মার্কেটিং করিয়ে কোথাও কোথাও আবার বন্ধ করা হচ্ছে।

সব দেখে আমার কেবল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে করা বাঁশ, বানর এবং তেলের অংকের কথাই মনে ভাসছে। সেই যে, তেলমাখা বাঁশে একটা বানর এক লাফে ৯ ফুট ওঠে ৬ ফুট নিচে নেমে আসে। দ্বিতীয় লাফে ৬ ফুট ওঠে ৯ ফুট নিচে নেমে আসে। বাঁশের মাথায় ওঠতে বানরের কতো দিন লাগবে?

হায়- বাঁশ, বানর এবং তেলের অংক!

জাহাঙ্গীর জয়েস: কবি।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.